পলিটেকনিকে ভর্তিতে বয়সসীমা বাতিল: একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ

অধ্যক্ষ আবুল বাশার হাওলাদার |

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী উদ্যোগ নিয়েছেন, সব বয়সেই পলিটেকনিকে ভর্তি হতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। এই মহান উদ্যোগের জন্য শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনিকে ধন্যবাদ জানিয়ে লেখাটি শুরু করছি। আধুনিক বিশ্বে শিক্ষার কোনো বয়স নেই। দাদী-নাতনী একসাথে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার  হওয়ার দৃষ্টান্ত আছে। আমাদের দেশে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির কোনো বয়স নেই। তাছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইভিনিং কোর্সে বয়সের কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোনো বয়স নির্ধারণ করা নেই। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনলাইন কোর্সেও বয়সের বাধা নেই। পলিটেকনিকসহ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে বয়সের সীমা নির্ধারণ করা আছে। তাছাড়া ব্রেক অব স্টাডি থাকলেও ভর্তি হতে পারবেন না কোনো শিক্ষার্থী। বয়স ও ব্রেক অব স্টাডি এখন উন্নত দেশে বিবেচ্য নয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বর্তমান উদ্যোগ অবশ্যই নতুন মাত্রা যোগ হবে শিক্ষায়, বিশেষ করে টেকনিক্যাল শিক্ষায়। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হাজার হাজার ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারের পদ শূন্য আছে। পদ্মা সেতু-সহ বড়ো বড়ো প্রজেক্টে বিদেশি হাজার হাজার  ইঞ্জিনিয়ার কাজ করছেন। তাছাড়া বিদেশে লাখ লাখ অদক্ষ শ্রমিক কাজ করছেন। অভ্যন্তরীণ কর্মক্ষেত্রে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মী তৈরি ও বিদেশে দক্ষ মানবসম্পদ রফতানি সফল করতে এ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। গার্মেন্টস, চামড়াশিল্প, নির্মাণশিল্প, বিদ্যুৎ বিভাগ, আইসিটি বিভাগসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানায় ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ও বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারের হাজার হাজার পদ শূন্য আছে। লাখ লাখ অদক্ষ শিক্ষার্থী বয়সের কারণে লেখাপড়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চরম হতাশায় বেকারত্ব বরণ করে নিয়েছেন। বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠাতে পারলে কর্মীরা যেমন আর্থিক সুবিধা বেশি পাবেন, তেমনি রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাবে সরকারের।

আর একটি বিষয়, জিপিএ’র পয়েন্ট কিছুটা নামিয়ে দেয়া হয়েছে। আমি মনে করি, এটাও ভালো উদ্যোগ। কারণ, অনেক শিক্ষার্থী একাডেমিক ফলাফল ভালো করতে না পারলেও, তারা কারিগরি শিক্ষায় ভালো করতে পারেন। তারা উচ্চশিক্ষায় প্রবেশ করতে পারে না। ফলে দেখা যায়, এসব শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ে এবং পরিবার ও সমাজের বোঝা হয়ে পড়ে। এসএসসি পাসের পর এই  শিক্ষার্থীদের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষায় সুযোগ দিতে হবে। এজন্য ভর্তির যোগ্যতা শিথিল করা ও আসন সংখ্যা যথেষ্ট বৃদ্ধি করতে হবে। এসব বিবেচনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই যুগান্তকারী  উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। বর্তমানে মানুষের গড় আয়ু বেড়ে গেছে। বৃদ্ধ বয়সেও একজন মানুষ জীবন-জীবিকার জন্য কাজ করতে প্রস্তুত থাকেন এবং অনেককেই জীবন- সংগ্রামে লিপ্ত থাকতে দেখা যায়। তাই দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে প্রকৌশল শিক্ষার বিকল্প নেই- তা হতে পারে যে কোনো বয়সে।

লক্ষ করা যাচ্ছে, সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ভণ্ডুল করতে একটি মহল উঠেপড়ে লেগেছেন। তারা বলছেন, এতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তারা এর বিরুদ্ধে এক ধরনের জেহাদ ঘোষণা করেছেন। যেখানে সমগ্র জাতির পক্ষে অবস্থান নিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন সেখানে একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী এর চরম বিরোধিতা করছেন। সরকারের এ উদ্যোগ যাতে সফল না হয় সেজন্য তারা নানারকম তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। কারো কাছে মাথা নত না করে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে কঠোর হাতে। দেশের সকল মানুষ সরকারি এ উদ্যোগ সফল করতে আন্তরিকভাবে সমর্থন করেন, আমার বিশ্বাস। 

লেখক : অধ্যক্ষ আবুল বাশার হাওলাদার, সভাপতি, বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়ন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033020973205566