যাত্রীছাউনিতে দিন কাটছে অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের

বগুড়া প্রতিনিধি |

তিন তিনটি উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। ছিলেন এরশাদ সরকারের সময় উপজেলা জাতীয় পার্টির (জাপা) সভাপতি। জমিজমা, বাড়িঘর সবই ছিল এক সময়। সব হারিয়ে দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে ৮৮ বছরের এই বৃদ্ধ থাকছেন বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার কুন্দারহাট বাসস্ট্যান্ডের যাত্রীছাউনির মেঝেতে।

আব্দুর রশিদ নামের এই বৃদ্ধ ব্যক্তির জমিজমা দ্বিতীয় স্ত্রী, মেয়ে ও শ্বাশুড়ি লিখে নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে তাঁকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন।

রবিবার সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় বৃদ্ধ আব্দুর রশিদের সঙ্গে। বয়সের কারণে অনেকটা স্মৃতিশক্তি হারিয়েছেন তিনি। কোমরে আঘাত পেয়ে চলনশক্তি হারিয়ে ফেলার কারণে ওই যাত্রীছাউনির ভেতরেই তিনি মলমূত্র ত্যাগ করেন। সেই দুর্গন্ধের কারণে সেখানে কোনো যাত্রী বসে না, এমনকি তাঁর খোঁজ নিতেও তেমন কেউ যায় না আশপাশে।

আব্দুর রশিদ জানান, বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটগ্রামে তাঁদের বাড়ি। সরকারি আজিজুল হক কলেজ থেকে সত্তরের দশকে ডিগ্রি ও বিএড সম্পন্ন করে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন নাটোরের সিংড়া উপজেলার সাতপুকুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। পরে নিজ উপজেলার বিজরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের ও কুন্দারহাট ইনছান আলী দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেন। এক পর্যায়ে তিনি জাতীয় পার্টির উপজেলা সভাপতি হন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গোলাপ ফুল মার্কা নিয়ে নির্বাচনও করেন তিনি। ওই সময় তাঁর সুখের সংসারে ছিল এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে হঠাৎ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে চিকিৎসাধীন মারা যান। মেয়েকে বিয়ে দেন। কিছুদিন পর স্ত্রীও মারা যান। দ্বিতীয় বিয়ে করেন বগুড়া শহরে। এরপর কী করে এই বাসস্ট্যান্ডে আশ্রয় হলো তাঁর—জানতে চাইলে একেবারে চুপ হয়ে যান আব্দুর রশিদ।

এ সময় লোকজনের মাধ্যমে তাঁর একমাত্র ছোট ভাই পাশের মুদি দোকানি জিল্লার রহমান জলিলের (৭৫) সন্ধান মেলে। জলিল বলেন, তাঁদের দুই ভাইয়ের নামে জায়গাজমি ছিল প্রায় ১৪ বিঘা। রাজনীতি করতে গিয়ে আব্দুর রশিদ বেশির ভাগ জমিই বিক্রি করে দেন। এরই মধ্যে ছেলে ও স্ত্রী মারা গেলে তাঁর সবচেয়ে মূল্যবান দেড় বিঘা জমি লিখে দেন বড় বোনকে। তাঁর আশা ছিল, বোন বা তাঁর ছেলেমেয়ে তাঁকে বৃদ্ধ বয়সে দেখবে; কিন্তু সেই বোনও মারা গেলে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন এবং অবশিষ্ট জমি স্ত্রী, মেয়ে ও শাশুড়ি লিখে নেন। দুই বছর আগে বাড়ির জায়গাসহ সেই জমি তাঁরা বিক্রি করে দেন। এরপর করোনার সময় বৃদ্ধ মানুষটিকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন দ্বিতীয় স্ত্রী।

বৃদ্ধ আব্দুর রশিদ সব হারিয়ে ফিরে এলেও তাঁকে নিজের বাড়িতে ঠাঁই দিতে পারেননি ছোট ভাই। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় তাঁর (জলিলের) স্ত্রী-সন্তানরা ওই বৃদ্ধের দায় নিতে অস্বীকার করেন। জায়গাজমি সবই তো তিনি অন্যদের দিয়েছেন। নিজেরও বয়স হয়েছে, জোর করে ভাইকে বাড়িতে রাখবেন সেই সামর্থ্যও তাঁর নেই। এ কারণে ওই যাত্রীছাউনিতে থাকতে হচ্ছে তাঁকে।

কুন্দারহাট বাসস্ট্যান্ডের চেইন মাস্টার, মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্য আব্দুল মান্নান বলেন, ‘মাস্টার সাহেব ওখানে থাকায় কোনো যাত্রী রোদ-বৃষ্টিতে ওই ছাউনির নিচে দাঁড়াতে পারে না। কারণ চরম নোংরা করে রাখেন তিনি সেখানটা। ’

যোগাযোগ করা হলে আব্দুর রশিদেরই সাবেক ছাত্র বর্তমান নন্দীগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান রেজাউল আশরাফ জিন্নাহ বলেন, ‘লোকমুখে আমি বিষয়টি জেনেছি। সেখানে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা দেখব। ’

নন্দীগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শিফা নুসরাত বলেন, ‘এমন ঘটনা কেউ তো জানায়নি। ’ লোক পাঠিয়ে তাঁর বিষয়ে তথ্য নিয়ে কোনো ব্যবস্থা করা যায় কি না, দেখা হবে বলে জানান তিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050759315490723