দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে প্রণীত হতে যাচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিমালা। সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ নিয়ে প্রাথমিক পর্যালোচনা, বিচার-বিশ্লেষণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম শেষ করেছে।
এরই মধ্যে সরকারের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার এবং মিডিয়া পারসনদের সমন্বয়ে একটি অংশীজন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সবার কাছ থেকে মতামত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আইসিটি বিভাগ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে ‘এআই’ নীতিমালার প্রাথমিক খসড়াও। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নীতিমালা ২০২৪’। যদিও এআই আইন তৈরির বিষয়টি বেশ আগে থেকেই দেশে আলোচিত ছিল।
তথ্যপ্রযুক্তির এই সময়ে সবার কাছেই পরিচিত একটি বিষয় ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’। সংক্ষেপে একে বলা হয় ‘এআই’। বাংলায় যার অর্থ ‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা’। এই এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম্পিউটার সিস্টেমের মাধ্যমে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক সম্ভাব্য চাহিদা নির্ণয় করে তার সমাধান সামনে হাজির করা কিংবা পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ণয় করে দেওয়ার কাজটি অনায়াসে করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে এই প্রযুক্তি এখন বেশ দাপুটে ভূমিকায় রয়েছে। এমনকি এআই প্রযুক্তি কর্মক্ষেত্রে মানুষের জায়গা দখল করে নেবে কি না তা নিয়ে নানা কথাবার্তা চলছে।
যেসব কারণে এআই আইন তৈরির পথে হাঁটছে বাংলাদেশ
বর্তমান ডিজিটাল যুগে তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহে জীবনযাত্রা প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি সহজ হয়েছে। প্রতিনিয়ত এর অভিনব ব্যবহারের মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে আসছে বিভিন্ন পরিবর্তন। ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, কম্পিউটার, ইমেইল, সোশ্যাল মিডিয়া, ভিডিও কল, ইন্টারনেট চ্যাট ও অন্য প্রযুক্তির সাহায্যে তাৎক্ষণিক যোগাযোগ কিংবা তথ্য আদান-প্রদান এখন বেশ মামুলি ঘটনা। এর মধ্যে নতুন করে সংযুক্ত হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। এর ইতিবাচক কার্যক্রমের পাশাপাশি নেতিবাচক বিষয়েও রয়েছে বড় ধরনের প্রভাব।
সম্প্রতি যশোরে অবস্থিত শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের একটি ভবনের এডিট করা ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। মুহূর্তেই ওই ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। যেখানে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের ভবনটিকে অত্যন্ত জরাজীর্ণ, জনমানবহীন ও পরিত্যক্ত অবস্থায় উপস্থাপন করা হয়।
ওই ছবির সঙ্গে লেখা হয়েছিল ‘ভবনটি দেখে প্রথমে মনে হবে, ইহা যুদ্ধাক্রান্ত সিরিয়ার কোনো স্থাপনা বিশেষ। আপনাদের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল, একদম ভুল। ইহা যশোরের বিখ্যাত শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলোজি পার্ক। যা প্রায় তিনশ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত। ভবনটি ২০১৭ সালের ৫ অক্টোবর উদ্বোধনের পর মাত্র ৭ বছরেরও কম সময়ের ব্যবধানে এমন অবস্থায় পৌঁছেছে।’
