মেয়ের সঙ্গে পরীক্ষায় বসবেন মা

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি |

অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে হয়ে যায় শেফালী আক্তারের। কিন্তু লেখাপড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ থেকে যায় তাঁর। এরপর কেটে যায় ২২টি বছর। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর স্বামী মারা যান। বড় মেয়ে সাবরিনা তখন অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। স্বামীর মৃত্যুর পর মেয়ের দায়িত্ব তাঁর ঘাড়ে বর্তায়। 

মেয়েকে বিদ্যালয়ে ও শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়াতে তিনি সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন। একপর্যায়ে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে মেয়ের সঙ্গে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ইচ্ছার জোরেই এবার এসএসসি ভকেশনাল নবম শ্রেণির বোর্ড ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছেন তিনি।

  

এই অধ্যবসায়ী নারী শেফালী আক্তার ৩৫ বছর বয়সে মেয়ের সঙ্গে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। মেয়ের নাম সাবরিনা। তাঁরা দুজনই টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার ভুয়াইদ টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট অ্যান্ড বিএম কলেজের ছাত্রী। একই প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁরা সখীপুরের সূর্য তরুণ শিক্ষাঙ্গন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। শেফালী সখীপুর উপজেলার বড়চওনা বিন্নাখাইরা গ্রামের মৃত আবদুস সবুর মিয়ার স্ত্রী।

জানা যায়, বিরোধী দলের অবরোধ কর্মসূচির কারণে ১ নভেম্বর সারা দেশে পরীক্ষা শুরু হয়নি। মঙ্গলবার ছিল গণিত পরীক্ষা। ১ নভেম্বরের বাংলা পরীক্ষা আগামী শনিবার অনুষ্ঠিত হবে।  

শেফালী আক্তার বলেন, ‘পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ থাকলেও অষ্টম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় আমার বিয়ে হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় স্বামী মারা যাওয়ার পর মেয়েকে বিদ্যালয়ে ও প্রাইভেট পড়াতে আমাকেই সঙ্গে যেতে হয়। পরে চিন্তা করি, মেয়ের সঙ্গে আমিও পড়াশোনা করব। নবম শ্রেণিতে মেয়ের সঙ্গে আমিও ভর্তি হই। ওই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ মেহেদী হাসান আমাকে পড়ার জন্য উৎসাহ দেন। একই কেন্দ্রে ও একই কক্ষে মেয়ের পেছনের বেঞ্চে বসে পরীক্ষা দিচ্ছি। আমার পরীক্ষাও ভালো হচ্ছে।’

পড়ালেখা করে অনেক দূরে এগিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে শেফালী আক্তার জানান, তাঁর সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেওয়ার ইচ্ছা আছে। যাতে সমাজে আর দশজনের মতো নিজেকে একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে পারেন। তিনি বাল্যবিবাহের শিকার হওয়ায় সময়মতো পড়তে পারেননি। কিন্তু মেয়েকে পড়াশোনা করাবেন।

মায়ের পড়ালেখার প্রতি আগ্রহের বিষয়ে মেয়ে সাবরিনা আক্তার বলেন, ‘ভাবতে খুব ভালো লাগছে, আমরা মা-মেয়ে একই সঙ্গে এসএসসি ভকেশনাল নবম শ্রেণির ফাইনাল পরীক্ষা দিচ্ছি। এমন সুযোগ আর কজনার ভাগ্যে আসে। মা শুধু আমার মা-ই নন, তিনি ভালো একজন বন্ধুও।’

ভুয়াইদ টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট অ্যান্ড বিএম কলেজের অধ্যক্ষ মেহেদী হাসান বলেন, ইচ্ছা থাকলে লেখাপড়ায় বয়স কোনো বাধা নয়। শেফালী আক্তারের এমন উদ্যোগ অনেককে অনুপ্রাণিত করবে। দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে সমাজে। তাঁরা মা-মেয়ের সাফল্য কামনা করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সরকার প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ - dainik shiksha সরকার প্রতিটি নাগরিকের অধিকার রক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ কারিগরির এসএসসি ও দাখিলের রেজিস্ট্রেশনের সময় ফের বাড়লো - dainik shiksha কারিগরির এসএসসি ও দাখিলের রেজিস্ট্রেশনের সময় ফের বাড়লো প্রাথমিকের ডিজির অপসারণ ছাড়া কাজে ফিরবেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা - dainik shiksha প্রাথমিকের ডিজির অপসারণ ছাড়া কাজে ফিরবেন না কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘তুমি কে আমি কে? আদুভাই আদুভাই’ স্লোগান শেকৃবি শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ‘তুমি কে আমি কে? আদুভাই আদুভাই’ স্লোগান শেকৃবি শিক্ষার্থীদের মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে একগুচ্ছ প্রস্তাব - dainik shiksha মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে একগুচ্ছ প্রস্তাব ঢাবির নতুন প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ - dainik shiksha ঢাবির নতুন প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমদ কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003715991973877