রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ বাবুল আক্তারের সোর্স মুছা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডে তদন্তের গতি পাল্টানো চরিত্র কামরুল ইসলাম মুছা। তবে মিতুর স্বামী তৎকালীন পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল    

আক্তারের এক সময়ের কাছের এই সোর্স ঘটনার পর থেকে রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ আছেন। এই বিষয়ে স্ত্রী পান্না আক্তারের দাবি, ঘটনার ১৭ দিন পর পুলিশ এসে তার স্বামীকে বাসা থেকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার আর খোঁজ পাচ্ছেন না পরিবার। তবে পুলিশ বলছে, আসামি মুছা ঘটনার পর থেকে পলাতক আছেন। তাকে ধরার চেষ্টা চলছে।  জানা যায়, মুছা মূলত উত্তর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার বাসিন্দা। এক সময় তিনি সৌদি আরব  থাকতেন। ২০০৩ সালে তিনি দেশে চলে আসেন।

এরপর ২০০৮ সাল থেকে নগরীর কালা মিয়া বাজার এলাকায় সপরিবারে বসবাস করতে শুরু করেন। সেখানে তার বালুর ব্যবসা ছিল। পাশাপাশি রাঙ্গুনিয়ায় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর হয়ে বিএনপি’র রাজনীতি করতেন। একপর্যায়ে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর ২০১৩ সাল থেকে তিনি বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে কাজ করতে থাকেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাবুল আক্তারের পরিবারের নানা বিষয়ও জানতেন মুছা। তাকে দিয়ে বাবুল আক্তার অনেক কাজ করাতেন। সর্বশেষ মিতুকে হত্যা করতে তাকে দিয়ে খুনিদের সঙ্গে তিন লাখ টাকায় চুক্তি করেন বাবুল আক্তার। হত্যাকাণ্ডের পরের দিন চুক্তির এই টাকা বাবুলের নিকটাত্মীয় সাইফুলের মাধ্যমে মুছার এক আত্মীয়ের কাছে পৌঁছে দেন বাবুল।

জানা যায়, মিতু হত্যাকাণ্ডের ১৭ দিন পর ২২শে জুন মুছাকে বন্দর থানা এলাকায় এক আত্মীয়ের বাসা থেকে পুলিশ পরিচয়ে উঠিয়ে নেয়া হয়। এরপর থেকে তার আর কোনো সন্ধান পাচ্ছেন না পরিবার। এটি নিয়ে বিভিন্ন জনের কাছে ধরনা দিয়েও স্বামীর সন্ধান পাননি স্ত্রী পান্না। সে সময় স্বামীর সন্ধান চেয়ে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনও করেছিলেন তিনি। একপর্যায়ে ওই বছরের ৬ই অক্টোবর সিএমপির তৎকালীন কমিশনার ইকবাল বাহার মুছার সন্ধান দিতে পারলে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা দেন। যদিও এটা ছাড়া পুলিশের তেমন কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। তবে পিবিআইয়ের তদন্তে প্রতিবেদন জমা দেয়া ও বাবুল আক্তারকে আসামি করে শ্বশুর মোশাররফ হোসেনের মামলা করার পর থেকে মুছার বিষয়টি আবার উঠে আসে। সবার এখন প্রশ্ন, বাবুল আক্তারের সেই সোর্স মুছা এখন কোথায় আছেন।

এ বিষয়ে মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার বলেন, মিতু হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ অভিযান শুরু করলে মুসা কয়েকদিন আত্মগোপনে চলে যায়। পরে তিনি আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নেন। একপর্যায়ে ২২শে জুন একটি টিএন্ডটি নাম্বার থেকে বাবুল আক্তার তাকে ফোন দিয়ে সাবধানে থাকতে বলেন। সেদিন রাতেই পুলিশ এসে তার সামনে হাতকড়া পরিয়ে মুছাকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার আর কোনো খবর নেই।

তিনি বলেন, ‘মুছাকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর আমি রাঙ্গুনিয়া থানায় জিডি করতে যাই। কিন্তু সে সময় আমার জিডি নেয়া হয়নি। বলা হয়েছিল, যেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সেখানে যান। এ ছাড়া বিভিন্ন নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে এই বিষয়ে কোনো কথা না বলতে আমাকে হুমকি দেয়া হচ্ছিল। পরে আমার দুই শিশু সন্তানের জীবনের কথা চিন্তা করে আমি এই বিষয়টি সে সময় কাউকে জানাইনি।’