ছবিটি ফেসবুকে বিভিন্ন মানুষ ব্যক্তিগত আইডি, নামি-বেনামি পেজ ও গ্রুপে নেতিবাচক মন্তব্যসহ শেয়ার করতে থাকেন।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ওই ভবনের সঙ্গে ছবির কোনো মিল নেই। বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিনিয়ত ওই ভবনে হাজার হাজার সেবাগ্রহীতা আসা-যাওয়া করছেন। প্রযুক্তি ব্যবহার করে সম্পূর্ণ সচল একটি ভবনকে পরিত্যক্ত ও জনমানবহীন ভবন হিসেবে মানুষের সামনে তুলে ধরে গুজব ছড়ানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এভাবে এআইয়ের নেতিবাচক কাজের সুযোগটি লুফে নিয়েছেন সাইবার অপরাধীরা। যা ব্যবহার করে তারা গুজব ছড়ানোসহ বিভিন্ন অপরাধ করছেন। ফলে জাতীয় স্বার্থে এর নিয়ন্ত্রণ জরুরি হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় এআইয়ের নেতিবাচক ব্যবহার ও ঝুঁকি কমানোর জন্য একটি এআই আইন প্রণয়ন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এআই আইন প্রণয়নে যারা কাজ করছেন তাদের প্রত্যাশা, ‘জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নীতিমালা ২০২৪’ প্রণয়ন করা গেলে এসব গুজব নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
এআই ব্যবহারে ‘কৌশল’ থেকে সরে ‘নীতিমালা’ তৈরি করছে সরকার
সরকার ২০২০ সালেই জাতীয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কৌশল প্রণয়ন করেছে। সেই কৌশলের আলোকে এতদিন এআই সম্পর্কিত বিষয়গুলো পরিচালনা করা হতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে চাহিদা ও গুরুত্ব অনুধাবন করে এআই নীতিমালা প্রবর্তন করতে যাচ্ছে সরকার।
আইসিটি বিভাগের এআই নীতিমালার প্রাথমিক খসড়ার পরিচিতিতে বলা হয়েছে— কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার গতিশীল যুগে বাংলাদেশও এটিকে গ্রহণ করতে চায়। কেননা, এআই শিল্প, অর্থনীতি ও সামাজিক কাঠামের ওপর প্রভাব ফেলছে। যার ফলে বিভিন্ন সেক্টরজুড়ে রূপান্তরমূলক পরিবর্তন ঘটছে। তাই সম্ভাব্য ঝুঁকি হ্রাস করতে এবং এআইকে কাজে লাগানোর জন্য একটি কৌশলগত নীতি কাঠামোর প্রয়োজন।
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘ভিশন ২০৪১’ বাস্তবায়ন এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়তে স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি এবং স্মার্ট সিটিজেন– এই ৪টি স্তম্ভ গুরুত্বপূর্ণ। এআই এসব স্তম্ভ তৈরিতে ভূমিকা পালন করছে।
এ ছাড়া টেকসই উন্নয়ন, উদ্ভাবন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, অন্তর্ভুক্তি বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিগতভাবে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এআই গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে স্বীকৃত বলেও এতে বলা হয়েছে। এসব প্রেক্ষাপটেই জাতীয় এআই নীতিতে আইনগত, নৈতিক এবং সামাজিক বিষয়গুলোকে সংযোজন করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়েছে।
ভীত হওয়ার কিছু নেই, এআই আইনে থাকবে নমনীয়তা : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সম্প্রতি এআই প্রযুক্তি প্রসঙ্গে বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির ব্যাপ্তি অনেক। এর যেমন ভালো দিক রয়েছে, তেমনি খারাপ দিকও রয়েছে। তবে এআই প্রযুক্তি নিয়ে ভীত হওয়ার কিছু নেই। আমরা এর সুবিধাগুলো গ্রহণ করতে চাই।
তিনি বলেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আইন-২০২৪ এর খসড়া প্রণয়ন করা হবে। এতে এআই পলিসি এবং এআই আইনের সমন্বয়ের দিকে খেয়াল রাখা হবে। কারণ পলিসির বাইরে আইন করে লাভ হবে না। তবে আইনটির মধ্যে যথেষ্ট নমনীয়তা থাকতে হবে। রেগুলেশনের জায়গায় আমরা শক্ত হতে পারি কিন্তু বাকি জায়গাগুলোতে নমনীয় হতে হবে। সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে একটা চূড়ান্ত ড্রাফট তৈরি করব।