ভারতের রাজস্থান রাজ্যের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ৪৩ হাজারের বেশি জাল সনদ দিয়েছে। এমনকি এমন সব বিষয়ের ওপর ডিগ্রির সনদ বিতরণ করেছে, যার অনুমতি তাদের ছিল না। সব মিলিয়ে ৪৩ হাজার ৪০৯টি সনদ ইস্যু করেছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। অবশেষে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে রাজস্থান পুলিশ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুসারে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির নাম ওম প্রকাশ যোগিন্দর সিং বিশ্ববিদ্যালয়। প্রাথমিক তদন্ত অনুসারে, ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে রাজ্যের চুরুতে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টি এই ৪৩ হাজার ৪০৯টি জাল বা ভুয়া সনদ ইস্যু করেছে।
বছর দু–এক আগে, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইনস্ট্রাক্টর (পিটিআই) পরীক্ষার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা ১ হাজার ৩০০ জন আবেদনকারী তাঁদের সনদ জমা দেওয়ার পর বিষয়টি সামনে আসে। গত ৪ এপ্রিল বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ।
সরকারি অনুমোদন অনুসারে, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে মাত্র ১০০টি আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর অনুমতি দেয়া হয়েছিল এবং ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের আগে যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছিলেন তাঁরাই কেবল ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের পিটিআই পরীক্ষার জন্য যোগ্য ছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, এসব শিক্ষার্থীর অনেকের ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রকৃত সনদ ইস্যু করেনি।
বিভিন্ন সরকারি ভর্তি ও নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা যোগিন্দর সিং দালালকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের পরই এই বিষয়টি সামনে আসে।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ভিসার আবেদনের জন্য স্নাতক সনদের প্রয়োজন হলে অনেককেই বিশ্ববিদ্যালয়টি অনেক আগের তারিখ দিয়ে জাল সনদ দিয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অনেক অভিযোগ পেয়েছে পুলিশ।
রাজস্থান পুলিশের ডিআইজি প্যারিস দেশমুখ বলেন, ২০১৩ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ৭০৮টি পিএইচডি, ৮ হাজার ৮৬১টি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি এবং শারীরিক শিক্ষায় ১ হাজার ৬৪০ ডিগ্রি প্রদান করেছে। পুলিশ সন্দেহ করে যে প্রার্থীরা পিটিআই পরীক্ষাসহ প্রায় সাড়ে ৪ হাজার সরকারি চাকরির শূন্যপদ পূরণের পরীক্ষার জন্য আবেদনের জন্য ব্যাকডেটেড বা পূর্বতন তারিখ দিয়ে জাল সনদ ইস্যু করেছে।
সব মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টি ৪৩ হাজার জাল সনদ ইস্যু করেছে বলেও জানান প্যারিস দেশমুখ। তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়টিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যাও অনেক কম। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৩০ জনেরও কম কর্মচারী আছে। এত সীমিত সংখ্যক হলে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো সম্ভব নয়।’
সর্বশেষ পরিস্থিতির আলোকে গত ২৪ জুন রাজস্থান সরকারের উচ্চশিক্ষা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়টির সব কোর্সে নতুন করে ভর্তি বন্ধ করার আদেশ জারি করেছে। এর আগে, গত বছরের ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়টিকে সব পিএইচডি প্রোগ্রামে স্কলারদের তালিকাভুক্ত করতে বাধা দেয়।