যে ৬৭৮ শিক্ষক চাকরি হারাচ্ছেন

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

মো. রাশেদুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতা করছেন। ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার চরসুলতানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিষয়ের সহকারী শিক্ষক তিনি। এমপিও বাবদ ভোগ করেছেন ১৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। কিন্তু তিনি শিক্ষক নিবন্ধন সনদ জাল করে তা দিয়ে চাকরি করছেন ও এমপিওভুক্ত হয়েছেন। অবশেষে ধরা পড়েছেন এ শিক্ষক। তাকে চাকরিচ্যুতির নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। 

শুধু রাশেদুজ্জামানেই নন, বিভিন্ন স্কুল-কলেজে কর্মরত ৬৭৮ জন জাল সনদধারী শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে তাদের এমপিও বন্ধ করার এবং অবৈধভাবে এমপিও বাবদ ভোগ করা লাখ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে। এছাড়া জাল সনদধারী যেসব শিক্ষক অবসরে গেছেন তাদের অবসর সুবিধা বাতিল করতে বলেছে মন্ত্রণালয়। যারা সেচ্ছায় অবসরে গেছেন বা চাকরি ছেড়ে পালিয়েছেন তাদের টাকা অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে আদায় করতে বলা হয়েছে। আর জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের। জাল সনদধারী শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে অধিদপ্তরকে বলেছে মন্ত্রণালয়। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে এসব নির্দেশনা দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। গত রোববার দুপুরে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিভাগের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা শাখার সহকারী সচিব মো. সেলিম শিকদার।   

জানা গেছে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাল সনদ দিয়ে চাকরি করছেন হাজার হাজার শিক্ষক। তারা কম্পিউটার সনদ, শিক্ষক নিবন্ধন সনদ ও বিএড-বিপিএড সনদ জাল করে চাকরি করছেন। পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ) সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষা প্রতিবেদনে মোট ১ হাজার ১৫৬ জন শিক্ষকের শিক্ষাগত এবং যোগ্যতার সনদ ভুয়া বলে তথ্য পেয়েছিলো। এজন্য ওই সব শিক্ষককে দেয়া বেতন-ভাতা ফেরত নেয়ার সুপারিশ করেছিলো সংস্থাটি। তাদের মধ্যে থেকে যাচাই বাছাই শেষে স্কুল ও কলেজে কর্মরত ৬৭৮ জন শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করে তাদের বেতনের টাকা ফেরত নেয়ার নির্দেশ দিলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। 

একসময় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে পরিচালনা কমিটির একচ্ছত্র ক্ষমতা ছিলো। তখনই মূলত জাল সনদধারী শিক্ষকরা নিয়োগ পেয়েছিলেন। এখন বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ দেয়া হয়। এনটিআরসিএর বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন সনদ ছাড়া শিক্ষক হওয়ার সুযোগ নেই। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী সচিব মো. সেলিম শিকদার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর থেকে যাচাই বাছাই করে ৬৭৮ জন শিক্ষক কর্মচারীর জাল সনদ শনাক্ত হয়েছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি সনদ দেয়া দপ্তরের প্রধান বা প্রতিনিধির সমন্বয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের সনদের সত্যতা যাচাই করে ৬৭৮ জনের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বলা হয়েছে।  

মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা শাখা থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, জাল সনদধারী শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও বন্ধ ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে চাকরিচ্যুত করতে বলা হয়েছে। অবৈধভাবে গ্রহণকৃত বেতন ভাতা সরকারি কোষাগারে ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। যারা অবসরে গেছেন তাদের অবসরের সুবিধা প্রাপ্তি বাতিল হবে। যারা স্বেচ্ছায় অবসর নিয়েছেন তাদের আপত্তির টাকা অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে আদায় করতে হবে। 

মন্ত্রণালয় আরো বলছে, বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জাল সনদধারী শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর ভাতা ও কল্যাণ ট্রাস্টের ভাতা বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তালিকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে হবে। জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান প্রধান কর্তৃক মামলা দায়ের করতে হবে। জাল সনদধারীদের নিয়োগ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। 

দৈনিকশিক্ষাডটকমের পাঠকদের জন্য যে ৬৭৮ শিক্ষক চাকরি হারাচ্ছেন তাদের পুর্ণাঙ্গ তালিকা তুলে ধরা হলো : 

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশকে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এ সহিংসতা: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha দেশকে ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে এ সহিংসতা: প্রধানমন্ত্রী দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে : আরেফিন সিদ্দিক - dainik shiksha দ্রুত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে : আরেফিন সিদ্দিক এইচএসসির উত্তরপত্র জমা নিচ্ছে না বোর্ড - dainik shiksha এইচএসসির উত্তরপত্র জমা নিচ্ছে না বোর্ড কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় এতো ফেল! - dainik shiksha কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় এতো ফেল! বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে: ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ - dainik shiksha বিকল্প পদ্ধতিতে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে: ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ - dainik shiksha ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0022728443145752