মুছার স্ত্রী পান্না বলেন, আমার স্বামী যদি সত্যিকারে অপরাধ করে থাকেন, তাহলে তার জন্য তো আইন-আদালত আছে। তারা বিচার করবেন। কিন্তু একটি জলজ্যান্ত মানুষকে এ ভাবে গুম করে ফেলা হলো। এখন সন্তানদের নিয়ে আমরা কার কাছে যাবো। কার কাছে বিচার চাইবো।’

তিনি বলেন, ‘আমার স্বামীর পাসপোর্ট ছিল। সে যদি সত্যিই পালিয়ে যেতেন তবে বাসা থেকে পাসপোর্ট নিয়ে যেতেন। কিন্তু সেটি এখনো তাদের বাসায়। সন্তানদের খোঁজ নিতেন, কিন্তু তার কিছু হচ্ছে না। এর মানে হচ্ছে আমার স্বামী পুলিশের কাছেই আছেন। আমি আমার স্বামীর সন্ধান চাই।’

পান্না বলেন, ‘গত বছরের নভেম্বর মাসে মুছার ব্যাপারে জানতে তদন্ত কর্মকর্তারা আমার বাড়িতে এসেছিলেন। সে সময় আমি যা যা জানি সব বলেছিলাম। এখন বাবুল আক্তারকে আটক করা হয়েছে। তাই আমি সাহস করে প্রকাশ্যে সব বলছি। আমি আশা করছি, এখন আমার স্বামীকে উদ্ধার করা হবে।

তবে মুছাকে পুলিশ আটক করে নিয়ে গেছে বলে স্ত্রী পান্নার দাবি নিয়ে জানতে এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ইন্সপেক্টর সন্তোষ কুমার বলেন, মুছার স্ত্রীর এই কথা সত্য নয়। তিনি এতদিন পর এসে এই কথা কেন বলছেন সেটি কোনোভাবেই বোধগম্য হচ্ছে না। তবে মুছাকে আটকের চেষ্টা চলছে।’

এদিকে গত ১৩ই মে মুছার বড় ভাই সাইদুল ইসলাম সিকদার শাকু (৪৫)কে রাঙ্গুনিয়া থেকে আটক করে র‌্যাব-৭। এর একদিন আগে বাবুল আক্তারের শ্বশুরের দায়ের করা মামলায় তিনি সাত নম্বর আসামি ছিলেন। তার বিরুদ্ধে মিতুকে হত্যার সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি সরবরাহের অভিযোগ রয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ই জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুল বাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় খুন হন পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। জঙ্গিরাই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে শুরুতে এই পুলিশ কর্মকর্তা সবার কাছে উপস্থাপন করেন। এ নিয়ে সে সময় সাধারণ মানুষেরও বেশ সহানুভূতিও আদায় করেন তিনি। তবে ঘটনাস্থলের প্রাপ্ত সিসিটিভি ফুটেজে তার সোর্স মুছার উপস্থিতি ও একটি ফোনালাপে হঠাৎ পাল্টে যায় দৃশ্যপট। স্বয়ং বাবুল আক্তারই যে হত্যাকাণ্ডের মূল কারিগর সেটি প্রকাশ্যে চলে আসে তদন্তকারী সংস্থার কাছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই - dainik shiksha একাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু ৩০ জুলাই শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha শূন্যপদের ভুল চাহিদায় শাস্তি পাবেন কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন - dainik shiksha সাড়ে ৪ মাসে ১৮৮ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা, বিশেষজ্ঞরা যেসব বিষয়কে দায়ী করছেন শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ - dainik shiksha শতভাগ ফেল স্কুল-মাদরাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থার উদ্যোগ দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত শিক্ষা কর্মকর্তা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল - dainik shiksha শ্রীপুরে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর ভাইয়ের প্রার্থিতা বাতিল এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha বিএনপি-জামায়াত মানুষের প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ করে দেয় : প্রধানমন্ত্রী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053548812866211