অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুগের তাগিদে বইয়ের ডিজিটাল ভার্সনও জরুরি। প্রতিটি সাহিত্যকর্ম অডিও ভার্সন করে ডিজিটাল সিস্টেমে নিয়ে এলে পাঠক বাড়বে। বাংলা সাহিত্যের সব বই অনুবাদের ব্যবস্থা করার কথাও বলেন তিনি।
বুধবার বিকেলে বাংলা একাডেমিতে অমর একুশে বইমেলা ২০২৩ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বাংলা আমাদের ভাষা, আমরা মায়ের ভাষায় কথা বলি। পাকিস্তানি শাসকরা আমাদের এ অধিকারটুকু কেড়ে নিয়েছিলো। এ অধিকার আমাদের আদায় করতে হয়েছিল বুকের তাজা রক্ত দিয়ে।
তিনি বলেন, আমাদের ভাষার অধিকার থেকেই আমাদের স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতার সুফল যেমন ছড়িয়ে দিতে হবে, তেমন ভাষার উৎকর্ষও ছড়িয়ে দিতে হবে।
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের স্মৃতিচারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্কুলজীবন থেকে আমি বইমেলায় আসি। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তো আসতেই হয়। আমি সবসময় বাংলা একাডেমির লাইব্রেরি ব্যবহার করতাম। আজ দীর্ঘদিন পর এখানে আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।
তিনি বলেন, বাংলা ভাষার একটা ঐতিহ্য আছে। শুধু এটুকু বলি বাংলা ভাষাকে একসময় মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। বাংলা ভাষার অধিকার আদায়ের যে প্রচেষ্টা ছিল, তা শুরু হয়েছিলো ১৯৪৮। তার কারণ ছিল পাকিস্তানি শাসকরা একটা বিজাতীয় ভাষাকে আমাদের ওপর চালিয়ে দিতে চেয়েছিলো।
জাতির পিতা আন্তর্জাতিক সাহিত্য মেলার আয়োজন করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি মনে করি বাংলা একাডেমি এ ধরনের বিশেষ সাহিত্য মেলার আয়োজন করতে পারে। জেলায় জেলায় এখন বইমেলা হচ্ছে। বাংলা সাহিত্যের যত বই বের হবে, বিভিন্ন ভাষায় সেগুলো অনুবাদ হবে। সে ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। বাংলা একাডেমি ও মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট এ কাজটা করতে পারে।
'আধুনিক যুগ ডিজিটাল যুগ' উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ভাষা সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রেও ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করতে পারি। আমাদের বইগুলোকে ডিজিটালাইজ করা, অডিও ভার্সন করা যেতে পারে। আজকাল অনেকেই পড়তে চায় না। কিন্তু একটা ফোন কানে দিয়েও শুনতে পারে। কাজেই বইয়ের অডিও ভার্সন করা যেতে পারে। প্রতিটি সাহিত্যকর্ম যদি অডিও ভার্সন করে দিই এবং ডিজিটাল সিস্টেমে নিয়ে আসি, তবে আরও পাঠকশ্রেণি পাবো।
তিনি বলেন, এখনকার যুগে কেউ আর বই খুলে পড়তে চায় না। হাঁটতে-চলতে কোথাও যেতে যেতে পড়তে পারে তা করে দেয়া উচিত। তবে এটা ঠিক আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এভাবে শুনে ওই তৃপ্তি পাওয়া যায় না, যেটা বই হাতে নিয়ে পাতা উল্টে পড়তে যে আরাম, যে স্বস্তি সে অনুভূতিটা পাওয়া যাবে না।
বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
এর আগে তিনি বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত ৭টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন এবং 'বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২২' বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।