মুদ্রাকর সিন্ডিকেটের অপতৎপরতায় নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যক্রম নিয়ে অনিশ্চয়তা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

একদিকে প্রাণঘাতী করোনার কারণে কাজে ধীরগতি অন্যদিকে মুদ্রাকরদের সিন্ডিকেটের তৎপরতায় নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যক্রম নিয়ে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে সরকারকে। সরকারের কঠোর নজরদারির কারণে কয়েক বছর সক্রিয় হতে না পারলেও এবার আবার পুরোনো কৌশলে বইয়ের সকল কাজ কব্জা করে ফায়দা লুটতে তৎপর একটি চক্র। জোটবদ্ধভাবে সরকারের প্রাক্কলিত দরের চেয়ে কমে দরপত্র জমা দিয়ে অধিকাংশ কাজ কব্জা করে এখন বইয়ের মান রক্ষা করতে পারছে না বহু প্রতিষ্ঠান। তবে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। শর্ত অনুসারে বই না হলে তা বাতিল ও কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। ইতোমধ্যে ১০০ মেট্রিক টন নিম্নমানের কাগজ বাতিল করা হয়েছে। কেটে ফেলা হচ্ছে নিম্নমানের বই।  বুধবার (১১ নভেম্বর) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।  প্রতিবেদনটি লিখেছেন বিভাষ বাড়ৈ। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায় এনসিটিবি, প্রকাশক, মুদ্রাকরদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনার আঘাত লেগেছে নতুন পাঠ্য বাইয়েও। একদিকে করোনার কারণে কাজে ধীরগতি অন্যদিকে প্রকাশকদের একটি সিন্ডিকেটের তৎপরতায় নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যক্রম নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা এবার জোটবদ্ধভাবে সরকারের প্রাক্কলিত দরের চেয়ে কমে দরপত্র জমা দিয়েছিলেন। এতে সরকারের টাকা সাশ্রয়ের আশা জাগলেও বইয়ের মান রক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। একদিকে বাজার মূল্যের চেয়ে কমমূল্য দেখিয়ে দরপত্রে অংশ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ তাদের অনেকেই এখন কমদামে কাগজ কিনতে না পেরে নিম্নমানের কাগজে বই ছাপার চেষ্টা করছে। তবে আশার বিষয়, নিম্নমানের কাগজে ছাপা বই গ্রহণ করছে না এনসিটিবি। আবার ছাপাখানার মালিকদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, আগের মূল্যে কাগজও সরবরাহ করছেন কাগজ মিল মালিকরা।

এছাড়াও দরপত্রের শর্তবহির্ভূতভাবে প্রাথমিক ছাড়া সকল স্তরের পাঠ্যবইয়ের কভার পেজের ভেতরের পাশেও নতুন করে ছবি ছাপতে মৌখিক নির্দেশ দিয়েছে এনসিটিবি। এটি নিয়ে এনসিটিবি’র সঙ্গে ছাপাখানা মালিকদের দ্বন্দ্ব চলছে। কারণ এই অতিরিক্ত কাজের জন্য ছাপাখানার জন্য কোন খরচ নির্ধারণ করা হয়নি। আবার সাধারণ অর্থাৎ শিট মেশিনে একই কভার পেজের দু’পাশ রঙ্গিন ছবি ছাপাতে গিয়ে কাগজ-কালি নষ্ট হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ব্যবসায়ীরাও। সব মিলিয়ে পাঠ্যবই নিয়ে বহুমুখী জটিলতা সামনে চলে আসছে। এমন অবস্থায় বইয়ের কাগজ ও ছাপা নিম্নমানের হতে পারে এই আশঙ্কায় উদ্বিঘœ এনসিটিবি কর্মকর্তারা। উগ্নিঘœ অনেক মুদ্রাকরও।

