রাবিতে ছাত্রলীগের নির্যাতনের প্রতিবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

রাজশাহী প্রতিনিধি |

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কৃষ্ণ রায় নামের এক ছাত্রকে হলের কক্ষে আটকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের সামনে আয়োজিত এ মানববন্ধনে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দেন। এতে অন্য বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা সংহতি জানিয়ে অংশ নেন।

বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শেখ ফাহিম আহমেদের সঞ্চালনায় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন, অধ্যাপক মোজ্জামেল হোসেন, কাজী মামুন হায়দার, সহকারী অধ্যাপক আবদুল্লাহিল বাকী ও শিক্ষার্থীদের পক্ষে নাদিম নিলয়, কামরুজ্জামান ফাহাদ, ফারজানা তন্বি, অপি করিম, সানজিদা ইয়াসমিন প্রমুখ বক্তব্য দেন। 

 

গত রোববার রাতে কৃষ্ণ রায়কে হল কক্ষে আটকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের হল শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. নাইম আলী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. সোলাইমানসহ ছাত্রলীগের সাত থেকে আটজনের বিরুদ্ধে। পরে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও হল প্রাধ্যক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন কৃষ্ণ রায়। অভিযোগে নির্যাতনের পাশাপাশি ওই শিক্ষার্থীকে শিবির আখ্যা দিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এই ঘটনায় হল প্রশাসন তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তবে এই ঘটনায় কৃষ্ণের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে।

অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার বলেন, ‘আজ এমন একটা পরিস্থিতিতে মানববন্ধন করছি, এই ঘটনা শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় নয়; বাংলাদেশে গত কয়েক দিনে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রকম ঘটনা ঘটেছে। চট্টগ্রাম মেডিকেলে দুজন শিক্ষার্থীকে শিবিরের তকমা দিয়ে রাতভর নির্যাতন করেছে। তাঁদেরকে যখন আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) রাখা হচ্ছে, তখন পর্যন্ত ছাত্রলীগের ছেলেরা গিয়ে বলছে, “যদি নাম বলিস তাহলে এখান থেকে আর বের হতে পারবি না।” ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের একটা মেয়েকে রাতভর নির্যাতন করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত তাঁকে বিবস্ত্র করে ভিডিও করা হয়েছে। কে করেছে? একজন ছাত্রলীগ নেত্রী। অদ্ভুত এই বাংলাদেশ।’

কৃষ্ণ রায়ের ওপর ছাত্রলীগের নির্যাতনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্ব র‍্যাঙ্কিং নিয়ে চিন্তা করছি, কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে পারছি না। নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে না। পরীক্ষা হলে ফলাফল হচ্ছে না। কৃষ্ণ রায়ের ওপর যে অমানবিক অত্যাচার করা হয়েছে, প্রায় মৃতের মতো অবস্থা তাঁর। কৃষ্ণের বাবা নেই, অসহায় পরিবার থেকে উঠে আসা। সে এই নির্যাতনের চিত্র ভুলবে কীভাবে? আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই। তা না হলে আমাদের আন্দোলন আরও তীব্র হয়ে উঠবে।’

অধ্যাপক মোজাম্মেল হোসেন বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় একটা শান্তিময় পরিবেশের জায়গা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যে আবাসিক হলে থাকেন, তা নির্যাতনের কেন্দ্র হয়ে উঠছে। এত দিন শুনে এসেছেন, হলগুলোয় টর্চার সেল মূলত গেস্টরুমে নির্যাতন। এখন গেস্টরুমের টর্চার ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন রুমে। সেখানে থাকা রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের রুমগুলোকে টর্চার সেল বানিয়ে ফেলেছেন।

অধ্যাপক আ-আল মামুন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় এমন কোনো হল নেই যেখানে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেনি। সরকার এক দিকে উন্নয়নের গল্প শোনাচ্ছে। কিন্তু সেই উন্নয়নের গল্পের উল্টো গল্পটা হচ্ছে, মানুষের জীবনের যে সম্মান, সেই সম্মান নিয়ে মানুষ বাস করতে পারছেন না। যাঁরা আজকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কিংবা ছাত্রলীগের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা হয়তো একটু সম্মান নিয়ে বাঁচেন। কিন্তু তা বাদে অন্য মানুষের আর কোনো সম্মান নেই। আজকে কৃষ্ণের সঙ্গে যেটা ঘটল, শিবির সন্দেহে তাঁকে যে সিট থেকে নামিয়ে দেওয়া হলো, মারা হলো। কিন্তু পরে হিন্দু জানার পরে বলল, “তোকে মারা আরও সহজ। তুই তো সংখ্যালঘু। তোকে মারলে কেউ কিছু করতে পারবে না।” এটা চলতে পারে না। তাঁরা এই ঘটনার বিচার চান।

বিভাগের শিক্ষক আব্দুল্লাহিল বাকী বলেন, ‘আজকে এই দাঁড়ানোটা আমরা শিখেছি যাঁদের কাছ থেকে, তাঁদের মধ্যে বর্তমান উপাচার্য একজন। আমরা চাই না তিনি আপসকেন্দ্র, সালিসকেন্দ্র বা মিউচুয়াল ট্রাস্ট খুলে বসে থাকবেন। পায়ে পড়ি, দয়া করে প্রশাসনে যাঁরা আছেন, যাঁরা নেতা, শিক্ষক আছেন তাঁরা হলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। আপনারা যদি মীমাংসা-আপস করেই যান, সামনে সারা দিনে আর কিছু করতে পারবেন না। আপস-মীমাংসা করতে করতেই কর্মঘণ্টা শেষ হয়ে যাবে।’

মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সপ্নীল রহমান বলেন, এমন ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়কে সুষ্ঠুভাবে চলার পথে অনেক বড় বাধা। এমন ন্যক্করজনক কর্মকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষী ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। তাহলেই দেখা যাবে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এমন ঘটনা আর ঘটবে না।

মানববন্ধন শেষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জোহা চত্বরে গিয়ে একই দাবিতে অনশনরত অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন। সেখানে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন অধ্যাপক আ-আল মামুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষক লাঞ্ছিত ও পদত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদ, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি বিটিএর - dainik shiksha শিক্ষক লাঞ্ছিত ও পদত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদ, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি বিটিএর মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি - dainik shiksha মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি আন্দোলনে অসুস্থ ১১ নার্সিং শিক্ষার্থী - dainik shiksha আন্দোলনে অসুস্থ ১১ নার্সিং শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই - dainik shiksha প্রধান শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই জলবায়ু পরিবর্তন মারাত্মক প্রভাব ফেলছে শিক্ষা খাতে - dainik shiksha জলবায়ু পরিবর্তন মারাত্মক প্রভাব ফেলছে শিক্ষা খাতে বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ - dainik shiksha বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য - dainik shiksha এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা - dainik shiksha অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর - dainik shiksha ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন - dainik shiksha বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী - dainik shiksha একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025701522827148