মুঠোফোনে হাসতে হাসতে খুনের বর্ণনা দেন খায়ের

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

চট্টগ্রামে ছাত্রলীগ নেতা সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যার পরদিন হাসতে হাসতে মুঠোফোনে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন এক আসামি। চার মাস আগে অডিওটি ফাঁস হয়। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নিশ্চিত হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে ফাঁস হওয়া অডিও আসামি খাইরুল নুর ওরফে খায়েরের। সোমবার (৪ নভেম্বর) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন গাজী ফিরোজ।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, অডিওটিতে কার নির্দেশে, কারা, কেন খুন করেছে, তার বর্ণনা রয়েছে। আদালতের নির্দেশে গতকাল রোববার আসামি খায়ের ও জাহিদুর রহমানকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। খায়ের বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও আসামি জাহিদ নিশ্চিত করেন, ফাঁস হওয়া অডিওটি খায়েরের।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, সুদীপ্ত বিশ্বাস হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে ফাঁস হওয়া ১০ মিনিটের অডিওটি আসামি খায়েরের।

এদিকে ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রের উৎস জানতে জাহিদকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জাহিদ ও খায়ের বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। এ কারণে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে আদালতে আবেদন করা হয়। আদালত নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনারের (প্রসিকিউশন) কক্ষে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দেন।

২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ৬ অক্টোবর নগরের সদরঘাট থানার দক্ষিণ নালাপাড়ার বাসা থেকে ডেকে নিয়ে সুদীপ্তকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর বাবা মেঘনাথ বিশ্বাস বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় সাত-আটজনকে আসামি করে মামলা করেন। পরে আদালতের নির্দেশে গত ফেব্রুয়ারিতে মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সুদীপ্ত খুনের ঘটনায় ১৫-১৬ জনের নাম এসেছে। চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখি করেন সুদীপ্ত। এ ঘটনার জেরে তাঁকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয় বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।

সুদীপ্ত হত্যা মামলায় আসামি ইব্রাহিম খলিলকে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ২০ আগস্ট গ্রেফতার করা হয়। সাত মাস পর চলতি বছরের ৪ মার্চ তিনি জামিনে মুক্তি পান। হত্যাকাণ্ডের ‘নির্দেশদাতা’ হিসেবে গত ৪ আগস্ট ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় দিদারুল আলম মাসুমকে। তিনি চট্টগ্রামের লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। ১২ জুলাই চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম সারোয়ার জাহানের আদালতে জবানবন্দি দেন আসামি মিজানুর রহমান। এ জবানবন্দিতে প্রথমবারের মতো নির্দেশদাতা হিসেবে দিদারুল আলমের নাম আসে। যদিও দিদারুল দাবি করেন, রাজনৈতিক কারণে তাঁকে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে।

অডিওতে যা আছে

ঘটনার পরদিন খায়ের তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে মুঠোফোনে হাসতে হাসতে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন। খায়ের বন্ধুকে বলেন, সুদীপ্তকে হত্যার দুই মাস আগে থেকে লালখান বাজারের কথিত রাজনৈতিক বড় ভাই অনুসারীদের জন্য তাঁর খামারবাড়িতে প্রতিদিন খাবারের আয়োজন করেছেন। বড় ভাইকে ‘মামা’ বলে সম্বোধন করেন খায়ের। খায়েরের কথা অনুযায়ী, বন্ধুর বাবা মারা যাওয়ার কথা বলে সুদীপ্তকে ঘর থেকে ডেকে বের করেন জাহিদ, মোক্তার ও সালাউদ্দিন নামের তিনজন।

অডিওতে খায়ের বলেন, ‘সুদীপ্ত হত্যার ঘটনার আগের রাতে কেউ ঘুমায়নি। মামা বলেন, সকাল আটটার মধ্যে কাজ সেরে ফেলবি। আটটার পরে আমি ঘুমাব। ৬টি মোটরসাইকেল ও ১৪টি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে ৬০ থেকে ৭০ জন সুদীপ্ত হত্যার ঘটনায় অংশ নেয়। অনেকগুলো লোহার রড নেয়া হয়। ঘটনার সময় কে কোথায় থাকবে, সবকিছু তদারক করেন আইনুল কাদের নিপু। নিপু ও তাঁর সহযোগীরা তিনটি শটগান নেন। সুদীপ্তকে হত্যার সময় লোকজনকে ভয় দেখাতে পাঁচ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়।’

খায়ের বলেন, সিটি কলেজের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে আসামি আবু জিহাদ ও ‘মামা’ সুদীপ্তকে মারার পরিকল্পনা করেন। কারণ মামাকে উদ্দেশ করে সুদীপ্ত ফেসবুকে বাজে মন্তব্য করেছিলেন। এতে মামা রেগে যান। মামা চেয়েছিলেন সুদীপ্তকে মেরে জিহাদের দোষ দিতে। সিটি কলেজকেন্দ্রিক রাজনীতিতে নিপুর স্বার্থ ছিল। ভোর ছয়টার সময় নিপুর নেতৃত্বে সবাই নালাপাড়ায় সুদীপ্তের বাসার উদ্দেশ্যে যায়। কথা ছিল সুদীপ্তকে মেরে হাত–পা ভেঙে দেবে।

অডিওতে খায়ের বলেন, ‘আমিও যাওয়ার জন্য পাগল ছিলাম। কিন্তু নিপু ভাই আমাকে বলেছিল “তুই পাগল”, বেশি মারবি। আবার মরে যাবে। তাই যাইনি। সুদীপ্তকে পেটানোর সময় ঘটনাস্থলে ছিল নয়জন। বাকিরা বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছিল।’

মুঠোফোনে অপর প্রান্তে থাকা যুবকের এক প্রশ্নের জবাবে খায়ের বলেন, সুদীপ্ত মারা যাওয়ার পর মামা খুবই খুশি হন। পরদিন রুবেল দেসহ অন্য বন্ধুদের নিয়ে নিপু গা–ঢাকা দেয়।

মামলার বাদী ও নিহতের বাবা মেঘনাথ বিশ্বাস বলেন, ‘গ্রেফতার আসামির জবানবন্দি ও অডিওতে হত্যার বর্ণনা উঠে এসেছে। আশা করি, তদন্ত সংস্থা এখন মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করতে পারবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027928352355957