মেধাবীদের জন্য অশনিসংকেত

ড. এম এল আর সরকার |

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা হচ্ছেন জাতির বিবেক, সম্মানীয় ও বরেণ্য ব্যক্তিত্ব। এ রকম কিছু কথা সরকার বা রাজনীতিকরা বিভিন্ন প্রসঙ্গে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের শিক্ষকদের সম্পর্কে বলেন। শিক্ষকদের তারা কোনো কোনো সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সভাপতি বা প্রধান অতিথিও করেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে শিক্ষকরা অবহেলিত, বঞ্চিত এবং অনেক ক্ষেত্রে অবজ্ঞার পাত্র। সরকারের সাম্প্রতিক কতিপয় সিদ্ধান্তের ফলে এ পেশায় জড়িতরা হতাশ ও বিক্ষুব্ধ। শিক্ষকরা ভেবেই পাচ্ছেন না- জাতির জনকের কন্যা দেশের নেতৃত্বে থাকা সত্ত্বেও কী করে তারা এ রকম বৈষম্যের শিকার হতে পারেন!

অনেকেই মনে করেন, শিক্ষকদের প্রতি সরকারের অবহেলার মূল কারণ সম্ভবত তিনটি। প্রথমত, শিক্ষকদের কোনো প্রশাসনিক ক্ষমতা নেই। দ্বিতীয়ত, প্রায় প্রত্যেক শিক্ষকই মুক্তচিন্তায় বিশ্বাস করেন; অনেকে রাষ্ট্র, সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে কথা বলেন ও লেখেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিক্ষকদের এসব কথা ও লেখা হয় সরকারি সিদ্ধান্তের সমালোচনামূলক। তৃতীয়ত, সরকারের নীতিনির্র্ধারণী পর্যায়ে একশ্রেণীর আমলার প্রাধান্য। এখানে শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ও কৃষিবিদদের প্রতিনিধি নেই এবং তাদের মতামতের গুরুত্বও নেই। ফলে শুধু শিক্ষকরাই নন, অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত ও অবহেলার শিকার হচ্ছেন রাষ্ট্রের অন্যান্য পেশাজীবী শ্রেণীও।

প্রকৃতপক্ষে যুগ যুগ ধরেই শিক্ষকরা অবহেলার শিকার হচ্ছেন। শিক্ষকদের জন্য সবকিছুই আছে বক্তৃতায় ও শিক্ষানীতিতে। কিন্তু বাস্তবে তা শূন্য। অনেক আগেই প্রাইমারি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষকতাকে করা হয়েছে অনাকর্ষণীয়। এখন হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতাকে। গত পে-স্কেল প্রদানের সময়ই শিক্ষকরা পরিষ্কারভাবে বুঝেছিলেন, তারা ব্যাপক বৈষম্যের শিকার। কিন্তু দিন দিন যে এ বৈষম্য বেড়েই চলবে এবং এর কোনো সমাধান হবে না, তা কেউ কল্পনাও করেননি। ফলে শিক্ষক হয়েও নিজেই নিজেদের কষ্টের কথা জাতি এবং বিশেষ করে সরকারের জ্ঞাতার্থে এখানে তুলে ধরছি। এ জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী।

বেতন-স্কেল এবং ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপের পাকা বন্দোবস্ত করা হয়েছিল বর্তমান বেতন স্কেল প্রদানের সময়। তাদের জন্য বরাদ্দ ছিল সর্বোচ্চ তৃতীয় ধাপ। অনেক আন্দোলনের পর প্রফেসরদের একটি অংশের জন্য এখন প্রথম ধাপে ওঠার ব্যবস্থা হয়েছে। অদ্যাবধি শূন্য ধাপে যাওয়ার ব্যবস্থা হয়নি এ যুক্তিতে- শিক্ষকরা দ্রুত পদোন্নতি পান এবং ৬৫ বছর চাকরি করেন। কিন্তু বাস্তবে সরকারি কর্মকর্তারাই দ্রুত পদোন্নতি পান। তাই তারা উচ্চতর ডিগ্রি ছাড়াই ৫৭ বছরের মধ্যেই শিক্ষকদের অতিক্রম করে শুধু শূন্য ধাপই নয়; তার উপরেও ওঠেন।

