মুজিববর্ষ উদযাপনে কাউন্টডাউন শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক |

শুরু হলো বহুল প্রতিক্ষীত মুজিববর্ষ উদযাপনের ক্ষণগণনা। রাজধানীর জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ক্ষণগণনা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যে মহান নেতার আজীবন ত্যাগ-আন্দোলন-সংগ্রামে বাঙালি পেয়েছে স্বাধীনতা আর লাল সবুজের পাতাকা, সেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন চলবে গোটা বছরজুড়ে, বর্ণাঢ্যভাবে। 

অনুষ্ঠানে রাখা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক চাপ পাকিস্তান সরকারকে বাধ্য করেছিল বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে। বাঙালির মুক্তির জন্য, বাংলাদেশের মানুষকে একটি স্বাধীন ভূখণ্ড এনে দিতে জাতির জনকের আজীবনের সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু জীবনের বেশিরভাগ সময় কাটান কারাগারে। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্ণতা এনে দেন মহান এই নেতা। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা আরো বলেন, দেশ আর দেশের মানুষের প্রতি তার বাবার ভালোবাসা ছিল গভীর। এদশের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে জাতির জনকের ত্যাগ আর মায়া। সরকার প্রধান আশা করেন ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত দেশ গড়ার মধ্য দিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব। আরো বলেন মুজিব আদর্শে বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাজ তার সরকার চালিয়ে যাবে।

অনুষ্ঠানে যোগ দেন বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানা, প্রধানমন্ত্রী ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, স্পিাকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, একাধিক মন্ত্রী আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা এবং দেশের বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ।

বাংলাদেশ স্বাধীনের পর করাচির কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জানুয়ারি লন্ডন থেকে দিল্লি হয়ে দেশে ফিরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেদিন বিকেলে তেজগাঁওয়ের বিমানবন্দরে নামেন স্বাধীন দেশের রূপকার। তাই ঐতিহাসিক এদিনটিকেই বেছে নেয়া হয় জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনার দিন হিসেবে। 

যতো আয়োজন : 
প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরপর দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও সব জনসমাগমের জায়গাগুলোতেও একই সঙ্গে ক্ষণগণনা শুরু হয়ে যায়। সারাদেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের ২৮টি পয়েন্ট, বিভাগীয় আট শহর এবং ৫৩টি জেলা সদর ও দুই উপজেলা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর মোট ৮৩টি পয়েন্টে ক্ষণগণনা (কাউন্টডাউন) ঘড়ি বসানো হয়েছ। এসব ঘড়িতে জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা চলবে। একই সঙ্গে ডিসপ্লেতে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর দেখানো হবে বিভিন্ন প্রামাণ্যচিত্র। কিউআর কোডের মাধ্যমে যে কেউ চাইলেই জন্মশতবার্ষিকীর ওয়েবসাইটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু ও জন্মশতবার্ষিকীর আয়োজনের নানা তথ্য জানতে পারবেন। 

দেশ-বিদেশে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী, বঙ্গবন্ধুর নামে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রবর্তন, 'গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড' এবং হাতে হাত রেখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রতিকৃতি গড়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড হিসেবে অন্তর্ভুক্তকরণ। এ ছাড়া কনসার্টসহ নানা আনন্দ আয়োজন ও রক্তদানসহ সেবাধর্মী কর্মসূচিও থাকবে।

আগামী ১৭ মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মের শতবছর। কিন্তু প্রস্তুতির শুরুটা ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের যৌথসভায়। সে সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ২০২০ এর ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ এর ১৭ মার্চ পর্যন্ত সরকার মুজিববর্ষ উদযাপন করবে। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে মুজিববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠান ছড়িয়ে পড়বে বিদেশের মাটিতেও। এ ছাড়া গত বছরের ২৫ নভেম্বর ইউনেস্কো বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে এ কার্যক্রম উদযাপনের ঘোষণা দেয়। ওইদিন প্যারিসে ইউনেস্কো সদর দপ্তরে সংস্থাটির ৪০তম সাধারণ অধিবেশনে সর্বসম্মতভাবে 'মুজিববর্ষ' উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন পায় আন্তর্জাতিক মাত্রা।

জন্মশতবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠানটি হবে ১৭ মার্চ, এই জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডেই। সেদিন জাতির জনকের জন্মগ্রহণের শতবর্ষ পূরণ হবে। বিশ্বনেতাদের মধ্যে উপস্থিত থাকবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, ভারতের কংগ্রেসের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদসহ ভুটানের রাজা, সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজ আরো অনেকে।। সেদিন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক-সংগ্রামী কর্ম ও ব্যক্তি জীবনের নিয়ে হলোগ্রাফিক উপস্থাপনা ও থিম সং পরিবেশিত হবে। থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আতশবাজি। 

মুজিববর্ষে ঢাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠান, জুলি ও কুরি পদকপ্রাপ্তি দিবস উদ্‌যাপন, সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বড় আকারে একটি অনুষ্ঠান করা হবে।  একাত্তরে বন্ধুপ্রতীম দেশ ভারতের যেসব যোদ্ধা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছেন, তাদের মধ্য থেকে একটি প্রতিনিধিদলকে ঢাকায় আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এ ছাড়া দিল্লি, কলকাতা, মস্কো, ওয়াশিংটনসহ ১২টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন থাকছে। লন্ডনের সংসদে একটি অনুষ্ঠান, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানেরও পরিকল্পনা রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত ১০২ সদস্যের জাতীয় উদযাপন কমিটি এসব কাজের সমন্বয়ে আছে। একই সঙ্গে জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে ৬২ সদস্যের পৃথক জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, আওয়ামী লীগের গত সরকারের ১০ মন্ত্রী, বর্তমান সরকারের মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের মেয়র, তিন বাহিনীর প্রধান, পুলিশ মহাপরিদর্শক, কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, দু'জন সাবেক গভর্নর, বিভিন্ন ধর্মের মানুষের প্রতিনিধি এবং বেশ কয়েকজন সাংবাদিক, শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এই কমিটির সদস্য হিসেবে রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীকে জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে। বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্বেও রয়েছেন তিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027129650115967