তবে এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা আশ^স্ত করে বলেছেন, বইয়ের মান রক্ষায় সরকার কোন আপোস করবে না। নিম্নমানের কাগজে বই ছাপার সুযোগ কাউকে দেয়া হচ্ছে না, হবেও না। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী বই ছেপে সরবরাহ করতে হবে। যাদের বই ছাপায় সমস্যা পাওয়া যাচ্ছে তাদের বই বাতিল করা হচ্ছে। কেটে ফেলারও নির্দেশও দেয়া হচ্ছে। যাতে নিম্নমানের বই কেউ ব্যবহার করতে না পারে। বইয়ের মান রক্ষায় আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। বই নিয়ে কোন অনিয়ম মানা হয়নি, হবেও না।

বইয়ের মান রক্ষায় এনসিটিবির পদক্ষেপের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১০০ মেট্রিক টন নিম্নমানের কাগজ বাতিল করেছে এনসিটিবি কর্মকর্তারা। তারা নিম্নমানের কাগজ ও কালিতে ছাপানো একটি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২০ হাজার কপি বইও কর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক নিম্নমানের পাঠ্যবই গ্রহণ করতে এনসিটিবি কর্মকর্তাদের বদলি করারও হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন কর্মকর্তরা।

এনসিটিবি’র তথ্যানুযায়ী, অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসের ছাপানো প্রায় ২০ হাজার কপি বই কর্তনের (নষ্ট করা) নির্দেশ দিয়েছেন এনসিটিবির উর্ধতন কর্তৃপক্ষ। এসব বই প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর শিশুদের জন্য ছাপানো হয়েছিল। অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসে নিম্নমানের বই ছাপানোর বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবি’র সদস্য (টেক্সট) প্রফেসর ফরহাদুল ইসলাম বলেছেন, সব প্রতিষ্ঠানের ছাপানো বই খারাপ হচ্ছে না। একটি বা দুটি প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের বই ছাপার চেষ্টা করছে। তবে আমরা সেগুলো গ্রহণ করছি না। অগ্রণীর কিছু বই কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছি। একটি খারাপ বইও আমাদের কর্মকর্তারা গ্রহণ করবেন না।

জানা গেছে, অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসের ৪০ মেট্রিক টন কাগজ বাতিল অর্থাৎ ছাপার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও বর্ণশোভা মুদ্রালয়ের ২০ মেট্রিক টন, মিলন প্রিন্টিং প্রেসের ১১ মেট্রিক টন, ফরাজী প্রিন্টিং এ্যান্ড পাবলিকেশনসের নয় মেট্রিক টন, এসআর প্রিন্টিং প্রেসের ৩০ মেট্রিক টন এবং অপর একটি প্রিন্টিং প্রেসের ১০ মেট্রিক টন কাগজ বাতিল ঘোষণা করেছে এনসিটিবি।

অগ্রণী প্রিন্টিং প্রেসের নিম্নমানের বই কর্তন ও কাগজ বাতিলের বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলছিলেন, আমাদের ইন্সপেকশন এজেন্ট ব্যুরো ভেরিটাস অগ্রণীর ছাপাখানায় কিছু খারাপ বই শনাক্ত করেছিল, সেগুলো কর্তনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাদের কিছু কাগজেও ত্রুটি ছিল সেগুলোও সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

২০২১ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাক-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত প্রায় ৩৬ কোটি পাঠ্যবই ছাপানো হচ্ছে। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যেই সব বই ছাপা ও সরবরাহ শেষ করার কথা বলছেন এনসিটিবি কর্মকর্তারা। ২০২১ সালে প্রাথমিক স্তরের প্রায় ১০ কোটি কপি বই এবং ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেণীর জন্য ব্রেইল বইসহ (৯ হাজার ৫০৪টি) ২৪ কোটি ৪১ লাখ ২২ হাজার ৩৪৯টি পাঠ্যবই ছাপানো হচ্ছে। অনান্য স্তর মিলিয়ে প্রায় ৩৬ কোটি পাঠ্যবই ছাপানো হচ্ছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038290023803711