রংপুরে অবৈধ কিন্ডারগার্টেনের রমরমা বাণিজ্য

রংপুর প্রতিনিধি |

রংপুর সিটি কর্পোরেশন ও সদর উপজেলায় গড়ে উঠেছে প্রায় তিন শতাধিক কিন্ডারগার্টেন। এসব প্রতিষ্ঠান কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে প্লে অনুমোদনহীন গ্রুপ থেকে পঞ্চম শ্রেণী ও তদূর্ধ্ব শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ভর্তি করাচ্ছে।

তাদের মানহীন শিক্ষা ব্যবস্থায় এসব শিশু শিক্ষার্থী প্রতারিত হচ্ছে। এসব শিক্ষার্থীর কাছে উচ্চহারে বেতন নির্ধারণ করে তা আদায় করা হচ্ছে অভিভাবকদের কাছ থেকে। একেকটি স্কুলে একেক রকম বেতন আদায় করা হয়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই অনুমোদহীন। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ বা সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেয় না তারা। ফলে রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এসব স্কুলে অবকাঠামো, খেলার মাঠ ও শ্রেণীকক্ষ নেই। শুধু তাই নয়, আড়াই-তিন হাজার টাকা বেতনে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে তাদের দিয়ে পাঠদান করা হয় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। কোনোটিতে মাত্র ৩-৪ জন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করা হচ্ছে। এসব জেলা বা উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তারা দেখে এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। এতে ব্যাঙের ছাতারমতো গড়ে উঠেছে এসব কিন্ডারগার্টেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রংপুর সিটি কর্পোরেশন ও সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে হরিদেবপুর ইউনিয়নের পাগলাপীরে কিন্ডারগার্টেন স্কুল ও কলেজের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

ইউনিয়নের হরিদেবপুর, শিবের বাজার ও পাগলাপীর এলাকায় মোট ৩৫টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। এছাড়া মমিনপুর ইউনিয়নের সেন্টারের হাট, মমিনপুর হাটসহ কয়েকটি স্থানে প্রায় ৩০টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। খলেয়া ইউনিয়নের খলেয়া, ধনতোলা, ক্লাব এলাকায় ৩০টির মতো কিন্ডারগার্টেন স্কুল চালু রয়েছে। চন্দনপাট ইউনিয়নের চন্দনপাট, লাহরিরহাট এবং সদ্যপুস্করিনি ইউনিয়নের পালিচড়া, সদ্যপুস্করিনি এলাকায় প্রায় ৫৫টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে।

প্রতিটি স্কুলে প্লে গ্রুপ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত প্রতিজন ছাত্রছাত্রীর কাছ থেকে ভর্তি ফি নেয়া হয় এক হাজার থেকে দুই হাজার টাকার ওপর। বেতন নেয়া হয় ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত। সেশন ফি ১ হাজার টাকা। মাসিক পরীক্ষার ফি ২০০ থেকে সাড়ে ৩০০ টাকা। এ ছাড়া রয়েছে কোচিং ফিসহ নানা ধরনের ফি। পাগলাপীরের বাসিন্দা সেলিম মিয়া নামের একজন অভিভাবক জানান, একটি কেজি স্কুলে তার ছেলে পড়ে। প্রথম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থীর সেশন ফি ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮০০ টাকা।

তিনি এর প্রতিবাদ করলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক তাকে জানান, সবাই দিচ্ছে, আপনাকেও দিতে হবে। এটির কোনো নিয়ম ও নীতিমালা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি তাকে পরে জানাবেন বলে সরে পড়েন। রোকেয়া বেগম নামের একজন অভিভাবক জানান, কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোর শিক্ষকরা এখনও ছাত্র। ছাত্র পাঠদান করে কীভাবে মেধাবী শিক্ষার্থী বের করবে?

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আকতারুজ্জামান জানান, তাদের কাছ থেকে সদর ও সিটি এলাকা থেকে ২৮১টি কিন্ডারগার্টেন সরকারি বই নিয়েছে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী বই থেকে যাতে বঞ্চিত না হয় সে আলোকে তারা বই পেয়ে থাকে। ২০১৯ সালে আরও কয়েকটি নতুন প্রতিষ্ঠান বই নিতে এলে তারা বই দেননি বলে জানান। রংপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত সাদিয়া সুমি জানান, অনুমোদনহীন এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ওপর থেকে নির্দেশ দিলে অচিরেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048141479492188