দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি: বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অসাম্প্রদায়িক চেতনা, গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধ এবং দেশপ্রেমে প্রভাবিত হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
তিনি বলেছেন, বঙ্গবন্ধু সারাজীবন কৃষক, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের মুক্তির জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন, আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতা, গল্প, গান, সাহিত্য ও শিল্পকর্মে দরিদ্র কৃষক ও শ্রমিকের মুক্তির গান গেয়েছেন। তারা উভয়ই অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ, উগ্র জাতীয়তাবাদ পরিহার এবং আত্মশুদ্ধির পন্থা অবলম্বন করেছেন।
উপাচার্য বলেন, পৃথিবী যতদিন থাকবে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কর্ম, চিন্তা-ভাবনা, আদর্শ ও দর্শন ততদিন বেঁচে থাকবে।
বুধবার (৮ মে) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে কবিগুরুর ১৬৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘সোনার বাংলা স্বপ্ন ও বাস্তবতা: রবীন্দ্রনাথ থেকে বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথের চিন্তা-চেতনায় প্রভাবিত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসাম্প্রদায়িক চেতনা, গণতান্ত্রিক ও মানবিক মূল্যবোধ, দেশপ্রেম, মাটি ও মানুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা নিয়ে সারাজীবন আন্দোলন-সংগ্রাম ও অপরিসীম ত্যাগের মাধ্যমে আমাদের স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন।
উপাচার্য আরও বলেন, মানুষকে ভালোবেসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া নাইটহুট উপাধি ত্যাগ করেছিলেন। ঠিক তেমনই নিজের জন্য খোঁড়া কবরের সামনে দাঁড়িয়েও পাকিস্তানি শাসকদের সঙ্গে বাঙালির অধিকার প্রতিষ্ঠা ও মুক্তির ব্যাপারে আপস করেননি বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু ও রবীন্দ্রনাথের দর্শন ও চিন্তা-ভাবনায়ও অপূর্ব মিল রয়েছে।
প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার কবিতা ও সাহিত্যকর্মে সমাজের নানা অসঙ্গতি, কুসংস্কার, বৈষম্য, মানুষের কষ্ট, প্রকৃতি, পরিবেশ, মানবপ্রেমসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন। বঙ্গবন্ধু এবং রবীন্দ্রনাথ উভয়ই উগ্র জাতীয়তাবাদ বিরোধী ছিলেন। উভয়ই বিশ্বাস করতেন উগ্র জাতীয়তাবাদ সমাজে সংঘাত সৃষ্টি করে। অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ প্রতিষ্ঠায় রবীন্দ্রনাথের চিন্তা-ভাবনা ও দর্শন সবার সামনে সবসময় তুলে ধরতে হবে।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. সৈয়দ আজিজুল হক মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন। তিনি বলেন, সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু ও রবীন্দ্রনাথের ভাবনায় ও কর্মে অনেক মিল ছিল। বাঙালির ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ে আত্মশক্তি অর্জনে উভয়ই সোচ্চার ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ সৃজনশীল কাজগুলো তৎকালীন পূর্ববঙ্গের গ্রাম্যজীবন ও পদ্মাপাড়ের মানুষের জীবন নিয়ে রচিত। তিনি যেমন লেখনির মাধ্যমে মানুষের চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন করে সমাজ সংস্কার করতে চেয়েছেন, তেমনই বঙ্গবন্ধু দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে অপরিসীম ত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় এককভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
আলোচনা পর্ব শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংগীত বিভাগ ও নৃত্যকলা বিভাগের যৌথ উদ্যোগে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।