যেন ২২ ঘণ্টা কাজের ফিরিস্তি দিলেন কলিমুল্লাহ স্যার

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

এ এক অত্যাশ্চর্য ঘটনা। অবশ্য আমেরিকা-কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিক্ষার্থী বাংলাদেশে থেকে অনলাইনে ক্লাস করেন তাদের জন্য এটা কোনো ঘটনা নয়। কিন্তু বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশেরই কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস রাত ৩টায়, ভাবা যায়? আর এটাই অত্যাশ্চর্য হয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই ঘটনাটি ঘটার পর চারদিকে শোরগোল পড়ে গেছে। কিন্তু যিনি কাণ্ডটি ঘটিয়েছেন তিনি তো নির্বিকার। যেন কিছুই হয়নি। বৃহস্পতিবার (১০ জুন) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

নিবন্ধে আরও জানা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইন নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে সবাই জেনে গেছেন, ৯ জুন দিন পেরিয়ে রাত ৩টায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারে ‘পলিটিক্যাল থট’ নামক অধ্যায়ের ক্লাস নিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। আগামী ১৩ জুন সেখানে তার শেষ কর্মদিবস। তার আগে এত কাজ, ভাবা যায়!

রাত ৩টায় ক্লাস নেয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তাকে নিয়ে হাস্যরসে মেতে উঠলেও আমি বা আমরা একটুও চমকাইনি। কারণ বেশ কয়েকমাস আগে এই অধ্যাপকই ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছিলেন তিনি ২২ ঘণ্টা কাজ করেন। তারপর সত্যি সত্যি তিনি ২২ ঘণ্টা কাজ করেন কি না, বাড়িয়ে বলেছেন কি না, একটা মানুষ ২২ ঘণ্টা কাজ করলে ঘুমায় কখন-এসব ‘গণিতবাক্য’ নিয়ে কত যে হিসাব হয়েছে তা না হয় নাইবা বললাম। মানুষে বিশ্বাস করলে করুক, না করলে নেই- তাতে যেনো কিছু আসে যায় না। কলিমুল্লাহ স্যার কিন্তু রাত ৩টায় ক্লাস নিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে সত্যি সত্যি তিনি ২২ ঘণ্টা কাজ করেন। কারণ রাত ৩টায় ক্লাস নেয়াও কিন্তু সেই ঘোষিত ২২ ঘণ্টারই অংশ। কলিমুল্লাহ স্যার যখন কথাটি বলেছিলেন তখনতো তার কথা কেউ বিশ্বাস করেননি। এখন শেষ রাতে ক্লাস নিয়ে সবাইকে বিশ্বাস করতে বাধ্য করাসহ নিজেই নিজের ফিরিস্তি দিয়ে দেখালেন, দেখো, আমি ফাও কথা বলিনি। হাতেকলমে প্রমাণ দিয়েছি।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

তিনি যে শুধু এদিনই রাত ৩টায় ক্লাস নিলেন তা নয়। রাত ৯/১০টা থেকে শুরু করতেন এমফিল/পিএইচডির সেমিনার। এই সময়ে অন্যকোনো শিক্ষক যদি ফোন করতেন তাহলে বলতেন মধ্যরাতে ফোন করছি- ঘুমাবেন না। কিন্তু রাতে যদি ফোন নাও আসে পরদিন সকাল ৭টার মধ্যে ওই শিক্ষকের কাছে ফোন চলে যেত। গত ৯ জুন রাতেও এমন ঘটনা ঘটেছে। এক শিক্ষক উপাচার্য কলিমুল্লাহকে ফোন করেন। ফোন ধরেই তিনি বলেন, আমি রাত ১টার দিকে ফোন করছি আপনাকে। কিন্তু রাত ১টায় ওই ফোন আর আসেনি। রাত ৩টায় সময় ওই শিক্ষক দেখেন, উপাচার্য অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন। তারপর শিক্ষক ঘুমিয়ে পড়েন। বুধবার (১০ জুন) সকাল সোয়া ৭টায় উপাচার্য ওই শিক্ষককে ফোন করে বসেন। ঘুমজড়ানো কন্ঠে ওই শিক্ষক ফোন ধরেই বলেন, স্যার এত সকালে? পাল্টা উপাচার্য বলেন, এত বেলা পর্যন্ত ঘুমাচ্ছেন? সবমিলিয়ে ওই শিক্ষকের উক্তি, উপাচার্য স্যার যা করছেন তা কাছে থেকে না দেখলে কেউ বুঝবে না, জানবে না যে সত্যি সত্যি তিনি ২২ ঘন্টা ক্লাস করেন।

তা যাকগে, তিনি ২৪ ঘণ্টাই কাজ করুন তাতে কিছু আসে যায় না। শুধু আমরা তার এই ত্যাগের মর্যাদা দিতে পারিনি। তবে উপাচার্য স্যারের শেষ রাতে ক্লাস নেয়াকে কেন্দ্র করে ছোটবেলায় বাবা মার কথা মনে পড়ছে। যখন ছোট ছিলাম তখন বাবা-মা বলতেন, তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়বে। শেষ রাতে উঠে যাবে। শেষ রাতে পড়া ভালো মুখস্থ হয়। ছাত্রজীবনে শেষ রাতে ঘুম থেকে ওঠে পড়ে মেধাবী হয়েছেন কি না জানি না, উপাচার্য স্যারের ক্লাসের কথা শুনে সেসব গল্পগুলো মনে পড়ছে। এখন সব বিশ্ববিদ্যালয়েরই উচিত রাত তিনটার পর থেকে ক্লাস চালু করা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যত মন্তব্য হয়েছে তার মধ্যে একটি মন্তব্য হচ্ছে এমন, ক্লাসের বিষয় ছিল ‘পলিটিক্যাল থট’, তাহলে মধ্যরাতে বা শেষরাতে নিলে সমস্যা কোথায়?

মধ্যরাতের পর রাজনীতিবিদগণ ‘টক-শো’ করলে সেটাকে তো স্বাভাবিক ধরা হয়। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের রাজনীতিবিদ হিসেবে গড়ে তুলতে উনার অনন্য ভূমিকার জন্য স্যালুট জানানো উচিত। এখানে মনে করিয়ে দিতে চাই, স্যার কিন্তু ভোটও পর্যবেক্ষণ করেন। জানিপপ নামে যে সংস্থাটি রয়েছে স্যার সেটিরও চেয়ারম্যান।

 

লেখক : অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য, সিনিয়র রিপোর্টার, ভোরের কাগজ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0068490505218506