বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য মোবাইলের ঋণ কীভাবে কাজ করবে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনাভাইরাসের কারণে অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন অনলাইনে ক্লাস চলছে, যেখানে অনেক অসচ্ছল শিক্ষার্থী আছেন যারা ডিজিটাল কোনো মাধ্যমের অভাবে সেই ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এবিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিয়ে জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অসচ্ছল শিক্ষার্থী যারা অনলাইন ক্লাসে যোগ দিতে পারছেন না তাদের জন্য কোনো সুদ ছাড়া একটা ঋণ দেয়া হবে মোবাইল কেনা বাবদ।

এখন প্রশ্ন এই ঋণ পাবেন কারা? কীভাবে ঠিক করা হলো তালিকা এবং কীভাবে তারা পুরো প্রক্রিয়া নিশ্চিত করবে?

মোবাইল ঋণের পরিকল্পনা যেভাবে

বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের একজন সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর বিবিসি বাংলাকে বলেন, "আমরা অনলাইনে যখন ক্লাস নেয়ার কথাবার্তা শুরু করি, পাবলিক ও প্রাইভেটে, তখন সক্ষমতার জায়গা দেখতে চাই।"

তিনি জানান এখানে সক্ষমতা বলতে বুঝানো হয়েছে মূলত কারিগরি ব্যাপার, অনলাইনে ক্লাস নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কতটা প্রস্তুত? সাথে কতটা প্রস্তুত শিক্ষার্থীরা।

এই পটভূমিতে ১৯ হাজার ছাত্র ও ৭ হাজার শিক্ষকের ওপর একটি জরিপ করা হয় ইউজিসির পক্ষ থেকে।

সেই জরিপে বেরিয়ে আসে ১৫% শিক্ষার্থীর কোন স্মার্টফোন নেই।

মাত্র ৮% শিক্ষার্থীর ল্যাপটপ আছে।

এমন অবস্থায় যখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ও মঞ্জুরি কমিশন একমত হয় যে তারা অনলাইনে ক্লাস নিতে প্রস্তুত, অনেক ছাত্র-ছাত্রীই অনলাইনে ক্লাস করার ব্যাপারে অনাগ্রহের কথা প্রকাশ করে, এর পেছনে কারণ হিসেবে দেখানো হয় স্মার্টফোন না কিনতে পারা।

আর্থিক অসচ্ছলতায় কত শতাংশ ছাত্র

অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বিবিসি বাংলাকে বলেন, যখন এই জরিপ শেষ হয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে একটা সমন্বয় তৈরি হয় তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের কাছে দাখিল করা অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের একটা তালিকা তৈরি করে।

এই তালিকায় জায়গা পেয়েছে ৪১ হাজার ৫০১ জন শিক্ষার্থী।

নানা প্রক্রিয়া অবলম্বন করে তথ্যে যাচাই বাছাই করে এই তালিকা করা হয়।

টাকা কোথা থেকে আসবে

মি. আলমগীর বিবিসি বাংলাকে বলেন, করোনাভাইরাসে শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে।

"বেশ লম্বা একটা সময় বাজেটের টাকার বেশ বড় একটা অংশ খরচ হয়নি। এই অংশের অর্থ তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে সমন্বয় করা হয়েছে।"

অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম যথাযথভাবে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই এটা করা হয়েছে।

প্রতিজনের জন্য একটি মোবাইলের জন্য বাজেট রাখা হয়েছে ৮ হাজার টাকা।

"এটা তাদের দেবে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়। অনুষদের ডিন, বিভাগের চেয়ারম্যান, রেজিস্ট্রার মিলে এটা নিশ্চিত করবেন," বলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের এই সদস্য।

"এরপর ছাত্র ক্লাসে যোগ না দিলে তখন প্রশ্ন তোলা যাবে।"

তবে এই ঋণ ফেরত নিতে কোনো তাড়াহুড়ো না করলেও টাকা ফেরত নেয়া হবে এটা নিশ্চিত করতেও পরিকল্পনা করেছে ইউজিসি। যেটা বাস্তবায়ন করবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

"টাকাটা তাদের শিক্ষাজীবনের যে কোনো একটা সময় ফেরত দেয়ার চেষ্টা করবে। এক বা দুই ইনস্টলমেন্টে, এই টাকা (ফেরত) দেয়া ছাড়া ট্রান্সক্রিপ্ট, সার্টিফিকেট, মার্কশিট এগুলো কিছুই তুলতে পারবে না শিক্ষার্থী।"

শিক্ষার্থীরা কী বলছেন

এই ইস্যুতে শিক্ষার্থীরা আসলে দ্বিধাবিভক্ত।

অনেকে বলছেন এখানে টাকার সদ্ব্যবহার কতটা হবে সেটা নিয়ে অনিশ্চিত তারা।

আবার অনেকে বলছেন, পুরো প্রক্রিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কোভিড পরিস্থিতি কতটা থাকবে সেটাও একটা প্রশ্ন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান রুহান বলেন, শিক্ষার্থীরা যেখানে থাকে সেখানকার নেটওয়ার্কের অবস্থাও একটা বড় বিষয়৷

সৈকত বলেন, "পিছিয়ে পড়া এলাকায় যারা আছে তারা খুশি। কিন্তু একটা বড় অংশ এটা মনে করে যে এই ঋণ তেলা মাথায় তেল দেওয়ার মত হবে।"

আশিক মাহমুদ বলেন, "প্রথমত ৮০০০ টাকায় স্মার্টফোন হয় না। দ্বিতীয়ত ফোনের চেয়ে ইন্টারনেট ডাটা প্যাকের খরচ অনেক বেশি। তৃতীয়ত এই ঋণ অর্ধেক শিক্ষার্থীও নিবে না।"

যদিও ৮ হাজার টাকার মধ্যে এখন বাজারে চলনসই স্মার্টফোন পাওয়া যাচ্ছে।

সিলমা সুবাহ বিবিসি বাংলাকে জানান, "অনলাইন ক্লাসের জন্য মাসে অন্তত ৩০০ টাকার ডাটা প্যাকেজ লাগবে।সেই টাকাটা অনেকের কাছেই অনেক বেশি।কারণ এইসকল শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ টিউশনি করে টাকা উপার্জন করে। এখন যেহেতু টিউশনি নাই, এই টাকাটা অনেকের জন্যই ব্যয়সাপেক্ষ।"

সূত্র: বিবিসি


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003040075302124