মেডিক্যাল কলেজে লিফট-জেনারেটর স্থাপনে দুর্নীতি, তদন্ত কমিটি

দৈনিক শিক্ষাডটকম, রাজশাহী |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, রাজশাহী: জিকে শামীম সিন্ডিকেটকে সহায়তাকারী মোহাম্মদ ফজলুল হক বর্তমানে রাজশাহী গণপূর্ত সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। জিকে শামীম সিন্ডিকেটকে অনৈতিক সুবিধা দেওয়ায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় শাস্তি হিসাবে তার বেতন গ্রেড নিম্নতম ধাপে অবনমিত করে। জিকে শামীম সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেওয়ার অভিযোগের পরও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি দিয়ে ফজলুল হককে রাজশাহীতে বদলি করা হয়।

জানা গেছে, আলোচিত প্রকৌশলী ফজলুল হক রাজশাহীতেও বড় অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে লিফট, বিদ্যুতের সাব-স্টেশন, জেনারেটর স্থাপন ছাড়াও নবনির্মিত ৫০ শয্যা আইসোলেশান ইউনিটের উপকরণ সরবরাহের কাজে ফলজুল হকসহ রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগের আরও দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে গুরুতর অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ফজলুল হক ছাড়াও রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগ-২ এর সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও একই বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আয়তুল্লাহর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনে।

জানা গেছে, পূর্ত বিভাগের আওতায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল ছাড়াও রাজশাহী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ দপ্তরে সিসিটিভি ও এসি স্থাপন কাজেও হয়েছে নজিরবিহীন অনিয়ম দুর্নীতি। দুর্নীতি দমন কমিশনের সুপারিশ এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে রাজশাহী গণপূর্ত অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল গোফফার রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল এবং অন্য দপ্তরের দুর্নীতি তদন্তে ১৮ এপ্রিল তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। রাজশাহী গণপূর্তের ইএম পিএন্ডডি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাহাঙ্গীর আলমকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, জয়পুরহাট গণপূর্তের ইএম বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মর্তুজা আল মাহমুদ ও রাজশাহী গণপূর্তের ইএম উপবিভাগ-১ এর উপসহকারী প্রকৌশলী মো. রাসেল হাসান।

অভিযোগে জানা গেছে, টেন্ডারে আমদানি করা গ্রেড-১ লিফ্ট সরবরাহের শর্ত থাকলেও একটি পুরোনো লিফট সংস্কার করে তা স্থাপন করা হয়েছে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কর্তৃপক্ষও এ লিফট নিয়ে কোনো আপত্তি করেনি।

এদিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে ১০০ কেভিএ বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন ৫০০ কেভিএ জেনারেটর স্থাপনের আরেকটি কাজ পেয়েছিল রংপুরের ঠিকাদার সৈয়দ সাজ্জাদ আলী। কিন্তু গণপূর্তের কর্মকর্তারা চাপ দিয়ে এই কাজও সাব-কন্ট্রাক দিয়েছে শান্ত চৌধুরীকে। এই কাজের ক্ষেত্রেও ব্যাপক অনিয়মের আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন ও জেনারেটর স্থাপনে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সার্কিট ব্রেকার দেওয়া হয়নি। যুক্ত করা হয়নি শতাধিক ধরনের সহায়ক আইটেম।

অভিযোগ মতে, টেন্ডারের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য ও সরঞ্জাম সরবরাহ না করা হলেও আলোচিত দরপত্রগুলো মূল্যায়নের নামে কাজ দুটির একটিতে শতকরা ৯ দশমিক ৪৩ ভাগ এবং আরেকটিতে ১৪ দশমিক ৩৬ ভাগ টেন্ডার মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গণপূর্তের প্রকৌশলীরা কাজ মূল্যায়নের নামে কৌশলে টেন্ডার দুটিতে বাড়িয়ে দেওয়া অতিরিক্ত নন-টেন্ডার আইটেম স্থাপন না করেই একটিতে টেন্ডার মুল্যের অতিরিক্ত ৪০ লাখ টাকা ও অন্যটি থেকে অতিরিক্ত ৪৫ লাখ টাকা বিল দিয়েছে ঠিকাদারিারকে। অতিরিক্ত এই বিলের টাকা ঠিকাদার ও তদারকির দায়িত্বে থাকা পূর্ত প্রকৌশলীরা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন বলে অভিযোগে বলা হয়েছে।

এদিকে রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগের আওতায় আরেকটি টেন্ডারে ৩৯ লাখ ৪৪ হাজার টাকা মূল্যে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ডিজিটাল লাইটিং অ্যারেস্টার স্থাপনের কথা বলা হলেও এই কাজে এখন পর্যন্ত মাত্র ১০ ফুট পোল ছাড়া আর কিছু স্থাপন করা হয়নি। বিদেশি অর্থায়নে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে পিসিআর ল্যাবে জেনারেটর ও এসি স্থাপনের কথা বলা হলেও এখনো কেবল যুক্ত করে জেনারেটর সচল করা হয়নি। মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবে এসিরও অস্তিত্ব নেই। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে গণপূর্ত বিভাগ রাজশাহী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের ল্যাবরেটরিতে সিসিটিভি ক্যামেরা ও এয়ারকুলার স্থাপনের কথা বলা হলেও এসব কাজ না করেই অর্থ তুলে নেওয়া হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে ছাত্রদল নেতা শান্ত চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গত কয়েক বছর ধরে পূর্ত বিভাগের প্রকৌশলীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালসহ অন্যান্য সরকারি দপ্তরের সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করছেন। এই চক্রকে সরাসরি সহায়তা করেছেন রাজশাহী পূর্ত সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফজলুল হক ও সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানসহ তিন প্রকৌশলী।

এসব দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে আলোচিত রাজশাহী সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফজলুল হক বলেন কাজগুলি বাস্তবায়নের সঙ্গে তিনি সরাসরি জড়িত নন। তদন্ত কমিটি হয়েছে। প্রতিবেদন প্রকাশ হলে সবকিছু জানা যাবে। সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও বর্তমানে পাবনা পূর্ত বিভাগে কর্মরত মোস্তাফিজুর রহমান তদন্তাধীন বিষয়ে মন্তব্য করবেন না বলে জানান। এই বিষয়ে ছাত্রদল নেতা শান্ত চৌধুরীও কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন। রাজশাহী গণপূর্ত বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল গোফফার জানান, তদন্ত প্রতিবেদন তিনি হাতে পেয়েছেন। তবে সেটি এখনো পর্যালোচনা করা হয়নি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আইনের মারপ্যাঁচে অনিশ্চিত ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন - dainik shiksha আইনের মারপ্যাঁচে অনিশ্চিত ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন ‘ঢাবির ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হচ্ছে শিগগিরই’ - dainik shiksha ‘ঢাবির ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হচ্ছে শিগগিরই’ হাই-টেক পার্কের নাম হবে জেলার নামে: উপদেষ্টা নাহিদ - dainik shiksha হাই-টেক পার্কের নাম হবে জেলার নামে: উপদেষ্টা নাহিদ দীপু মনির নামে আরেক মামলা, আসামি ৬০০ - dainik shiksha দীপু মনির নামে আরেক মামলা, আসামি ৬০০ স্কুল-কলেজে বিশৃঙ্খলা : কোথাও জবরদস্তি কোথাও পালিয়ে থাকা - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বিশৃঙ্খলা : কোথাও জবরদস্তি কোথাও পালিয়ে থাকা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024960041046143