মেসের শিক্ষার্থীরা পিষ্ট সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজিতে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শিক্ষানগরী হিসেবে খ্যাত ময়মনসিংহের পাড়া-মহল্লায় মেসে বসবাস প্রায় অর্ধলাখ শিক্ষার্থীর। কিন্তু ওই শিক্ষার্থীদের অনেকেই নানামুখী হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার। এমনকি শিক্ষার্থীদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনাও ঘটছে। অপহরণ ও নির্যাতনের দুটি ঘটনায় সমপ্রতি মামলাও হয়েছে কোতোয়ালি থানায়। তবে সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলেছে, দুটি ঘটনায় মামলা হলেও অসংখ্য দুঃখজনক ঘটনা আড়ালে থেকে যাচ্ছে। সোমবার (১৩ মে) দৈনিক কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন  নিয়ামুল কবীর সজল।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ শহরে আনন্দমোহন কলেজসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কলেজে লেখাপড়া করে ৫০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। অল্প কিছু শিক্ষার্থী ছাড়া বাকি সবাই ময়মনসিংহের বিভিন্ন উপজেলা ও আশপাশের জেলা থেকে আগত। শিক্ষার প্রয়োজনে পরিবার-পরিজন ছেড়ে তারা এখন ময়মনসিংহ শহরের বাসিন্দা। তাদের বেশির ভাগই থাকে বিভিন্ন মেসে। তারা নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও মাদকসেবীদের হাতে।

শহরে মেসে থাকা বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, তারা এ শহরে ভালো নেই। লেখাপড়া করতে এলেও তাদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়েই অনেক সময় টানাটানি চলে। আতঙ্কে তারা কাউকে কিছু বলতেও পারে না। ওই শিক্ষার্থীরা বলেছে, প্রায় সব সন্ত্রাসীই এলাকায় চিন্তিত। কেউই এদের বিরুদ্ধে কিছু বলে না। আগে মেসের মালিকরা তাদের রক্ষা করতেন। এখন অনেক মেসের মালিকও সন্ত্রাসীদের নির্যাতনের শিকার। কলেজের শিক্ষকরাও তাদের কষ্টের কথা জানতে চান না।

আনন্দমোহন কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক জিএস, বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী আজাদ জাহান শামীম বলেন, ‘মেসের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে এমন নির্যাতনের শিকার। ভয়ে এরা কথা বলে না। অনেক সময় টাকা-পয়সা দিয়ে দেয়। এ চক্রটির বিরুদ্ধে জোরালো পুলিশি অভিযান প্রয়োজন।’

জেলা নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমীন কালাম বলেন, ‘এ শহরে মেসের শিক্ষার্থীরা নানাভাবে নির্যাতিত। ওই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে আরো তত্পর হতে হবে।’

শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজের সহকারী অধ্যাপক মফিজুর নূর খোকা বলেন, শিক্ষার্থীদের নির্যাতিত হওয়ার অজস্র ঘটনা আছে। তিনি নিজে এ পর্যন্ত অন্তত ২০ বার স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে গিয়ে এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়ে এসেছেন।  কমার্স কলেজের অধ্যক্ষ এখলাছ উদ্দিন বলেন, মেসে থাকা শিক্ষার্থীরা সমস্যায় পড়লে অনেক সময় এলাকার জনপ্রতিনিধি বা অভিভাবকদের নিয়ে এসে সমস্যার সমাধান করে। কেউ কেউ বাড়িতেও চলে যায়।

ময়মনসিংহ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ জাকির হোসেন বলেন, তাঁর কলেজের শিক্ষার্থীরাও আশপাশের কয়েকটি ছেলের দ্বারা নির্যাতিত হতো। তিনি এলাকাবাসীকে নিয়ে ওই সমস্যার সমাধান করেন।

আনন্দমোহন কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর নুরুল আফছার বলেন, শিক্ষার্থীরা কখনো তাঁদের কাছে সমস্যার কথা জানায় না। জানালে তাঁরা ভূমিকা রাখতে পারতেন।

কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খন্দকার শাকের আহমেদ বলেন, দুটি ঘটনায় মামলা হয়েছে। কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছে। পুলিশ পুরো চক্রটিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে।

জানা যায়, প্রথমত ওই শিক্ষার্থীরা নির্যাতন, হয়রানি ও চাঁদাবাজির শিকার হয় এলাকারই চিহ্নিত বখাটে, সন্ত্রাসী ও মাদকাসক্তদের দ্বারা। বখাটে-সন্ত্রাসীরা যখন-তখন মেসগুলোতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে চাঁদা দাবি করে। এরা অনেক সময় মেসগুলোতে গিয়ে মাদক সেবন করে। শিক্ষার্থীরা ভয়ে কিছু বলতে পারে না। অনেক মেসে গিয়ে মাদকাসক্তরা শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। বিশেষ করে কলেজ রোড, কাচিঝুলি, সানকিপাড়া, আকুয়া, গোহাইলকান্দি এলাকায় মেসের শিক্ষার্থীরা দুঃসহ যন্ত্রণায় আছে।

পথেঘাটে ছিনতাইকারীদের টার্গেট হয় মেসের শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, ওই শিক্ষার্থীরা প্রাইভেট পড়তে অথবা পার্কে বেড়াতে গেলে ছিনতাইকারীরা এদের টার্গেট করে। ওই ছিনতাইকারীরা এলাকায় পরিচিত হলেও ভয়ে মেসের শিক্ষার্থীরা কাউকে কিছু বলে না।

চাঁদাবাজি-ছিনতাইয়ের সঙ্গে সম্প্রতি যোগ হয়েছে শিক্ষার্থীদের অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা। জানা যায়, একটি চক্র মেসের শিক্ষার্থীদের অপহরণ করে তাদের বাড়িতে খবর পাঠায় টাকা পাঠানোর জন্য। টাকা আদায়ের জন্য শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করে ভিডিওচিত্র পাঠানো হয়। এ ছাড়া ইয়াবা দিয়ে শিক্ষার্থীদের ফাঁসানো এবং টাকা আদায়ের ঘটনাও আছে।

কোতোয়ালি থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ১ মে থানায় একটি মামলা হয়। এজাহার থেকে জানা যায়, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থীকে অপহরণ করে একটি চক্র। ওই শিক্ষার্থীর বাড়ি শেরপুর জেলায়। সন্ত্রাসীচক্রটি শিক্ষার্থীর পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে ৩০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। ওই ঘটনায় দুজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আসামিরা হলো নেত্রকোনা সদরের শহীদ মিয়ার ছেলে মাহবুব আলম এবং তারাকান্দা এলাকার পলাশ।

গত ৯ মে কোতোয়ালি থানায় হওয়া আরেক মামলা সূত্রে জানা যায়, আনন্দমোহন কলেজের বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে নির্যাতন করে সন্ত্রাসীরা। এরা শিক্ষার্থীর পরিবারের কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করে। মামলা হওয়ার পর পুলিশ চক্রটি সম্পর্কে জানতে পারে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই চক্রের সঙ্গে জড়িত আনন্দমোহন কলেজেরই ইংরেজি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইমরুল কায়েস। তার বাড়ি ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ এলাকায়। এ ছাড়া আছে নেত্রকোনা জেলার লিটন, কোতোয়ালি থানার পাপন, ঘাটাইল কলেজের ছাত্র মাহফুজ সরকার।

মাহফুজের বাড়ি ময়মনসিংহের তারাকান্দা এলাকায়। ওই চারজনের মধ্যে ইমরুল ও মাহফুজকে আটক করে এদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ভয়ংকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ। জানা যায়, এরা শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে অপহরণ করে। এরপর নির্যাতন করে সেই ভিডিওচিত্র বাড়িতে পাঠায়। এ ছাড়া ইয়াবা দিয়েও ফাঁসানো হয় শিক্ষার্থীদের।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028510093688965