এমপিও নীতি উপেক্ষিতরাজশাহীতে থ্রিইন ওয়ান কৌশলে শিক্ষাব্যবসা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সহকারী শিক্ষক, অধ্যক্ষ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক- তিন তিনটি পদ হলেও এ এইচ এম কামরুজ্জামান মুকুল নামে এক ভদ্রলোক তিনটি পদ একাই ধারণ করেন। তিনি একটি স্কুলে চাকরি করেন। এমপিওভুক্ত হয়ে বেতন নেন। তবু রাজশাহীতে খুলে বসেছেন নিজের একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এগুলো তিনি চালাচ্ছেন ‘থ্রি ইন ওয়ান’ কায়দায়। বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার কিছুই মানেন না তিনি। তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। অভিযোগ গেছে দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক)। কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে আট ধরনের অভিযোগ এনে ওই অভিযোগপত্রে তাকে একজন ‘শিক্ষা ব্যবসায়ী’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কামরুজ্জামান অবশ্য তার বিরুদ্ধে তোলা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। কামরুজ্জামান চারঘাট উপজেলার নন্দনগাছী এলাকার জোতকার্তিক বি এন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তবে রাজশাহী মহানগরীর সিটি টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ তিনি। এ ছাড়া তিনি সিটি পলিটেকনিক অ্যান্ড টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমপিও নীতিমালার ১৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, বেতন-ভাতাদির সরকারি অংশপ্রাপ্তির জন্য শিক্ষক-কর্মচারীরা একই সঙ্গে একাধিক স্থানে চাকরিতে বা আর্থিক লাভজনক কোনো পদে নিয়োজিত থাকতে পারেন না।

রাজশাহী মহানগরীর নিউমার্কেট-সংলগ্ন এলাকায় চান অ্যান্ড সন্স শপিং কমপ্লেক্সে তার দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস। ভবনের পঞ্চম তলায় কামরুজ্জামানের পলিটেকনিক ও টেক্সটাইল এবং ষষ্ঠ তলায় স্কুল অ্যান্ড কলেজ। দুটি প্রতিষ্ঠানেরই আলাদা সাইনবোর্ড আছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, একই ভবনে থাকলেও দুটি প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা আলাদা। স্কুল অ্যান্ড কলেজের জন্য রাজপাড়া থানার সিটি বাইপাস এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। আর পলিটেকনিকের ঠিকানা বোয়ালিয়া থানার চান শপিং কমপ্লেক্স। অথচ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নীতিমালায় বলা আছে, একই ভবনে একাধিক ক্যাম্পাস থাকতে পারবে না।

স্কুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে কথা হয় সেখানকার সহকারী শিক্ষক আবদুল হান্নানের সঙ্গে। তিনি জানান, স্কুল অ্যান্ড কলেজ যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন তার ক্যাম্পাস রাজপাড়া থানা এলাকায় ছিল। সেখানকার ঠিকানায় প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন করা হয়েছে। পরে তাদের সুবিধার জন্য প্রায় ২৫০ জন শিক্ষার্থীসহ ক্যাম্পাসটি নিউমার্কেট এলাকায় আনা হয়। কিন্তু বোর্ডের অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত সাইনবোর্ড থেকে ঠিকানা পরিবর্তন করা যায় না। তাই সাইনবোর্ডে রাজপাড়া থানারই ঠিকানা আছে।

অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, নগরীর রাজপাড়া থানা এলাকায় আদর্শ মহিলা টেকনিক্যাল ও বিজনেস ম্যানেজমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে কামরুজ্জামানের আরেকটি প্রতিষ্ঠান আছে। কামরুজ্জামানের স্ত্রী মারুফা খানম সেখানকার অধ্যক্ষ। অন্য দুটি প্রতিষ্ঠানেও বসে আছেন নিকটাত্মীয়রা। গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে আছেন কামরুজ্জামানের শ্যালক ফারহান শাহরিয়ার খান হেলাল। শ্যালিকা শরিফা খানমও আছেন সহকারী শিক্ষক পদে। অভিযোগে বলা হয়েছে, শরিফা খানম শুধু উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ। তবে দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটি থেকে সনদ কিনে তিনি দাখিল করেছেন। সনদ বাণিজ্যের কারণে হাই কোর্ট ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিজের প্রতিষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত থাকায় কামরুজ্জামান চারঘাটের স্কুলে ঠিকমতো যান না। তবে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন নিয়মিত। বেতনও তোলেন প্রতি মাসে। আর কামরুজ্জামানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে সনদ বাণিজ্যেরও অভিযোগ আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা তেমন একটা আসে না। তাই ঠিকমতো ক্লাসও হয় না। নেই প্রয়োজনীয় শিক্ষক। আর যারা আছেন তাদের যোগ্যতা নিয়েও আছে প্রশ্ন। এসব প্রতিষ্ঠান খুলে কামরুজ্জামান শিক্ষা নিয়ে রীতিমতো ‘বাণিজ্য’ করছেন। তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকায় এ বছর সিটি টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট স্কুল ও কলেজের পরীক্ষা কেন্দ্র বাতিল করা হয়েছে।

এ এইচ এম কামরুজ্জামান মুকুল বলেন, ‘আমি একাধিক প্রতিষ্ঠানের পদে থাকলেও সরকারি বেতন তুলি এক জায়গা থেকে। আমার প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার বিস্তারের জন্যই খুলেছি। সনদ বাণিজ্যের অভিযোগ সত্য নয়।’ একই ভবনে একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা নতুন জায়গা খুঁজছি। পেলে একটিকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেব। দুটি প্রতিষ্ঠান এখন এক জায়গায় থাকার বিষয়টি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডকে অবহিত করা আছে।’

তবে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সহকারী সচিব (প্রশাসন) কে এম ওয়াইদুর রহমান বলছেন, ‘একই ভবনে একাধিক প্রতিষ্ঠান থাকার কোনো সুযোগ নেই। আর এমপিওভুক্ত কোনো শিক্ষকও নিজে প্রতিষ্ঠান খুলে কোনো পদে থাকতে পারবেন না। এটা নীতিমালার পরিপন্থি।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0022909641265869