মুরাদনগরে রমরমা কোচিং বাণিজ্য

কুমিল্লা প্রতিনিধি |

লেখাপড়া শেখার জন্য শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে সেখানে তাদের হাজিরা দেওয়াটাই মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। পড়া, শেখা ও পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য কিছু শিক্ষকের সৃষ্ট প্রাইভেট হোমে সকাল, দুপুর, বিকাল ও রাতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা ছুটছে। বিষয়টি ব্যতিক্রম মনে হলেও বাস্তব চিত্র কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলায় এরকমই। এতে করে শিক্ষার্থীদের সময় ও শ্রমের অপচয়ের পাশাপাশি অভিভাবকদের গচ্চা দিতে হচ্ছে বড় অঙ্কের টাকা। এ কারণে অভিভাবকরা সন্তানদের স্কুলের চেয়ে কোচিং সেন্টারে পড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। সারাদেশে কোচিং বাণিজ্য বন্ধে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও তেমন ফল মিলছে না।

২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ২০ জুন প্রাইভেট টিউশনি বন্ধে প্রজ্ঞাপন জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়- সরকারি ও এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকরা বিদ্যালয় বা নিজের বাড়িতে কোচিং বা প্রাইভেট পড়াতে পারবেন না। কিন্তু সরকারি ওই নির্দেশনা অমান্য করে উপজেলার বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়াচ্ছেন। প্রকাশ্যে বাসা অথবা সেন্টারে চালু রেখেছেন কোচিং বাণিজ্য। একই অবস্থা গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও। ভোরের আলো ফুটতে না-ফুটতেই কয়েক কিলোমিটার দূরের কোচিংয়ে পড়তে যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১ ঘণ্টা করে মাসে ১২ থেকে ১৬ দিন তাদের পড়ানো হয়। কেউ কেউ সপ্তাহে তিন দিনের বেশি পড়াতে রাজি নন। কোচিং ফি বাবদ মাসে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে তাদের। কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে সঙ্গে প্রাইভেট পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে নম্বর পাওয়ার প্রতিযোগিতাও। কেন কোচিং করছো, জিজ্ঞাসা করলে শিক্ষার্থীরা বলে, ‘কী করব! কোচিংয়ে না পড়লে পরীক্ষায় পাস করব কীভাবে? ক্লাসে তো আর সব কিছু শেখানো হয় না।’ আবার কিছু শিক্ষক আছেন, যাদের কাছে কোচিং করলে পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্রের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আবার কেউ কেউ কোচিং না করলে পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেন। কোচিং নির্ভরশীল হওয়ায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে দূরত্ব দিন দিন বেড়ে চলছে বলেও অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক বলেন, ক্লাসে তো আর সব পড়ানো হয় না। বাধ্য হয়েই ছেলে-মেয়েদের কোচিংয়ে পড়তে দিতে হচ্ছে। এমনও শিক্ষক রয়েছে যার কাছে প্রাইভেট না পড়লে পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া যায় না। এতে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের শিক্ষা থেকে যেমন বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি শিক্ষকদের প্রাইভেট ও নম্বর বাণিজ্যের কারণে প্রকৃত মেধার মূল্যায়নও হচ্ছে না। যে শিক্ষক ভোর ৬টা থেকে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পূর্ব পর্যন্ত একটানা প্রাইভেট পড়ানোর দায়িত্বে থাকেন, তিনি কীভাবে প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মনোযোগ সহকারে পাঠদান করাতে পারেন—এ বিষয়টি নিয়ে সচেতন অভিভাবক মহল বেশ চিন্তিত। অনেক ছাত্র প্রাইভেট পড়তে না পারায় অনেক শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন থমকে যাচ্ছে বলেও জানান।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সফিউল আলম তালুকদার বলেন, শিক্ষকদের নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। শিক্ষকদের অতিরিক্ত ক্লাসের সুযোগ রয়েছে, সেটি অভিভাবক এবং ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে স্কুল ছুটির আগে অথবা পরে যার যার শ্রেণিকক্ষে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করে কোচিংয়ের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিতু মরিয়ম বলেন, কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033860206604004