চাকরি শেষে প্রায় তারা পিএসসিতে, রাষ্ট্রদূত হিসেবে এবং বিভিন্ন সরকারি প্রজেক্টে উচ্চ বেতনে নিয়োগ পান, যেগুলোয় আগে নিয়োগ পেতেন শিক্ষকরা। শিক্ষকরা ভালো ফল, উচ্চতর ডিগ্রি এবং দীর্ঘ চাকরির অভিজ্ঞতা নিয়েও শূন্য ধাপে যেতে পারেন না। প্রফেসর জাফর ইকবালের কথাই ধরুন। তার মতো শিক্ষক দীর্ঘদিন চাকরি করেও এই শূন্য ধাপে যেতে পারলেন না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় তার পর্যায়ের অনেক শিক্ষক আছেন। কিন্তু এক অদ্ভুত নিয়মের জাঁতাকলে শুধু তারাই নন; ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ও কৃষিবিদদেরও এই ধাপে ওঠার পথ রুদ্ধ।

শিক্ষকরা শুধু বেতন স্কেলেই নয়, বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সেও। আমরা মুখে বলি, শিক্ষকরা সম্মানিত ব্যক্তি; কিন্তু রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদানের সময় সিলেকশন গ্রেডের প্রফেসরদের অবস্থান রাখি সচিবদের তিন ধাপ নিচে। শুধু তাই নয়, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে জাতীয় অধ্যাপক ও ভাইস চ্যান্সেলরদের রাখা হয়েছে সচিবদের একধাপ নিচে। কয়েক মাস আগে দেখলাম- জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রেড কার্পেটে হাঁটছেন। প্রধানমন্ত্রী তার শিক্ষককের জন্য যা করেছেন, সেটি একটি সুন্দর উদাহরণমাত্র; কিন্তু এটি কোনো বাস্তবতা নয়। রূঢ় বাস্তবতা হচ্ছে, শিক্ষকদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রেড কার্পেটে হাঁটার মতো উঁচু রাষ্ট্রীয় মর্যাদা নেই।

অফিস, পিয়ন, টেলিফোন এবং অন্যান্য সুবিধা

সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত প্রফেসরদের সমমর্যাদার সরকারি কর্মকর্তারা কম্পিউটার ও এসিসহ সুসজ্জিত অফিস, পিয়ন, সেক্রেটারি, অফিস ও বাসায় টেলিফোন, ড্রাইভার, বাবুর্চি ও ক্ষেত্রবিশেষে নিরাপত্তা প্রহরীসহ এত সুবিধা পান, যা সাধারণ মানুষ জানে না। প্রফেসররা শুধু কয়েকটি চেয়ার-টেবিল ও একটি টেলিফোনসহ (বিল ৫০০-৮০০ টাকা) অফিস সুবিধা পান। হ্যাঁ, সরকারি অফিসের তুলনায় শিক্ষকদের সুবিধা কম হলেও চলে।

কিন্তু প্রফেসররাও মানুষ। তাদেরও গরম লাগে, পাঠদান, গবেষণা ও দৈনন্দিন নানা কাজে সহায়তার জন্য লোক প্রয়োজন হয়, খেতে হয়, টেলিফোন ও নিরাপত্তারও প্রয়োজন হয়। এসব ক্ষেত্রে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় নির্বিকার। প্রফেসররা যত ডিগ্রিধারী বা বয়স্কই হোন না কেন, তাদের জন্য এসব সুবিধা সুদূরপরাহত। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য পদের শিক্ষকদের অবস্থা আরও শোচনীয়। তাদের পিয়ন, টেলিফোন, এসি ও কম্পিউটার দূরের কথা, অনেকের বসার জায়গা পর্যন্ত নেই।

