২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ভর্তি আবেদন শুরু হয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির এ অনলাইন আবেদন শেষ হবে ২৩ ফেব্রুয়ারি। ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১০ মার্চ। কিন্তু এ ভর্তি পরীক্ষায় আবেদনে ক্ষতিগ্রস্ত হবে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদনকারীরা। কারণ গত ৮ ফেব্রুয়ারি এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী তার ফলাফলে সন্তুষ্ট না হলে আবেদন করবে। আর সে আবেদনের ভিত্তিতে খাতা পুনঃ যাচাই শেষে এক মাস পর ফলাফল জানানো হবে। কিন্তু মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষার আবেদনের সময় এরই মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তাই বঞ্চিত হবে শিক্ষার্থীদের বৃহৎ একটি অংশ। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের মধ্যে দ্বন্দ্ব স্পষ্ট।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর পরীক্ষা পেছানোর কোনো চিন্তাই করছে না। অন্যদিকে শিক্ষা বোর্ডগুলোও ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণে নিজেদের পূর্বের সিদ্ধান্তে বহাল। এমতাবস্থায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়তে হবে ফলাফল পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদনকারীদের। শিক্ষার্থীরা বলছে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ারে বড় ধরনের ক্ষতি করবে। তাই দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করা উচিত। এমবিবিএস ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি ও ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি অথবা ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি ও ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। তবে এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের আগে দুই বছরের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ এবং এইচএসসি পরীক্ষায় জীববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নসহ উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আবেদনের যোগ্য হবেন। দুটি পরীক্ষায় মোট জিপিএ কমপক্ষে ৯ হতে হবে। উপজাতীয় ও পার্বত্য জেলার অ-উপজাতীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে দুটি পরীক্ষায় মোট জিপিএ-৮ হলে হবে। তবে এককভাবে কোনো পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৫০-এর কম হলে আবেদনের যোগ্য বলে বিবেচিত হবে না। সবার জন্য এইচএসসি পরীক্ষায় জীববিজ্ঞানে ন্যূনতম গ্রেড পয়েন্ট ৪.০ না থাকলে আবেদন বাতিল বলে গণ্য হবে। লিখিত ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর এবং এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের যোগফলের ভিত্তিতে মেধাতালিকা প্রণয়ন করা হবে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল মেডিক্যালে ভর্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যেসব শিক্ষার্থী তাদের ফলাফল নিয়ে সন্তুষ্ট না হয়ে পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেছে তারা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে।
আফসানা তানিয়া নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রকাশের পরও আবেদনের সুযোগ দেয়া উচিত ছিল। যদি তা করা না হয় তাহলে আমরা বঞ্চিত হবো। জানা গেছে, ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার আবেদন ফি জমা দেয়াসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন শেষে ৬ ও ৭ই মার্চ প্রবেশপত্র বিতরণ (অনলাইন থেকে ডাউনলোড) করা হবে। ১০ মার্চ সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে ভর্তি পরীক্ষা। এবার দেশের ৩৭টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজে আসন রয়েছে ৪ হাজার ৩৫০টি। আর বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে আসন রয়েছে ৬ হাজার ৪৮৯টি। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০ লাখ ১১ হাজার ৯৮৭টি। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন। আর বিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ ২ লাখ ২৪ হাজার ৭৬৬ জন। এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর শিক্ষা বোর্ডগুলো শিক্ষার্থীদের পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করতে বলেছে ৯ই ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে। আবেদনকারীদের খাতা পুনঃযাচাই শেষে আগামী ১০ মার্চ ফলাফল প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব- কমিটির সভাপতি প্রফেসর তপন কুমার সরকার বলেন, বোর্ডের সৃষ্টিলগ্ন থেকেই এ সিস্টেমে রেজাল্ট হয়ে আসছে। রেজাল্টের এক মাস পর পুনঃনিরীক্ষণের ফল দেয়া হয়। এখন স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটি তো আমাদের বিবেচ্য বিষয় না। কারণ এর মধ্যে পুনঃনিরীক্ষণের রেজাল্ট দেয়া সম্ভব না। এটা তাদের বিষয় তারা কী করবেন। আমরা পুনঃনিরীক্ষণের ফল ১০ মার্চ ঘোষণা করবো।
আর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) প্রফেসর ডা. আবুল বাশার মো. জামাল বলেন, মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে ঘোষিত তারিখই বলবৎ থাকবে। পরীক্ষা পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। যারা এর মধ্যে আবেদন করতে পারবে কেবল তাদেরই পরীক্ষা নেয়া হবে। এ ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই।