ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে সময় নিলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ছাত্রলীগের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনে আরও কিছুদিন সময় নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি জানিয়েছেন, অধিক সংখ্যক পদপ্রত্যাশী থাকায় পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই-বাছাই ও উপযুক্ত নেতৃত্ব বেছে নিতে কিছুটা সময় লাগবে। 

গতকাল বুধবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বৈঠককালে শেখ হাসিনা এমন কথা জানান। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দলের পক্ষে প্রচারে নামার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের ব্যাপক উন্নয়ন করেছে। তবে উন্নয়ন করেছে বলে ঘরে বসে থাকলেই হবে না। মানুষের কাছে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে হবে। দল ও সরকারের পক্ষে জনসমর্থন বাড়াতে হবে। দলের বিজয় নিশ্চিত করতে ছাত্রলীগকেও মাঠে নামতে হবে। 

বৈঠকে সংগঠনের শীর্ষ দুই পদ- সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ পেতে ইচ্ছুক ১৬৯ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন। নেতৃত্বে আসতে ইচ্ছুক নেতাদের মোট ৩২৩টি মনোয়ন ফরম জমা পড়েছিল। অনেকে দুই পদেই ফরম জমা দেওয়ার কারণে মোট পদপ্রত্যাশীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১৬৯ জনে। তাদের মধ্যে শতাধিক নেতা বক্তব্য রাখতে গিয়ে সংগঠনের প্রতি আবেগ-অনুভূতির পাশাপাশি ক্ষোভ ও কষ্টের কথাও তুলে ধরেন। শীর্ষ পদে আসার পক্ষে নিজেদের যোগ্যতার বিষয়েও কথা বলেন তারা। তাদের বক্তব্যে কোটা সংস্কারের দাবিতে সাম্প্রতিক আন্দোলনের প্রসঙ্গও উঠে আসে। 

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে ছিলেন ছাত্রলীগের বিদায়ী সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ ও বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। তবে তারা কোনো বক্তব্য রাখার সুযোগ পাননি। আওয়ামী লীগের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। 

বৈঠক সূত্র জানায়, দীর্ঘ চার ঘণ্টার বৈঠকের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী নেতাদের কাছে জানতে চান তারা নিজেরাই নিজেদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বেছে নিতে পারবেন কি-না। জবাবে নেতারা প্রধানমন্ত্রীকেই নেতৃত্ব ঠিক করে দেওয়ার অনুরোধ জানান। এত অধিক সংখ্যক প্রার্থী হওয়ার কারণও জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। এরপরই বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পান পদপ্রত্যাশী নেতারা। 

বৈঠকে অংশ নেওয়া পদপ্রত্যাশী কয়েকজন অভিযোগ করেন, বিদায়ী কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশিরভাগই ঠিকমত সংগঠন পরিচালনাসহ সরকার ও আওয়ামী লীগের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আবার পদধারী কেন্দ্রীয় নেতারাও অবমূল্যায়নের শিকার হওয়ায় নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন। এই কারণেই তারা আগামী দিনের শীর্ষ নেতৃত্বে আসতে পদপ্রত্যাশী হয়েছেন। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী নিজেই ছাত্রলীগের দেখভাল করছেন বিধায় তার নেতৃত্বে কাজ করার আকাঙ্ক্ষা নিয়েও পদপ্রত্যাশী হয়েছেন বলেও জানান কেউ কেউ। আগামী দিনে পদপ্রত্যাশীর সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও মত দেন তারা। 

পদপ্রত্যাশীর মধ্যে কয়েকজন এ সময় ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নির্বাচনে অতীতের সিন্ডিকেটের ভূমিকার সমালোচনার পাশাপাশি এদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর অবস্থান অব্যাহত রাখার অনুরোধও জানান। সেই সঙ্গে নতুন নেতৃত্ব বেছে নেওয়ার বেলায় প্রার্থীদের পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ডের পাশাপাশি ব্যক্তিগত যোগ্যতা ও দক্ষতার দিকে নজর দেওয়ার আহ্বানও জানান তারা। 

সাম্প্রতিক কোটাবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে একজন পদপ্রত্যাশী নেতা বলেন, শুরুর দিকে এই আন্দোলনকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বলে মনে হচ্ছিল। এই কারণে ছাত্রলীগ সরাসরি এর বিরোধিতায় নামেনি। কেননা ছাত্রলীগ কখনই সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে থাকার পক্ষে নয়। পরে এই আন্দোলনের পেছনে শিবিরসহ স্বাধীনতাবিরোধী পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হওয়ার পর ছাত্রলীগ মাঠে নেমেছে।

নেতাদের বক্তব্য শুনে প্রধানমন্ত্রী তার সমাপনী বক্তব্যে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে দেশের স্বাধীনতা অর্জন ও সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ভালোভাবে লেখাপড়া ও উচ্চশিক্ষায় নিজেদের গড়ে তোলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের আদর্শে নেতাকর্মীদের আগামীদিনের দেশগড়ার সংগ্রামের উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ছাত্রলীগ একটি সুশৃঙ্খল সংগঠন। সবাইকে শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। আর নতুন নেতৃত্বে যারাই আসবেন, তাদের নেতৃত্বে চলতে হবে।

গত ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলন শীর্ষ দুই পদে নতুন নেতা নির্বাচন করা ছাড়াই শেষ হয়েছে। সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশনেই কমিটি ঘোষণার দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দিয়েছেন সারা দেশ থেকে আসা কাউন্সিলররা। এর আগে সংগঠনের শীর্ষ দুই পদে আসতে ইচ্ছুক ৩২৩ জন নেতা মনোয়ন ফরম ক্রয় ও জমা দিয়েছিলেন। পরে সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই শেষে ১২ মে এ তালিকাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে দেন সংগঠনের বিদায়ী নেতারা। নেতৃত্বপ্রত্যাশীদের এই তালিকা থেকে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নতুন কমিটি ঘোষণার কথা রয়েছে। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ধর্ম নিয়ে কটূক্তি: জবি ছাত্রী তিথির পাঁচ বছরের কারাদণ্ড - dainik shiksha ধর্ম নিয়ে কটূক্তি: জবি ছাত্রী তিথির পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু ২৬ মে - dainik shiksha একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন শুরু ২৬ মে ভর্তি পরামর্শ: কলেজ পছন্দ জরুরি - dainik shiksha ভর্তি পরামর্শ: কলেজ পছন্দ জরুরি মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না: হাইকোর্ট - dainik shiksha মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না: হাইকোর্ট শিক্ষা ক্যাডারের নির্বাচনী হাটে এমপিও শিক্ষকের কপাল ফাটে - dainik shiksha শিক্ষা ক্যাডারের নির্বাচনী হাটে এমপিও শিক্ষকের কপাল ফাটে অন্ত*র্বাসে লুকানো ডিভাইস, ১০ মিনিটেই শেষ পরীক্ষা - dainik shiksha অন্ত*র্বাসে লুকানো ডিভাইস, ১০ মিনিটেই শেষ পরীক্ষা ১৩ শিক্ষকের ১৪ শিক্ষার্থী, সবাই ফেল - dainik shiksha ১৩ শিক্ষকের ১৪ শিক্ষার্থী, সবাই ফেল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর - dainik shiksha এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের জন্য সুখবর please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031988620758057