ট্রেনিং ও উচ্চশিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই মনে হয় সরকারের একমাত্র চাকরিজীবী, যাদের পদোন্নতির জন্য উচ্চতর ডিগ্রি অনেকটা বাধ্যতামূলক। উন্নয়নশীল দেশে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষার জন্য সহায়তা করে। দুর্ভাগ্যজনক, এ ধরনের সহায়তা দূরের কথা; বরং বিভিন্ন দেশ থেকে প্রাপ্ত সরকারি স্কলারশিপগুলোও এখন শিক্ষকদের প্রদান না করে ভাগ-বাটোয়ারা করে দেয়া হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তাদের মাঝে।

শিক্ষকরা কঠোর পরিশ্রম করে স্কলারশিপ পান। কিন্তু বহির্বিশ্বে স্কলারশিপের সংখ্যা কমে যাওয়ায় অনেকেই আর স্কলারশিপ পাচ্ছেন না। অনেকে অর্ধেক স্কলারশিপ বা টিউশন ফি মাফ পান। কিন্তু বাকি খরচ প্রদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বা সরকার থেকে সহায়তার ব্যবস্থা নেই। ফলে অনাকাক্সিক্ষতভাবে বন্ধ হচ্ছে শিক্ষকদের উচ্চশিক্ষার পথ।

গবেষণা বরাদ্দ ও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ

শিক্ষকদের গবেষণা করতে এবং করাতে হয়। গবেষণার জন্য প্রয়োজন অর্থ, যা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বর্তমানে কিছু বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এটি অত্যন্ত সীমিত এবং নানা ধরনের শর্তের আবর্তে জর্জরিত। যন্ত্রপাতি ক্রয়ের অর্থ পাওয়া দুষ্কর। তদুপরি একটি কম্পিউটার ক্রয়ের জন্য নানা ধরনের কাগজপত্র জোগাড় করতে গলদঘর্ম হতে বা মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়। অনেক শিক্ষক ঝামেলার ভয়েই গবেষণা বরাদ্দের জন্য আবেদন করেন না।

গবেষণা বরাদ্দে প্রকাশনা ফি এবং কনফারেন্সের জন্য কোনো অর্থ নেই। কিন্তু অনেক ওপেন সোর্স জার্র্নালে প্রকাশনার জন্য শিক্ষকদের ফি দিতে হয়। এ ছাড়া অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কোলাবরেশন স্থাপনের জন্য তাদের জাতীয় বা আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেত হয়। আমি বিদেশে পিএইচডি এবং শিক্ষকতা করার সময় প্রজেক্টের অর্থে বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত কয়েকটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেছি।

কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকায় আমি আমার নিজের প্রিয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থে একটি কনফারেন্সেও অংশগ্রহণ করিনি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এ খাতে অর্থ খুবই সামান্য। ফান্ডে টাকা থাকলে অনেক ক্ষেত্রে মাত্র ত্রিশ-চল্লিশ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এ টাকা দিয়ে বিমান ও হোটেল ভাড়া এবং খাওয়া খরচ তো দূরের কথা, অনেক সময় রেজিস্ট্রেশন ফিও পরিশোধ করা যায় না।

