দৈনিক শিক্ষাডটকম, রাজশাহী : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র বিরোধী বক্তব্য দেয়ায় রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদকে কারণ দর্শানো নোটিশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। গত ১৯ মার্চ তারিখের আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানো সেই নোটিশ প্রদান করা হয়েছে।
ওই নোটিশের অনুলিপি প্রদান করা হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেনসহ রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এর নিকট।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর একের পর এক বেফাঁস কথাবার্তা, প্রতিপক্ষের ওপর সহিংস কর্মকাণ্ড পরিচালনাসহ নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিতর্কের জন্ম দিয়ে চলেছেন এমপি আবুল কালাম আজাদ। এবার আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র, দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও হাইকমান্ড সম্পর্কে তার বিরূপ মন্তব্যে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগে। হয়েছে পত্রিকার শিরোনাম।
গত ১৩ মার্চ বাগমারায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর কমপ্লেক্সে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সদ্য নির্বাচিত এমপি আবুল কালাম আজাদ।
এ সময় তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রীও কিন্তু চান সব সময় সবলের পক্ষে থাকতে। আমরা যারা সবল বা মেজরিটি তারা যেদিকে যাব সেটাই আইন। শেখ হাসিনাও এই যে গত নির্বাচন করলেন এটা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চলে না। গঠনতন্ত্রের বাইরেও অনেক কিছু প্রয়োজন। প্রয়োজনতন্ত্র আছে একটা। এই প্রয়োজনতন্ত্র অনুযায়ী আগামী সম্মেলন হওয়া পর্যন্ত চলব আমরা।’
তার এই বক্তব্যের একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দেয়। এমপি আবুল কালাম আজাদের একের পর এক অশালীন বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ালে তা কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নজরে আসে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় পদে থেকে সংগঠনের পাশাপাশি দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে কটাক্ষ করে সংগঠন বিরোধী ওই সকল বক্তব্যের কারণে আবুল কালাম আজাদ এমপিকে কারণ দর্শানো নোটিশ প্রদান করা হয়।
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, আবুল কালাম আজাদ এমপির ওই সকল বক্তব্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। শিষ্টাচার বহির্ভূতভাবে প্রদত্ত বক্তব্য সংগঠনের শৃংখলা বিরোধী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সংগঠন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এমন ঘটনায় কেনো আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে শাস্তিযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার ব্যাখ্যাসহ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে লিখিত জবাব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রেরণের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির আরেক সভায় এমপি আবুল কালাম আজাদ দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং দলের গঠনতন্ত্র নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছিলেন।
এ ব্যাপারে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বাগমারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল কুমার সরকার বলেন, ‘দলের প্রধান এবং দলীয় গঠনতন্ত্র সম্পর্কে এমপি কালামের বক্তব্য চরম ঔদ্ধত্যপূর্ণ। এমন বক্তব্য দেয়ার এখতিয়ার তার নেই।’ তিনি বলেন, ‘কালাম অগঠনতান্ত্রিক ভাবে বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের অব্যাহতির সুপারিশ করেছেন। তিনি এটা করতে পারেন না। এসব বিষয় আমরা দলের হাইকমান্ডকে অবগত করেছি। আশা করছি, অচিরেই হাইকমান্ড তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।’
তবে এসব বিষয়ে জানতে এমপি আবুল কালাম আজাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া মেলেনি।