মেহেরপুরে মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এতে সম্মতি দিয়েছেন। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন বলেছেন, আগামী জুনের মধ্যে উপাচার্য নিয়োগের মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু করা হবে।
জানা গেছে, এই অঞ্চলে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি ছিল, দীর্ঘদিনের। শিক্ষার দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে এ জেলা। অনেকের বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার স্বপ্ন থাকলেও আর্থিক টানাপোড়েনে সেই স্বপ্ন থেকে যায় অধরা। অবশেষে সেই স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে জেলাবাসীর। বিশ্ববিদ্যালয়টি চালু হলে কৃষিপ্রধান এ জেলায় দরিদ্র পরিবারের সন্তানদের উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মোচিত হবে; পাশাপাশি নারীশিক্ষার ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন এ এলাকার মানুষ।
মেহেরপুর সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্রী কাকলি বলেন, ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। এইচএসসি পরীক্ষার পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিলাম। সুযোগ পেলাম না। দ্বিতীয়বারে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিলাম, কিন্তু বাসা থেকে অনুমতি মিলল না। কারণ, মেয়েদের জেলার বাইরে গিয়ে পড়ালেখা করা পরিবার মেনে নিতে চায় না। বাধ্য হয়েই সব স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিয়ে মেহেরপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হতে হলো। আমার মতো অনেক মেয়ের স্বপ্নই জলাঞ্জলি দিতে হয় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় না থাকার কারণে। এখন জেলাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবে। অনেক মেধাবী মেয়েদের এখানে পড়ার সুযোগ হবে।
গাংনী উপজেলার গাড়াবাড়িয়া গ্রামের সেলিম হোসেন মেহেরপুর সরকারি কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বাবা কৃষিকাজ করেন। তারও স্বপ্ন ছিল প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। কিন্তু আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। জেলাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হলে তার মতো হাজারো অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের কপাল খুলবে। উচ্চশিক্ষার দ্বার উন্মোচিত হবে।
মেহেরপুর সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল আমিন ধূমকেতু বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর শুধু শিক্ষাক্ষেত্র নয়, জনজীবনে আমূল পরিবর্তন আসবে সীমান্তবর্তী এ জেলায়। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের, সংস্কৃতির ক্ষেত্রে জাগরণ তৈরি হবে, মানুষের মূল্যবোধের পরিবর্তন হবে। এখান থেকে তৈরি হবে বড় বড় উদ্যোক্তা। জেলার অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার মতো দক্ষ হলেও আর্থসামাজিক ও পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে বাইরে পড়তে যাওয়ার সাহস পান না। সে ক্ষেত্রে জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হলে এসব শিক্ষার্থী এখানে পড়ার সুযোগ পাবে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ও মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন বলেন, জুনেই উপাচার্য নিয়োগ করা হবে মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। আপাতত যেকোনো ভাড়া অবকাঠামো অথবা মেহেরপুর সরকারি কলেজে কার্যক্রম শুরু করার কথা ভাবা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে জমি অধিগ্রহণ করে সেখানে অবকাঠামো নির্মাণ করে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হবে।