দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলের অযাচিত হস্তক্ষেপে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আট শতাধিক শিক্ষক। বুধবার ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছারের সই করা এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ জানানো হয়।
ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলমান রয়েছে। বাংলাদেশের আইন অনুসারে নির্বাচন কমিশন অচিরেই নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক করার সব ধরনের উদ্যোগ নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। গত ৪ নভেম্বর নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানালে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ২৬টি রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশগ্রহণ করে। বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের সমমনা কয়েকটি রাজনৈতিক দল সংলাপে অংশগ্রহণ না করে গণতন্ত্র ও নির্বাচনী বিধিব্যবস্থার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছে। বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসের ২৯ তারিখের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার প্রাক্কালে একটি দেশের রাষ্ট্রদূত সকল ধরনের শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে সেদেশের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের ৩টি রাজনৈতিক দলকে নিঃশর্ত সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে চিঠি বিতরণ করেছে বলে জাতীয় গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, ইতঃপূর্বে সরকারকে পদত্যাগের একদফা শর্ত জুড়ে দিয়ে বিএনপি-জামায়াতই শর্তহীন সংলাপের দাবিকে নাকচ করেছে। রাষ্ট্রদূতের পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্তকারীদের ওপর ‘ভিসানীতি’ প্রয়োগের পুরনো হুমকি ব্যক্ত করা হয়েছে। স্মরণযোগ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন সরকার ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের পক্ষাবলম্বন করে অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে গণহত্যায় সহযোগিতা করেছিলো। একই ধারাবাহিকতায় তাদের নীতি মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষ শক্তিকে রসদ যুগিয়ে চলেছে। বিএনপি-জামায়াতের সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনে জনসমর্থন না পেলেও ওই দেশের রাষ্ট্রদূতের পক্ষপাতমূলক আচরণে উৎসাহিত হয়ে তারা আন্দোলনের নামে সহিংসতা চালিয়ে যাওয়ার প্রয়াস পাচ্ছে। হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির নামে যানবাহনে অগ্নি-সংযোগ, শিল্প-কলকারখানা ভাঙচুর, পুলিশ ও সাধারণ পথচারী-হত্যা, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে ভাংচুর ও ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করলেও তথাকথিত মানবধিকার ও গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা রাষ্ট্রটি এ বিষয়ে কোনো কথা বলেনি; নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থকারীদের ওপর ভিসানীতিও প্রয়োগ করেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রসঙ্গে টেনে এতে বলা হয়, এ রাষ্ট্রটি কথায় কথায় মানবাধিকারের কথা বললেও বিশ্বজনমতকে উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনিদের বিপক্ষে নারী-শিশুসহ গণহত্যায় নগ্নভাবে ইসরাইলিদের পক্ষাবলম্বন করেছে। তারা গণতন্ত্রের নামে আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাক, লিবিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিয়েছে। এবার তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্রমাগ্রসরমান বাংলাদেশ-যা তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোর কাছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, তার উন্নয়নের ধারাকে পশ্চাদগামী করার মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী শক্তির অপতৎপরতায় রসদ যোগাচ্ছে। এছাড়া গত ৩১ অক্টোবরে অসত্য তথ্যের ওপর ভিত্তি করে জাতিসঙ্ঘ মানবধিকার হাইকমিশন কর্তৃক প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রতিবাদ’ শিরোনামের প্রেস ব্রিফিং-এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এ বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
এ ধরনের পদক্ষেপ মানুষ হত্যা, ভাঙচুর, সহিংসতার মাধ্যমে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে যারা তৎপর রয়েছে তাদেরকে উৎসাহিত করবে বলে আমরা মনে করি সহিংসতা সৃষ্টিকারী রাজনৈতিক দল ও উগ্র ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সাথে সংলাপের কথা বলে সময়ক্ষেপণ করে সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টির অপতৎপরতায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের প্রতি সম্মান জানিয়ে অবাধ-সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জনআকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন ও সরকারের প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে সবাইকে আহ্বান জানাই।