প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতিকে ‘অদ্ভুত দুর্নীতির কর্মকাণ্ড’ বলে আখ্যায়িত করেন জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, ‘সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে সংঘটিত দুর্নীতি ও অনিয়ম তদন্তে সংসদীয় কমিটি গঠন করতে হবে।’ সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দেয়া বক্তব্যে মেডিকেল কলেজের বই কেনাসহ বেশ কয়েকটি সেক্টরে অনিয়ম-দুর্নীতির ফিরিস্তি তুলে ধরে তিনি এই দাবি জানান।
পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘এই সংসদে অনেক সিনিয়র রাজনীতিক ও সংসদ সদস্য রয়েছেন। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি ও অনিয়ম অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংসদ সদস্যদের দিয়ে একটি কমিটি গঠন করতে হবে। যেন জাতি এই ভয়াবহ হাস্যরসের দুর্নীতি থেকে মুক্তি পায়।’
তিনি বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি ও অনিয়মগুলো সরকারের অর্জনকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। অর্জনগুলোকে ম্লান করে দিচ্ছে। একের পর একেক ঘটনা আসছে জাতির সামনে। দুর্নীতি হয়ে গেছে একটি হাস্যরসের বিষয়। অদ্ভুত ধরনের দুর্নীতি হচ্ছে।’
এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, ‘৫ হাজার ৫০০ টাকার বই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিনেছে ৮৫ হাজার ৫ টাকায়। প্রতিষ্ঠান থেকে এই কেনাকাটা হয়েছে। সার্জারি শিক্ষার্থীদের প্র্যাকটিস অব সার্জারি বই গোপালগঞ্জের সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের জন্য ১০ কপি কেনা হয়েছে। এ জন্য পরিশোধ করা হয়েছে ৮ লাখ ৫৫ হাজার টাকা।’
প্রসঙ্গত, মেডিকেল কলেজের বই কেনায় দুর্নীতির বিষয় নিয়ে গত ৩০ আগস্ট ‘সাড়ে ৫ হাজার টাকা দামের একটি বই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিনেছে ৮৫,৫০০ টাকায়!’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
সরকারের বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রসঙ্গে পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘পুকুর খনন শিখতে বিদেশে যাবেন ১৬ জন কর্মকর্তা। এজন্য ব্যয় ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। রূপপুরের বালিশকে তোষকের নিচে নিয়ে গেছে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি পর্দা কেনার ঘটনা। একটি পর্দার মূল্য ধরা হয়েছে ৩৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
এই একটি অক্সিজেন জেনারেটিং প্ল্যান্ট কেনার খরচ ৫ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, একটি বিএইএস জেনারেটিং প্ল্যান্ট কেনার খরচ ৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা, একটি ভ্যাকুয়াম প্ল্যান্ট ৮৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মনিটরিং প্লেট ২৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, তিনটি ডিজিটাল ব্লাডপ্রেসার মেশিন ৩০ লাখ ৭৫ হাজার। এ রকম অবিশ্বাস্য মূল্যে ১৬৬টি পণ্য কেনা হয়েছে।’
ওয়াসার দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে জাপার এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘লুটপাট ও অনিয়মে ডুবতে বসছে ওয়াসা। মুন্সীগঞ্জের যশোলদিয়া থেকে পদ্মার পানি পরিশোধন করে ঢাকায় সরবরাহের প্রকল্প শেষ হয়েছে আট মাস আগে। কিন্তু এখনও তা চালু হয়নি। সম্প্রতি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হলেও ৫ মিনিটে পানির পাইপ ফেটে ভেস্তে গেছে পুরো প্রকল্প।’ কম পুরুত্বের নিম্নমানের পাইপ সরবরাহের প্রতিবাদ করায় প্রকল্প পরিচালককে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল বলেও তিনি উল্লেখ করেন।