ছয় মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না খানসামা উপজেলার রামনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৫ শিক্ষক-কর্মচারী। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে তাদের বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে মৌখিকভাবে বিভিন্ন দপ্তরে জানালেও কোনো সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকরা। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল হাসান মাহমুদ আলী দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই এডহক কমিটির মাধ্যমে বিদ্যালয় পরিচালনা করছেন নুরবানু বেগম। এই অবস্থায় ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে প্রিজাইডিং অফিসারের স্বাক্ষর জাল করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা গোপনে তার স্বামীকে সভাপতি বানিয়ে নিয়মিত কমিটির জন্য দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে আবেদন করেন। কিন্তু অভিভাবকদের আপত্তির মুখে তা অনুমোদন হয়নি।
কেন এই কমিটি অনুমোদন হল না সেজন্য ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা তার নিকটাত্মীয় এক অভিভাবককে দিয়ে আদালতে মামলা করালে সেটি খারিজ হয়। এমন জটিলতায় বিদ্যালয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় কমিটি না থাকায় গত আগস্ট মাস থেকে তাদের বেতন বন্ধ। এ অবস্থায় ১২ জন শিক্ষক কর্মচারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাশিদা আক্তার বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন।
জানা গেছে, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও দুইজন সহকারী শিক্ষক একপক্ষে আর অপরপক্ষে ১২ জন শিক্ষক-কর্মচারী।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ও ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে এমপিওভুক্ত হয়েছে। এই বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পদ সংখ্যা ১৩ জন। বর্তমানে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে এবং কর্মচারীর পদ সংখ্যা ৫ জন। তবে ১ জন আয়া ও ১ জন নিরাপত্তা প্রহরীর পদ শূন্য রয়েছে।
অন্যদিকে, কাগজে-কলমে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী প্রায় ২১৫ জন। কিন্তু বিদ্যালয়ের এই চলমান সমস্যার কারণে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে ষষ্ঠ শ্রেণিতে মাত্র ১৮ জন ভর্তি হয়েছেন। যা গত কয়েক বছরের তুলনায় কম।
সহকারী শিক্ষক আশিষ কুমার দাস বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের উদাসীনতা ও অদক্ষতায় স্কুলটির শিক্ষা কার্যক্রম হুমকির মুখে পড়েছে। এতে অভিভাবকরা যেমন স্কুল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে তেমনি ৬ মাস বেতন বন্ধ থাকায় আমরাও চরম বিপদে পড়েছি।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা নুরবানু বেগমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল হক বলেন, এই সমস্যা নিরসনে আমরা চেষ্টা করছি। এই সপ্তাহেই বেতন শিক্ষক-কর্মচারীরা। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করতে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে বলা হয়েছে।
ইউএনও রাশিদা আক্তার জানান, শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ সত্যিই দুঃখজনক। এ পরিস্থিতি নিরসন ও দ্রুত সময়ে বেতন ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করে স্কুলের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছি।