যেভাবে রক্ষা পায় ছাত্রাবাসে ধর্ষণের আলামত

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সিলেটের এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে তরুণীকে গণধর্ষণের পর আলামত নষ্ট করতেই তরুণী ও তাঁর স্বামীর গাড়িটি আটকে রেখেছিলেন অভিযুক্ত ধর্ষকেরা। ছাত্রাবাসের ফটকে দাঁড়িয়ে যখন ভেতরে প্রবেশ করার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতির অপেক্ষা করছিল পুলিশের একটি দল, তখন গাড়িটি ধুয়ে ধর্ষণের আলামত নষ্ট করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তাঁরা। একজনের মাধ্যমে এ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ঢুকে পড়েন একজন উপপরিদর্শক (এসআই)। তাঁর নাম মো. সোহেল রানা। তিনি সিলেট মহানগর পুলিশের শাহপরান থানায় কর্মরত। শনিবার (৩ অক্টোবর) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। 

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি সাইফুর রহমান ও অর্জুন লস্করের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি থেকে বের হয়েছে এ তথ্য। শুক্রবার রাতে সিলেটের মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাঁরা জবানবন্দি দেন। তাঁরা দুজনসহ চারজন তরুণীকে ছাত্রাবাসে গাড়িতেই চারবার ধর্ষণ করেছেন বলে জবানবন্দিতে বলেছেন। তাঁদের সঙ্গী রবিউল ইসলাম ধর্ষণে সহযোগিতা করেছেন। ধর্ষণকাণ্ড আড়াল করতে গাড়ি থেকে ধর্ষণের আলামত মুছতে চেয়েছিলেন তাঁরা, কিন্তু পুলিশ দেখে তাঁরা পালিয়ে যান বলে জবানবন্দিতে এসেছে।

এর আগে ওই তরুণীর স্বামী জানিয়েছিলেন, ছাত্রাবাস ফটকে অনুমতির অপেক্ষা করছিলেন শাহপরান থানার ওসিসহ পুলিশের একটি দল। অভিযুক্ত ধর্ষকেরা তখন ছাত্রাবাসে অবস্থান করছিলেন। এতে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে মনে করে একজন পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দা মিহিত গুহ চৌধুরী ওরফে বাবলা চৌধুরী (জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক) নামের একজন সাহস করে তাঁদের নিয়ে ঘটনাস্থলের দিকে গেলে অভিযুক্ত ধর্ষকেরা পালিয়ে যান।

এই তথ্য যাচাইয়ের জন্য পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছিল বাবলা চৌধুরীর সঙ্গে। তিনিও এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছিলেন, তাঁর সঙ্গে শাহপরান থানার সোহেল নামের একজন পুলিশ গিয়েছিলেন ঘটনাস্থলে।

এই দুজনের বক্তব্যের সত্যতা জানতে শাহপরান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল কাইয়ূম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ছাত্রাবাস ফটকে কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুমতির জন্য কিছু সময় অপেক্ষা করা হচ্ছিল। এ সময় আসামিরা পালিয়ে যেতে পারে বলে শাহপরান থানার ভ্রাম্যমাণ দল থেকে এসআই মো. সোহেল রানা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। আলামত জব্দ তালিকা তিনিই করেছেন।

ছাত্রাবাসে প্রবেশের জন্য ফটকে অবস্থান করে শাহপরান থানার ওসি ফোন করে অনুমতি চেয়েছিলেন বলে নিশ্চিত করেন এমসি কলেজের অধ্যক্ষ মো. সালেহ আহমদ। এ প্রসঙ্গে  বলেন, 'ওসি সাহেব অনুমতি চাওয়ায় ছাত্রাবাসের ভেতরের স্টাফ কোয়াটারে থাকা একজন শিক্ষককে ফটকে পাঠানো হয়েছিল।’

মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশের একটি সূত্র জানায়, এসআই সোহেল কালক্ষেপণ না করে ঘটনাস্থলে ছুটে যাওয়ায় ধর্ষণের আলামত নষ্টের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে এসআই সোহেল রানা বলেন, ওই সময় ঘটনাস্থলে না গেলে শুধু ধর্ষণের আলামত নষ্ট নয়, সাইফুরের দখল করা ছাত্রাবাস কক্ষ থেকে একটি পাইপগান, চারটি রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধারও হতো না। জব্দ তালিকা করতে গিয়ে তিনি দেখেছেন, গাড়িটি ধুয়ে মুছে ফেলার সব প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছিলেন ধর্ষণকারীরা। তাঁর ভাষ্য, মিনিট দশেক সময় পেলেই সব আলামত নষ্ট করে ফেলতেন তাঁরা। গাড়ির আলামত জব্দ করার পর কক্ষে গিয়ে প্রথমে অস্ত্রশস্ত্র দেখতে পাই। কক্ষটি বন্ধ রেখে পরে অস্ত্রগুলো ভোররাত প্রায় চারটার দিকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করে।’

পুলিশ জানায়, এই অস্ত্র উদ্ধার ঘটনায় শাহপরান থানায় তরুণীর স্বামী ধর্ষণ মামলা করার পর অস্ত্র আইনে সাইফুরের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা হয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044329166412354