রাজধানীর তাপমাত্রা উঠছে ৪১ ডিগ্রিতে, গলছে রাস্তার পিচ

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক:  দক্ষিণ ঢাকার সবচেয়ে উষ্ণতম স্থান গুলিস্তান আর উত্তরে মহাখালী। এখানকার তাপমাত্রা উঠছে ৪০ থেকে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। এ ছাড়া হিট পকেটে পরিণত হয়েছে ধানমন্ডি, বনানী, বারিধারা, গুলশান, মতিঝিল এই চার এলাকা। তীব্র দাবদাহ ও প্রখর রোদে গলে যাচ্ছে রাস্তার পিচ। এতে যান চলাচল ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। 

রাজধানীসহ সারা দেশে তাপপ্রবাহে নাকাল জনজীবন। প্রচণ্ড গরমে গলে যেতে শুরু করেছে রাস্তার পিচ। কোথাও কোথাও গাড়ির চাকা ও পথচারীদের জুতার সঙ্গে উঠে আসছে পিচের আস্তরণ। রাজধানীর হিট পকেটগুলোতে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ আবাসিকের ব্যবহার করা এসি, যানবাহন, চুলা তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটি বড় কারণ।

বুধবার দুপুর ১২টা। মাপা হচ্ছিল রাজধানীর বেইলি রোডে তাপমাত্রা। গনগনে রোদে মাল্টি মিটারে দেখা গেল পারদ উঠছে ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। অথচ সাত বছর আগে এপ্রিলে এখানে তা ছিল ৩৫ ডিগ্রি। আবার ২০১৭-তে যে রমনা পার্কে উষ্ণতা ছিল ৩২ ডিগ্রি, এখন তা পৌঁছেছে ৩৯ ডিগ্রিতে। আর মহাখালীতে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে সাড়ে ৭ ডিগ্রি। 

সেন্টার ফর অ্যাটমোস্ফেরিক পলিউশন স্টাডিজের (ক্যাপস) গবেষণা বলছে, মতিঝিল, গুলিস্তান, ধানমন্ডি, মহাখালী, ফার্মগেট, তেজগাঁও, মিরপুর ১০, হাতিরঝিলসহ ১৬ স্থানে তাপমাত্রা অনুভূত হয় বেশি। এসব এলাকায় সাত বছরে গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

প্রায় সাড়ে তিন শ কিলোমিটার আয়তনের ঢাকায় থাকছেন ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ মানুষ। রান্নার জন্য জ্বলছে ৫০ লাখ ইউনিট চুলা। যেখানে ১৫ লাখ এসি ইউনিট ব্যবহার করা যাবে সেখানে এসি চলছে ৬০ লাখ। দুই কোটি নগরবাসীর চলাচলে সড়কে ১৬ লাখেরও বেশি গাড়ি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কাঁচের ভবন।

স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান ড. কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, রাজধানীর গুলশান, বনানী, উত্তরা, তেজগাঁও ও মতিঝিলে শতশত কাঁচের ভবন এখন তো তাপমাত্রা বাড়াচ্ছেই। সামনে আরও সংকটের ঝুঁকি তৈরি করছে।

এদিকে গত ১০ দিন ধরে যশোর, রাজশাহী, গাজীপুর, খুলনা, চুয়াডাঙ্গা ও পাবনার তাপমাত্রা থাকছে ৩৮ থেকে ৪২ ডিগ্রির ঘরে। এর প্রভাবে বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কের পিচ গলে যাচ্ছে। এতে রাস্তায় মাঝেমধ্যেই আটকে যাচ্ছে গাড়ির চাকা। বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি।

গাড়ি চালকেরা বলছেন, প্রচন্ড গরমে রাস্তা উত্তপ্ত হয়ে থাকে। সূর্যের তাপে পিচ গলে পিচ্ছিল হয়ে পড়েছে। এ কারণে গাড়িতে অনেক সময় ব্রেক দিলে তা কাজ করে না। বাড়ে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। এ ছাড়া রাস্তার পিচ গাড়ির চাকা অনেক সময় টেনে ধরে। এতে চাকা বিস্ফোরণের ঝুঁকিও বেড়েছে।

উত্তপ্ত মাস এপ্রিল ও মে। এই সময়ে সহনীয় তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৯ ডিগ্রিতে। অথচ ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দে এপ্রিলে রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক দুই ডিগ্রি। এ বছর কালবৈশাখী কম হওয়ায় বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি। এতে আরও অসহনীয় হয়েছে পরিস্থিতি।

জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক জানান, সাধারণত এপ্রিল মাসে কালবৈশাখী ঝড় হয়। গড়ে ১১ বার এ ঝড় হয়ে থাকে। তবে এবার ঝড়ের সংখ্যা অনেক কম। যার কারণে তাপমাত্রা বেশি।

অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আশরাফ দেওয়ান বলেন, ঢাকা বা বড় শহরগুলোতে এসির ব্যবহার বেড়েছে। মানুষ এখন সাময়িক আরামের জন্য দেশের সার্বিক পরিবেশের কথা ভাবছে না। এ ছাড়া দেশের বড় শহরগুলোতে যেসব উন্নয়ন হচ্ছে তা পরিবেশবান্ধব নয়। ফলে উন্নয়নের সাথে বাড়ছে তাপমাত্রা। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030498504638672