সরকারি গাড়ি ও গৃহঋণ সুবিধা

সরকারি প্রথম ধাপের কর্মকর্তাদের প্রায় কোটি টাকা মূল্যের গাড়ি ছাড়াও তাদের সংশ্লিষ্ট দফতরে আছে অনেক গাড়ি। অনেক সরকারি কর্মকর্তা এখন গাড়ি সুবিধা পান। সচিবালয়, পুলিশ সদর দফতর, সেনানিবাস, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য সরকারি দফতরে আজ সুন্দর সুন্দর গাড়ির ছড়াছড়ি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সরকারি গাড়ি পান শুধু ভাইস চ্যান্সেলররা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও সরকারি প্রতিষ্ঠান। এখানে ডিন, সভাপতি, প্রভোস্ট, প্রক্টর, বিভিন্ন ইন্সটিটিউটের ডিরেক্টর ও প্রফেসররা আছেন। তাদেরও প্রতিদিন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হয়। কিন্তু তাদের জন্য কোনো সরকারি গাড়ির সুবিধা নেই। শিক্ষকদের নিজস্ব ব্যবস্থায় বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু লক্কড়-ঝক্কড় বাসে ভাড়া দিয়ে গাদাগাদি করে যাতায়াত করতে হয়।

সম্প্রতি সরকার পঞ্চম গ্রেডের প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের জন্যও বিনা সুদে গাড়ি এবং সেই অর্থ পরিশোধের জন্য মাসিক টাকারও ব্যবস্থা করেছেন। দুর্ভাগ্যজনক, শিক্ষকদের গাড়ির জন্য সরকারের এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেই। অবস্থা এমন- আপনি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বা সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর আরেফিন সিদ্দিক বা প্রফেসর ইমেরিটাস অরুণ কুমার বসাক বা প্রফেসর জাফর ইকবাল যেই হোন না কেন- আপনারা আসলে শিক্ষক বা মাস্টার। আপনারা প্রাধিকারপ্রাপ্তির যোগ্য নন। আপনারা এমন একটি শ্রেণী, যাদের জন্য সরকারি গাড়ির প্রয়োজন নেই। আপনাদের সরকারি গাড়িতে ওঠার যোগ্যতা নেই!

কয়েকদিন আগে সরকার সব সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ৫ শতাংশ সুদে গৃহঋণের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত, তাই শিক্ষকরা গৃহঋণ পাবেন না। সরকারের এরকম একটি সিদ্ধান্ত শিক্ষকদের হতবাক করেছে। এতদিন শিক্ষকরা জানত তাদের অফিস, পিয়ন, এসি, ড্রাইভার, পাচক, গাড়ি এসব কিছুর প্রয়োজন নেই। এখন তারা নতুন করে জানল- আসলে তাদের গৃহেরও প্রয়োজন নেই। শিক্ষকরা বিস্মিত! কী আশ্চর্য শিক্ষকদের প্রতি রাষ্ট্রের এই অনুগ্রহ!

মূলত ভালো ছাত্রছাত্রীরাই অনেক স্বপ্ন নিয়ে শিক্ষক হন। অনেকে বিদেশে শিক্ষকতা-চাকরি, দেশে বিসিএসসহ অন্যান্য আকর্ষণীয় চাকরি ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন। কিন্তু এই লোকগুলোর স্বপ্ন আজ চূর্ণবিচূর্ণ। তারা চোখের সামনে দেখছেন কেমন করে রাষ্ট্রের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই পেশাটিকে শৃঙ্খলিত ও বিপর্যস্ত করে তুলছে। ভালো ছাত্রছাত্রীরা আজ বিভ্রান্ত; তারা শিক্ষকতায় আসবে, নাকি সাধারণ জ্ঞানের ওপর পড়াশোনা করে বিসিএস দেবে। অনেকভাবেই আজ রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারের কাছেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাথা নিচু করার ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করা হচ্ছে। সেই মাথা নিচু শিক্ষকদেরই বলা হচ্ছে মাথা উঁচু জাতি তৈরি করতে। মাথা নিচু শিক্ষক দিয়ে কখনও মাথা উঁচু জাতি গড়া যায় না। মাথা নিচু শিক্ষক দিয়ে সার্টিফিকেটধারী তৈরি করা সম্ভব, কিন্তু সুশিক্ষিত মাথা উঁচু জাতি নয়।

