রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ইলেকট্রিক্যাল থেকে পাস করা এক ইঞ্জিনিয়ারকে সিভিল শাখার অন্তর্গত কাঠের কাজ দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে অভিজ্ঞতা না থাকায় আবু সুফিয়ান নামে ওই প্রকৌশলী কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন। এই পদ থেকে অব্যাহতি চেয়ে চিঠি দিলেও তা গ্রহণ করেননি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলছেন, ‘জনবল সংকট থাকায় তাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে তিনি কাজ শিখে যাবেন।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা বলছেন, দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রফেশনালিজম দেখা উচিত। অন্যথায় ভালোর চেয়ে খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভুক্তভোগী ও প্রকৌশল দফতর সূত্রে জানা যায়, গত ১৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক চিঠি দিয়ে সিভিল সেকশনে কাঠের আসবাপত্র ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়। চিঠি পাওয়ার পর নিজের এই সেক্টরে অনভিজ্ঞতার বিষয়টি উল্লেখ করে ফিরতি চিঠি দেন আবু সুফিয়ান। কিন্তু প্রধান প্রকৌশলী চিঠি গ্রহণ করেননি।
জানতে চাইলে প্রকৌশলী আবু সুফিয়ান বলেন, ‘আমি ইলেকট্রিক্যাল থেকে পড়াশোনা করেছি। সিভিলের কাজ করার কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। দায়িত্ব দেওয়ার পর প্রধান প্রকৌশলীকে চিঠি দিয়ে আমার দূর্বলতার দিকগুলো উল্লেখ করে এই দায়িত্ব থেকে অব্যহতি চেয়েছিলাম। কিন্তু সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা একাধিক দায়িত্বে রয়েছে উল্লেখ করে জোরপূর্বক আমাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কাঠ সংক্রান্ত কাজ করতে গিয়ে আমাকে বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। কারণ কোনটা কী কাঠ, কতটুকু দেওয়া হয়েছে; এগুলো কিছুই বুঝি না। তাছাড়া কোন কাজে কত টাকা ব্যয় হবে, তার স্টিমেট করতেও অন্যদের সহযোগিতা নিতে হয়। সেক্ষেত্রে কেউ যদি বাড়তি কিছু করে, সেটাও বুঝতে পারছি না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘জনবল সংকটে কাজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল তাই আপতত তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নতুন নিয়োগ হলে তাকে সরিয়ে নেওয়া হবে। তাছাড়া যে কাজ তার জন্য ইঞ্জিনিয়ারও লাগে না। যেকেউ এই কাজ করতে পারে।’
তবে নিয়োগ পাওয়া প্রকৌশলী আবু সুফিয়ানের দাবি প্রকৌশল দপ্তরে আরও সিভিল ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে। তারা অতিরিক্ত দায়িত্বও পালন করছেন না। চাইলে তাদের দায়িত্ব দেওয়া যেতো।
জোর করে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে প্রকৌশল দফতরের একাধিক প্রকৌশলীর সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। নাম প্রকাশ না করা শর্তে তারা বলেন, আবু সুফিয়ান যেহেতু এই কাজে অভিজ্ঞ নয়। তিনি কেবল সিগনেচার করেন। বাকি সবকিছু প্রধান প্রকৌশলী দেখভাল করেন। সেক্ষেত্রে তার অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা বলছেন, প্রকৌশল দফতর বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলোর একটি। এখানে দায়িত্ব বণ্টনের ক্ষেত্রে প্রফেশনালিজম দেখা উচিত। অন্যথায় ভালোর চেয়ে খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সফিকুন্নবী সামাদী বলেন, ‘যার যে সেক্টরে অভিজ্ঞতা বা স্পেশালাইজেশন তাকে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া উচিত। প্রফেশনালিজম দেখে নিয়োগ না দিলে ভালো ফলাফল আসবে না।’
নিয়োগ দেওয়া প্রকৌশলীর ফার্নিচার সংক্রান্ত অ্যাকাডেমিক পরিসরে কোনও পড়াশোনা নেই স্বীকার করে বিশ্বদ্যিালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘লোকবল সংকট থাকায় তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে যদি ওই প্রকৌশলী অপারগতা প্রকাশ করে চিঠি দিয়ে থাকে, প্রধান প্রকৌশলীর উচিত ছিল তা আমাদের জানানো। যেহেতু আমাদের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে। তাদের দায়িত্ব দেওয়া যেতো। আমি বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ নেবো।’