দৈনিক শিক্ষাডটকম, জামালপুর : জামালপুরে যৌতুকের দাবিতে এক নারীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্কুলশিক্ষক স্বামীর বিরুদ্ধে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে ওই নারীর বড় বোন মৌসুমী আক্তার বাদী হয়ে সদর থানায় একটি মামলা করেন। এদিকে নির্যাতনের শিকার নিশি আক্তারকে গত সোমবার জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে মামলার আসামি ও স্কুলশিক্ষক আল-আমীনের বাবা আশেক আলীকে গ্রেফতার করে। জামালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ মহব্বত কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আল-আমীন জামালপুর সদর উপজেলার মেষ্টা ইউনিয়নের মুল্লিকপুর গ্রামের আশেক আলীর ছেলে এবং শাহবাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। নিশি আক্তার মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নের নাগেরপাড়া গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী আব্দুল মান্নানের মেয়ে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, আল-আমীনের সঙ্গে ১০ মাস আগে বিয়ে হয় নিশি আক্তারের। বিয়ের সময় নগদ ৫ লাখ টাকা, একটি মোটরসাইকেল, আসবাবপত্র ও মোবাইলসহ স্বর্ণালংকার যৌতুক দেয়া হয়। গত তিন মাস ধরে শহরের গেইটপাড় এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় থাকছেন স্বামী-স্ত্রী। এরপর থেকেই আল-আমীন আরো ৫ লাখ টাকার জন্য মারধর ও নির্যাতন শুরু করেন স্ত্রীকে। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আল-আমীন নিশিকে মারধর করার একপর্যায়ে গরম পানি শরীরে ঢেলে দেন। এতে তাঁর শরীর ঝলসে যায়।
এ অবস্থায় নিশিকে ঘরে তালাবদ্ধ করে রেখে দেয়া হয়। গত সোমবার অবস্থার অবনতি হলে শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে রেখে আল-আমীন পালিয়ে যান। পরে নিশি মোবাইল ফোনে তাঁর পরিবারকে ঘটনা জানানোর পর তাঁরা এসে সোমবার জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
নিশি আক্তার বলেন, ‘সে প্রায় সময় মারধর করত। রান্নায় লবণ কম হলে মারত। ঘটনার দিন ৫ লাখ টাকার জন্য চাপ দিলে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে আমার গলা চেপে ধরে, মুখে গামছা গুঁজে মারপিট করে। পরে শরীরে গরম পানি ঢেলে দেয়।’
নিশির মা নার্গিস আক্তার বলেন, ‘বিয়ে দেয়ার পর থেকে অনেক অত্যাচার করে। জোর করে বিয়ে করে। অনেক যৌতুক দিছি। ফার্নিচার, গাড়ি, গয়নাসহ সব দিছি। আমার মেয়েকে গরম পানি ঢাইলে পুইড়া দিছে। তাও আমি জানতাম না। মেয়ে ফোন দিছে, ছবি দিছে। আমি দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’
জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান সোহান বলেন, ‘মেয়েটির শরীরের ২০ শতাংশ পুড়ে গেছে। হাসপাতালে অনেক দেরিতে আসায় শরীরে আরো বেশি ক্ষতি হয়েছে। তবু আমরা সাধ্যমতো চিকিৎসাসেবা দিয়েছি।’
জামালপুর থানার ওসি মুহাম্মদ মহব্বত কবির বলেন, ‘এ ঘটনায় মেয়েটির বড় বোন বাদী হয়ে মঙ্গলবার রাতে জামালপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় সহকারী শিক্ষক আল-আমীনসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনা শোনার পর থেকেই আমাদের অভিযান চলছে।’
ওসি বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে জামালপুর শহরের গেইটপাড় এলাকা থেকে আল-আমীনের বাবা আশেক আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া আল-আমীনকে গ্রেফতার করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’