যশোর শিক্ষা বোর্ডের ৩৮টি চেক জালিয়াতি করে ৬ কোটি সাড়ে ৭৪ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় বরখাস্ত হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম ও ঠিকাদার শরিফুল ইসলামসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে দুদক।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) বিকেলে যশোরের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদক যশোরের উপ-পরিচালক আল আমিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন—শিক্ষা বোর্ডের বরখাস্ত হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম, ঠিকাদার ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের প্রোপাইটার শরিফুল ইসলাম, উপশহর জামরুলতলা রোড এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল আলম, পোস্ট অফিসপাড়ার গাজী নূর ইসলাম, বড়বাজার জামে মসজিদ লেনের প্রত্যাশা প্রিন্টিং প্রেসের প্রোপাইটার রুপালী খাতুন, উপশহর ই-ব্লকের সহিদুল ইসলাম, রকিব মোস্তফা, শিক্ষা বোর্ডের সহকারী মূল্যায়ন অফিসার আবুল কালাম আজাদ, নিম্নমান সহকারী জুলফিকার আলী, চেক ডেসপাসকারী মিজানুর রহমান ও কবির হোসেন।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, যশোর শিক্ষা বোর্ডের প্রায় ২৫টি হিসাব সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের যশোর বিআইএসই শাখায় পরিচালিত হয়। তার মধ্যে একটি হিসাবের সিগনেটরি বোর্ডের সচিব ও চেয়ারম্যান। ২০১৭-১৮ অর্থ বছর থেকে ২০২১-২০২২ অর্থ বছর পর্যন্ত ওই হিসাব থেকে ৩৮টি চেক জালিয়াতি করে বিভিন্ন ব্যাংকে জমা দিয়ে ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে ২৩ লাখ ৫৪ হাজার ৭০৬ টাকার স্থলে মোট ৬ কোটি ৯৭ লাখ ৮৫ হাজার ৩৯৭ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
৩৮টি চেকের মধ্যে টিএ/ডিএ বিল বাবদ আসামি মো. আব্দুস সালামের নামে ইস্যুকৃত চেক ৩টি, সাধারণ বিল বাবদ সহকারী সচিব আশরাফুল ইসলামের নামে ইস্যুকৃত চেক ১টি, মিম প্রিন্টিং প্রেসের নামে ইস্যুকৃত চেক ৩টি, মেসার্স খাজা প্রিন্টিং প্রেসের নামে ইস্যুকৃত চেক ২টি, নিহার প্রিন্টিং প্রেসের নামে ইস্যুকৃত চেক ১টি, সবুজ প্রিন্টিং প্রেসের নামে ইস্যুকৃত চেক ১টি, শরিফ প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের নামে ইস্যুকৃত চেক ১টি, সানিয়া ইলেক্ট্রনিক্সের নামে ইস্যুকৃত চেক ১টি, নুর এন্টারপ্রাইজের নামে ইস্যুকৃত চেক ৮টি, প্রত্যাশা প্রিন্টিং প্রেসের নামে ইস্যুকৃত চেক ৩টি, শাহী লাল স্টোর নামে ইস্যুকৃত চেক ১টি, দেশ প্রিন্টার্স নামে ইস্যুকৃত চেক ১টি, সেকশন অফিসার মো. আবুল কালাম আজাদের নামে ইস্যুকৃত চেক ১টি, অর্পানেটের নামে ইস্যুকৃত চেক ১টি, আয়কর কর্তন বাবদ ইস্যুকৃত চেক ৪টি ও ভ্যাট কর্তন বাবদ ইস্যুকৃত চেক ৬টি।
এর মধ্যে ১৬টি চেক আসামি আব্দুস সালাম নিজে রিসিভ করেন। অবশিষ্ট ২২টি চেক আসামি শেখ শরিফুল ইসলাম ডেসপাস রাইডার জুলফিকার আলী, মিজানুর রহমান ও কবির হোসেনের সহায়তায় নিজে গ্রহণ করেন। এরপর ওইসব চেকে টাকার পরিমাণ ঘষামাজার মাধ্যমে অবমোচন করে পরিমাণ বাড়িয়ে লিখে প্রিন্ট করে উত্তোলন করেন। যার মাধ্যমে আসামিরা পারস্পারিক সহায়তায় ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে মূল টাকার অতিরিক্ত ৬ কোটি ৭৪ লাখ ৪৩ হাজার ৩ টাকা আত্মসাৎ করেন। এজন্য দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে আসামিদের বিরুদ্ধে এই চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
চার্জশিটে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, তদন্তকালে চেক সিগনেটরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ আব্দুল আলীম, অধ্যাপক ড. মোল্লা আমীর হোসেন কর্মরত ছিলেন। ওই সময়ে ড. মোল্লা আমীর হোসেনসহ তিনজন সচিব কর্মরত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ড. মোল্লা আমীর হোসেন ও সচিব প্রফেসর এ এম এইচ আলী আর রেজা ও প্রফেসর তবিবার রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।