মে দিবসের প্রত্যাশা

মো. সিদ্দিকুর রহমান |
প্রাথমিকের দপ্তরি কাম প্রহরীদের সার্বক্ষণিক কর্মঘণ্টা, উৎসব ভাতাবিহীন জীবনের কথা মনে হলে ভেসে ওঠে আদি কৃতদাসদের করুণ স্মৃতি। স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নে দেশ ও জাতি যখন বিভোর, এ সময় প্রাথমিকের দপ্তরিদের কর্মজীবন কেনো অনেকটা কৃতদাসদের মতো? ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের পূর্বে সারা বিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির অমানবিক পরিশ্রম করতে হতো। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা। বিপরীতে মজুরি মিলতো নগণ্য। শ্রমিকেরা খুবই মানবেতর জীবনযাপন করতেন। ক্ষেত্র বিশেষ তা দাসবৃত্তির পর্যায়ে পড়তো।
 
১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দের যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে একদল শ্রমিক দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করার জন্য আন্দোলন শুরু করেন এবং তাদের এই দাবি কার্যকর করার জন্য তারা সময় বেঁধে দেয় ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ১ মে। কিন্তু কারখানার মালিকগণ এই দাবি মেনে নিলনা। ৪ মে ১৮৮৬ খ্রিষ্টাব্দে সন্ধ্যায় হালকা বৃষ্টির মধ্যে শিকাগো হে মার্কেট নামক বাণিজ্যিক এলাকায় শ্রমিককে মিছিলের উদ্দেশে জড়ো হন। তারা ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে কানাডায় অনুষ্ঠিত এক বিশাল শ্রমিক শোভাযাত্রার সাফল্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে এটি করেছিলেন। আগস্ট স্পিচ নামে এক নেতা জড়ো হওয়া শ্রমিকদের উদ্দেশে কিছু কথা বলেছিলেন। হঠাৎ দূরে দাঁড়ানো পুলিশ দলের কাছে এক বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে একজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়। পুলিশ বাহিনী তৎক্ষণাৎ শ্রমিকদের ওপর অতর্কিতে হামলা শুরু করে, রায়টে রূপ নেয়। রায়টে ১১ জন শ্রমিক শহিদ হন। পুলিশ হত্যা মামলায় আগস্ট স্পিচসহ আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়। এক প্রহসনমূলক বিচারের পর ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দের ১১ নভেম্বর উন্মুক্ত স্থানে ৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। লুইস লিং নামে একজন একদিন পূর্বেই কারাভ্যন্তরে আত্মহত্যা করেন। অন্য একজনের পনের বছরের কারাদণ্ড হয়। ফাঁসির মঞ্চে আরোহণের পূর্বে আগস্ট বলেছিলেন, আমাদের এই নিঃশব্দতা, তোমাদের আওয়াজ অপেক্ষা অধিক শক্তিশালী হবে।
 
২৬ জুন ১৮৯০ ইলিনয়ের গভর্ণর অভিযুক্ত ৮ জনকেই নিরঅপরাধ বলে ঘোষণা দেন এবং রায়টের হুকুম দেয়া পুলিশের কমান্ডারকে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করা হয়। আর অজ্ঞাত সেই বোমা বিস্ফোরণকারীর পরিচয় কখোনই প্রকাশ পায়নি। শেষ পর্যন্ত শ্রমিকদের দৈনিক ৮ ঘণ্টা কাজ করার দাবি অফিসিয়াল স্বীকৃতি পায়। আর পহেলা মে বা মে দিবস প্রতিষ্ঠা পায় শ্রমিকদের দাবি আদায়ের দিন হিসেবে। পৃথিবীব্যাপী আজও তা পালিত হয়। শ্রমজীবী মানুষের উক্ত গৌরবময় অধ্যায়কে স্মরণ করে ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে থেকে প্রতিবছর ১ মে বিশ্বব্যাপী পালন হয়ে আসছে ‘মে দিবস’ বা ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’। পহেলা মে সেই আন্দোলনের কথাই আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়। 
 
১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ জুলাই অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট কংগ্রেসে ১ মে শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং তখন থেকে অনেক দেশে দিনটি শ্রমিক শ্রেণি কর্তৃক উদযাপিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক শাখা হিসাবে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের অধিকার স্বীকৃতি লাভ করে এবং সব দেশে শিল্প মালিক ও শ্রমিকদের তা মেনে চলার আহ্বান জানায়। এভাবে শ্রমিক ও মালিকদের অধিকার সংরক্ষণ করে। বাংলাদেশ আইএলও কর্তৃক প্রণীত নীতিমালার স্বাক্ষরকারী দেশ। বাংলাদেশে মে দিবসে সরকারি ছুটি পালিত হয়। এখানে বেশ উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে মে দিবস পালিত হয়। বাংলাদেশ আইএলও কর্তৃক নীতিমালা স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে দীর্ঘ এক যুগ যাবৎ প্রাথমিকের দপ্তরিদের সার্বক্ষণিক কর্মে নিয়োজিত করে যাচ্ছেন। সার্বক্ষণিক কর্মঘণ্টা কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে কাম্য হতে পারে না। তাদের প্রতিবছর ঈদ উৎসব বোনাস দেয়া হলেও গত ঈদুল ফিতরে দেয়া হয়নি। আর্ন্তজাতিক মে দিবসের প্রত্যাশা প্রাথমিকের দপ্তরীদের কর্মঘণ্টা হোক বিদ্যালয় চলাকালীন। তাদের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা আইএলও নীতিমালার লঙ্ঘন। সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি অনুধাবন করে ব্যবস্থা নেবেন এ প্রত্যাশায়। 
 
লেখক: সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ

পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা - dainik shiksha পাঠ্যবইয়ের কাগজের বার্স্টিং ফ্যাক্টর কমানোর ধান্দায় মুদ্রাকররা বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকদের তথ্য আহ্বান কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha শিক্ষক শূন্যপদের তথ্য সংগ্রহে ফের ই-রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম - dainik shiksha ববি উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় - dainik shiksha এসব কিন্তু শিক্ষার্থীদের কাজ নয় প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো - dainik shiksha প্রাথমিকের দুই ফুটবল টুর্নামেন্টের নাম বদলে গেলো please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0038590431213379