পটুয়াখালীর কলাপাড়ার উমেদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। যৌন হয়রানির প্রতিবাদে আজ শনিবার (২৪ আগস্ট) অভিভাবক ও এলাকাবাসীরা তার কক্ষ ঘেরাও করলে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তাকে উদ্ধার করে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
অভিভাবক ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্রীকে স্কুল ছুটির পর যৌন হয়রানি করতেন শিক্ষক রেজাউল। গত প্রায় তিন বছর ধরে এ ধরনের কর্মকাণ্ড করে আসছেন তিনি। সর্বশেষ কোরবানীর আগে চতুর্থ শ্রেণির দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করে। ছাত্রীরা অভিভাবকদের কাছে ঘটনা খুলে বললে এ ঘটনার বিচার চাইতে একাধিক অভিভাবক প্রধান শিক্ষকের কক্ষ ঘেরাও করে। তারা বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে প্রধান শিক্ষকের শাস্তি দাবি করে। খবর পেয়ে কলাপাড়া থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।
হাসপাতালে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, শিক্ষক রেজাউল করিম হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বরিশাল রেফার করা হয়েছে।
গত কোরবানীর আগে নির্যাতনের শিকার হয়েছে চতুর্থ শ্রেণির দুই ছাত্রী। তাদেরই একজন সাহসীকা(১১) (ছদ্মনাম)। তার অভিযোগ, স্যার আমাকে ক্লাসের জানালা বন্ধ করতে বলে। আমি জানালা বন্ধ করে বের হওয়ার সময় স্যার আমাকে চেপে ধরে। আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হাত দেয়। এ সময় চিৎকার করলে আমার মুখ চেপে ধরে এবং পকেট থেকে পাঁচশ টাকার নোট বের করে এ ঘটনা কাউকে বলতে নিষেধ করে।
এ ছাত্রীর মা অভিযোগ করেন, তার মেয়ে বাসায় গিয়ে এ ঘটনা খুলে বলে। মেয়ে ভয়ে দুই দিন স্কুলে যায়নি। এ ঘটনা প্রতিবেশীসহ স্কুল কমিটির কাছে জানালেও তারা কোন ব্যবস্থা না নিয়ে ঘটনা চেপে যেতে বলে।
এ ছাত্রীর বোন অভিযোগ করে বলেন, আমার ছোট বোন ক্লাস ফোরে পড়ে। তাকেও যৌন হয়রানির চেষ্টা করেন প্রধান শিক্ষক। শিক্ষকের শাস্তির জন্য বিচার দিতে এসেছি।
পঞ্চম শ্রেণির একাধিক ছাত্রী অভিযোগ করে বলে, তারা যখন তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তো তখনও এভাবে স্কুল ছুটির পর স্যার রুমে আটকে আমাদের শরীরে হাত দিতো। তখন আমরা কিছু না বুঝলেও এখন বুঝতে পারি। এখনও স্যার আমাদের গায়ে হাত দেয়। প্রতিবাদ করলে টাকার লোভ দেখায়। সামনে পরীক্ষা তাই আমরা ভয়ে কিছু বলি না।
অভিভাবক গোলাম মোস্তফা জানান, তার নাতনী এ বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। প্রধান শিক্ষক ছাত্রীদের সাথে যে আচরণ করেছেন তা ক্ষমার অযোগ্য।
একই কথা বলেছেন স্থানীয় বয়োবৃদ্ধ হাতেম আলী সরদার। তিনি বলেন, ছোট ছোট মেয়েরা তারাও যদি স্কুলে এ ধরণের পরিস্থিতিতে পড়ে তাহলে কোথায় নিরাপদে থাকবে।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. মুসা খান বলেন, তাদের কাছেও অনেক অভিভাবক অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরাও জানেন। এজন্য প্রধান শিক্ষককে সতর্ক করা হয়েছিলো। কিন্তু আজতো সকল অভিভাবকই অভিযোগ নিয়ে এসেছে।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মো. রেজাউল করিমের কাছে যৌন হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দেননি তিনি। এমনকি তার সামনে ছাত্রীরা আঙ্গুল তুলে ঘটনার বর্ণনা করলেও তিনি চুপ করে থাকেন। এর কিছুক্ষণ পরই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।