জাতি ও সরকারের কাছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশ্ন- তারা আসলে কারা? তারা কি সরকারি, না বেসরকারি চাকরি করেন? বিশ্বে অনেক স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করেছিলেন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মুক্ত রাখতে। এ স্বায়ত্তশাসন তিনি দিয়েছিলেন শিক্ষকদের ভালোবেসে; কোনোভাবেই তাদের সরকারি সুবিধাবঞ্চিত করার জন্য নয়। কিন্তু নিয়তির কী নির্মম পরিহাস- এই স্বায়ত্তশাসনের দোহাই দিয়েই শিক্ষকদের করা হচ্ছে সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত। অথচ শিক্ষকদের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের সময় বলা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয় স্বায়ত্তশাসিত হলেও এগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠান।

শিক্ষকদের দুঃখ হচ্ছে, তারা বাণিজ্যিক পণ্য যেমন- তেল ও সাবান তৈরি করে না; যা বিক্রি করে তারা তাদের প্রয়োজন মেটাবে এবং সরকারকে বোঝাবে যে, বিশ্ববিদ্যালয় একটি উৎপাদনশীল খাত। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তৈরি হয় শিক্ষিত মানুষ, তাদের বিক্রি করা লাগে না। তারা নিজেরাই সমাজে বিভিন্ন স্তরে জায়গা করে নেয় এবং তাদের কেউ কেউ সরকারের নীতিনির্ধারণী মহলে কাজ করার সুযোগ পায়। ছাত্রছাত্রীদের সাফল্যে শিক্ষকরা অত্যন্ত খুশি হয়। অনেকে গর্বভরে বলে, আমার ছাত্রছাত্রী এই ভালো স্থানে আছে। কিন্তু শিক্ষকদের সেই আনন্দ ধূলিসাৎ হয়ে যায়, তারা যখন বুঝতে ও জানতে পারেন তাদেরই কিছু সাবেক ছাত্রছাত্রী নিজ স্বার্থে শিক্ষকদের স্বার্থের বিরোধিতা করছে। সরকার তাদের দ্বারাই বিভ্রান্ত হয়ে নিরস্ত্র ও ক্ষমতাহীন এই মানুষগুলোকে অবহেলা ও বঞ্চিত করছে। এ বেদনা সত্যিই মর্মান্তিক!

রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গের সুবিধাদির মধ্যে কিছু পার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু এটি এমন হওয়া উচিত নয় যাতে আর্থিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এক বিরাট ব্যবধান সৃষ্টি হয়। এ অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, অনুগ্রহপূর্বক আপনার স্যারকেই জিজ্ঞেস করুন- তিনি প্রফেসর থাকাকালীন কী সুবিধা পেয়েছেন। এখন জাতীয় অধ্যাপক হওয়ার পরই বা কী সুবিধা পাচ্ছেন। সবচেয়ে ভালো হয়, আপনি যদি আপনার কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসানের প্রাপ্ত সুবিধাদির সঙ্গে একই ব্যাচে (৮৫ ব্যাচ) বিসিএস পরীক্ষায় ৭ম স্থান অধিকারী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. চৌধুরী মো. জাকারিয়ার প্রাপ্ত সুবিধাদির তুলনা করেন।

জাকারিয়া স্যার ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কয়েক বছর চাকরি করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন। স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করে আজ তিনি প্রফেসর। একবার তাকে জিজ্ঞেস করে দেখুন তো, তিনি কি আরেকবার সুযোগ পেলে প্রশাসন ক্যাডারের চাকরি ছেড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করবেন? তার স্ত্রীও কি তাকে তা করতে দেবেন? শুধু জাকারিয়া স্যার নন, অনেকেই এই ভুল করে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছেন। এরকম ভুল যাতে ভবিষ্যতে কেউ না করে, সে জন্যই বুঝি শিক্ষকদের করা হচ্ছে অবহেলিত ও বঞ্চিত। অনুগ্রহপূর্বক এ অবস্থার একটি সমাধান করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে মেধাহীন করার পথ বন্ধ করুন।

লেখক : অধ্যাপক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

 

সৌজন্যে: যুগান্তর


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035860538482666