দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: দশ মার্চ, সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো এক দৃশ্য। মধ্যরাতে পাঞ্জাবি পরা এক বৃদ্ধ রাস্তা থেকে কিছু একটা তুলছেন। তুলে বস্তুটা নিজের ঝোলার মধ্য রাখতেই বোঝা গেল, সেটা ভারী কিছু। এরপর কুঁজো হয়ে হেঁটে সেই মানুষটি যান এলিফেন্ট রোডের বাটা সিগন্যাল থেকে গাউছিয়া মার্কেটের দিকের সড়কে। ফুটেজে দেখা যায়, ভোরের আলো ফোটার আগেই সেখানে কিছু একটা ঘটিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
রহস্যময় কী এমন কাজ করেছিলেন বৃদ্ধ? এর উত্তর পাওয়া যায় পরদিন। সকালে সেই সড়কের ফুটপাতে মুখমন্ডল থেতলানো একটি মরদেহ মেলে। শনাক্ত হয়, লাশটি মামুন নামের একজনের। হাতকাটা ভিক্ষুক মামুনকে ‘কাটা মামুন’ নামেই সবাই চেনে। মরদেহের পাশে পাওয়া যায়, রক্তমাখা একটা কংক্রিট স্ল্যাবের অংশ। এটা একটা খুন, নিশ্চিত হয়ে তদন্তে নামে নিউমার্কেট থানা পুলিশ।
ডিএমপি রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার আশরাফ হোসেন বলেন, মুখ থেতলে দিয়েছে একেবারে। চেনাও কঠিন। এটির পেছনে অন্য কোনো রহস্য আছে কিনা। আমাদের মধ্যে সন্দেহ জেগেছিল, সে বড় কোনো ক্রাইম দেখে ফেলেছিল। তাই ক্রিমিনালরা তার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য এই কাজ করে থাকতে পারে। এই চিন্তা থেকে আমার অফিসারদের ‘অন বোর্ড’ করা হয়েছে। এটার রহস্য অনতিবিলম্বে বের করতে হবে বলে আমি নির্দেশ দেই।
তদন্তে নেমে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে সাদা পাঞ্জাবি পরা সেই বৃদ্ধকে সন্দেহ করে পুলিশ। এরপর ৫/৭টি স্পটের ভিক্ষুকদের মধ্যে সাঁড়াশি অভিযান চালায় পুলিশ। শনাক্ত হয় অভিযুক্তের নাম হোসেন। তিনিও এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় ভিক্ষা করেন।
উপ-কমিশনার আশরাফ হোসেন বলেন, তাকে একজন একটা চায়না লাঠি (ক্রাচ) গিফট করেছিল। সেই লাঠিটি বিক্রি করে দেয় নিহত ‘কাটা মামুন’। এ থেকে দুজনের মধ্যে ঝগড়া ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে একারণে মামুনকে হত্যা করে বৃদ্ধ হোসেন।
গ্রেফতারের পর অপরাধ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন অভিযুক্ত হোসেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তের পরিবার বা আত্মীয়-স্বজনের কোনো খোজঁ পাওয়া যায়নি। তাই মরদেহ উদ্ধারের পর পুলিশ বাদি হয়ে মামলা করেছে।