মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে জাবি ছাত্রলীগ

জাবি প্রতিনিধি |

মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে চলছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাস ছেড়েছেন প্রথম সারির অধিকাংশ নেতা। আর যারা রাজনীতিতে সক্রিয় তাদের ছাত্রত্ব নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। এ ছাড়া বার বার আশ্বাস দিয়েও হল কমিটি না দেয়ায় হতাশ কর্মীরা। এতে তৈরি হচ্ছে গ্রুপিং, বাড়ছে অভ্যন্তরীণ কোন্দল। ফলে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে কর্মীরা। যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না নেতাকর্মীদের।

২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর মো. জুয়েল রানাকে সভাপতি ও এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চলকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছরের জন্য জাবি ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ফলে এই কমিটির বর্তমান বয়স দুই বছর সাত মাস। কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন কমিটির বিষয়ে কেন্দ্রের কোনো তৎপরতাও লক্ষ করা যায়নি। ফলে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে জাবি শাখা ছাত্রলীগ।

এদিকে কমিটি ঘোষণার চার মাস পর ২১৪ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। তবে সেই কমিটির প্রায় শতাধিক নেতাই বর্তমানে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। এদের মধ্যে অর্ধশতাধিক নেতা ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। আর অর্ধশতাধিক নেতার ছাত্রত্ব নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, শাখা ছাত্রলীগের ৫০ জন নেতা ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। ছাত্রত্ব নেই ৬৮ জনের। এদের মধ্যে সহ-সভাপতি ১৩জন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের ১১ জনের মধ্যে ছয়জন ও তিনজন সাংগঠনিক সম্পাদক। এছাড়াও কমিটিতে বিবাহিত রয়েছেন একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তিন সাংগঠনিক সম্পাদকসহ মোট ১০ জন।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে কমিটি থাকার ফলে অধিকাংশ নেতাই তাদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। ফলে সাংগঠনিক দায়বদ্ধতা কমে গেছে। এ অবস্থায় দিনকে দিন বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ছে শাখা ছাত্রলীগ।’

এদিকে হল ইউনিটকে ক্যাম্পাস রাজনীতির প্রাণ বলা হলেও জাবিতে পাঁচ বছর থেকে নেই কোনো হলের কমিটি। কেন্দ্রীয় সভাপতির নির্দেশের আট মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি শাখা ছাত্রলীগ। ফলে হলের কর্মীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হচ্ছে। রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে হলগুলো। ফলে নিয়মিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নেতাদের।

হল ছাত্রলীগের এক কর্মী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছে, ‘পাঁচটি ব্যাচকে কর্মী বানিয়ে বসিয়ে রেখেছেন। সাংগঠনিক নাম-পরিচয় নেই কারো। আছে শুধু ব্যক্তিগত আত্মসম্মানবোধটুকু। সেটা হারানোর ভয় না থাকলে নিজের মেরুদণ্ডের উপরই সন্দেহ চলে আসবে।’

এ ছাড়া হল কমিটি না থাকায় সভাপতি এবং সম্পাদককে উপেক্ষা করে আলাদাভাবে হলে রাজনীতি শুরু করেছে নেতা-কর্মীরা। সাধারণ সম্পাদক গ্রুপ থেকে সরে গিয়ে নেতাকর্মীরা আলাদা গ্রুপ করে রাজনীতি করছেন। ফলে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সম্পাদকের সঙ্গে না গিয়ে নিজেরাই আলাদাভাবে অংশগ্রহণ করছে ছাত্রলীগের একাংশ। এই গ্রুপিংয়ের ফলে বাড়ছে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। যা রূপ নিচ্ছে সংঘর্ষে।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘হল কমিটি না থাকায় হলগুলো সুসংগঠিত থাকছে না। আর কমিটি না থাকায় কারো মধ্যে দায়িত্ববোধ নেই। ফলে কর্মসূচি বাস্তবায়নে উদাসীনতা দেখা দিচ্ছে।’

এ ছাড়াও বর্তমান কমিটি গঠনের পর থেকেই ঝিমিয়ে পড়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম। কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি ছাড়া তাদের কোনো কার্যক্রম লক্ষ করা যাচ্ছে না। কেন্দ্রের কর্মসূচি বাস্তবায়নে দেখা যায় অনীহা। যে কয়েকটি কর্মসূচি পালন করা হয় তাতেও উপস্থিতি খুবই নগণ্য।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের এক কর্মী বলেন, ‘বর্তমান কমিটি একটি কর্মী সম্মেলনও করতে পারেনি। সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করা তো অনেক পরের বিষয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. জুয়েল রানা বলেন, ‘ত্যাগী নেতাদের নিয়েই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি গঠনের সময় কোনো অছাত্রকে কমিটিতে পদ দেয়া হয়নি। তবে যাদের ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ার কোনো কারণ নেই। আর আগস্ট নাগাদ আমরা হল কমিটি দিবো।’

সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান চঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031731128692627