মৃত্যুর পর ফেসবুক পোস্টে ঢাবি শিক্ষার্থীর মন্তব্য নিয়ে রহস্য

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান তুষ্টির মৃত্যুর রহস্যের জট খুলছে না। বরং আরও রহস্য দেখা দিয়েছে ফেসবুক পোস্টে তার কমেন্ট নিয়ে। এ কমেন্ট করা হয় তুষ্টির মৃত্যুর দুইদিন পর। নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সেই পোস্টে লেখা হয় ‘সেড নিউজ’। এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে তুষ্টির পরিবার।

গত ৫ই জুন ভোরে বাথরুম থেকে শিক্ষার্থীর মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ার ঘটনার তদন্তের এখনো কোনো কিনারা করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় দুই সপ্তাহ অতিক্রম করলেও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এখনো হাতে পায়নি পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওইদিন ঘটনার পর পুলিশ আসার আগেই তুষ্টির বন্ধু রাহনুমা তাবাসসুম রাফির ফোন পেয়ে সাফায়াত আহমেদ রাজু ঘটনাস্থলে আসেন। এবং বাথরুমের ভেন্টিলেটরের ফাঁক দিয়ে বাথরুমের দরজার সিটকিনি খোলেন বলে বাসার মালিক এবং রুমের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, তুষ্টি বাথরুমে পড়ে গিয়ে মারা গেলে সেক্ষেত্রে পড়ে যাওয়ার পরে তার মাথা, পা-পিঠে অথবা হাতে কোথাও না কোথাও আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা। কিন্তু সুরতহাল প্রতিবেদন করার সময় তার শরীরের কোথাও কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। একাধিকবার পরীক্ষা করলেও শুধুমাত্র ওই শিক্ষার্থীর পিঠে সামান্য ফুসকুড়ির মতো দেখা গেছে। যেটা গুরুতর কোনো আঘাত নয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় তার বন্ধুরা থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট কেউ আমাদের সন্দেহের বাইরে নন। ইতিমধ্যে একাধিক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আমাদের কাছে তাদের সকলের তালিকাই রয়েছে। প্রত্যেকের তালিকা ধরে আমরা কাজ করছি। বিশেষ করে তুষ্টির ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাফি এবং রাজুর মুঠোফোন নাম্বার ধরে আমরা কাজ করছি। ঘটনার আগে-পরে তারা কতোক্ষণ কথা বলেছেন, কি কি কথা হয়েছে- এগুলো বিস্তর তদন্ত করা হচ্ছে। তুষ্টি, রাফি এবং রাজুর কললিস্ট বিশ্লেষণে তাদের তিনজন পরস্পরের সঙ্গে বেশি যোগাযোগ রাখতেন বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ঘটনার পর শিক্ষার্থীর বন্ধুরা বাথরুমের ভেন্টিলেটর দিয়ে দরজার সিটকিনি খুললেও ভেতর থেকে তাকে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে বের করেন। বাথরুমের জানালা দিয়ে খুব সহজেই বাথরুমের দরজা খোলা সম্ভব। এদিকে বাথরুমের ভেতর খুব সরু হওয়ায় শিক্ষার্থী পড়ে যাওয়ার পর তার শরীরে বড় কোনো আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। কিন্তু ওই শিক্ষার্থীর শরীরে একাধিকবার অনুসন্ধান করেও কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।

সবকিছু মিলে তদন্ত চলছে। সূত্র জানায়, সার্বিক তদন্তে জানা গেছে, শিক্ষার্থী রাফির সঙ্গে তুষ্টির একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অনেক আগে থেকেই রয়েছে। রাফির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণেই আজিমপুরের ওই কোয়ার্টারে সিট খালি হওয়ার পরে তার মৃত্যুর পাঁচদিন আগে চলে আসেন তুষ্টি। একই এলাকায় বাড়ি হওয়াতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রাজুর সঙ্গে মাঝেমধ্যেই কথা হতো তার।

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

এ ছাড়া, রাফি এবং রাজুর মধ্যে সাধারণ সম্পর্কের চেয়ে কিছুটা বেশি ভালো সম্পর্ক ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সন্দেহের তালিকায় থাকা প্রত্যেকের মুঠোফোনের কললিস্ট হিস্ট্রি পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া, মৃত শিক্ষার্থী তুষ্টির কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল কিনা সেটা নিশ্চিত হতে তার কক্ষে ইতিমধ্যে অনুসন্ধান করা হয়েছে। এ সময় সেখানে বিভিন্ন বড় বড় লেখকদের বিখ্যাত কিছু বই, তার লেখার খাতা, পাঠ্যবই এবং ডায়েরি বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে।

কিন্তু সেখানে তার সঙ্গে কারও কোনো ভালোবাসার সম্পর্কের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি।  সবকিছু মিলে একটি ফলাফল শিগগিরই দাঁড় করানো যাবে বলে জানায় সূত্র। এদিকে শিক্ষার্থীর চাচা ইমাম হোসেন মেহেদী বলেন, তুষ্টির মৃত্যুর বিষয়টি মোটেও স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। খুব শিগগিরই মৃত্যুর প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে সক্ষম হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এবং এই মৃত্যুর ঘটনায় কেউ দায়ী হলে তাদেরকে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

এ বিষয়ে লালবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খন্দকার হেলালউদ্দিন আহমেদ বলেন, ওই শিক্ষার্থীর যদি শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা সংক্রান্ত কোনো সমস্যা না থাকে সেটাও কিন্তু ফরেনসিক প্রতিবেদনে উঠে আসবে। এ ছাড়া ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রভাবিত করার কোনো সুযোগ নেই। যদি কারো দ্বারা শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকে সেটাও খুঁজে বের করা হবে। ঘটনার মূল রহস্য উদ্‌ঘাটনের চেষ্টা করছি বলে জানান এই কর্মকর্তা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ - dainik shiksha অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র - dainik shiksha ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026829242706299