রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া সন্তানকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেলের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে নগরীর তালাইমারি এলাকার আমেনা ক্লিনিকে এ ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার সকালে ভুক্তভোগী শিশুর মা বাদী হয়ে নগরীর বোয়ালিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন।
অভিযুক্ত চিকিৎসক বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের উপ-প্রধান চিকিৎসক। তাঁর নাম ডা. রাজু আহমেদ। তবে অভিযুক্ত চিকিৎসকের ভাগনে রাসেল এর দাবি, একই দিনে রাত সাড়ে ১১টার দিকে তালাইমারি মোড়ে দুর্বৃত্তদের হামলায় ওই চিকিৎসক আহত হয়েছেন। দুর্বৃত্তদের হামলায় আহত হয়ে তিনি বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ভুক্তভোগী শিশুর মা বলছেন, ঘটনার সময় অভিযুক্ত ব্যক্তির সঙ্গে তার একটু হাতাহাতি হয়েছে। এ বিষয়টিকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি হামলার স্বীকার বলে চালাচ্ছেন এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ বিষয়ে আমি থানায় মামলা দায়ের করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন সেলেও অভিযোগ দায়ের করেছি। আমি অতি দ্রুত এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
ভুক্তভোগীর মা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, চিকিৎসক রাজু আহমেদের সঙ্গে তার (ভুক্তভোগীর মা) ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তিনি (অভিযুক্ত চিকিৎসক) তাঁকে বোন বলে ডাকেন। সেই সম্পর্কের জের ধরে তার মেয়েকে তাঁর নিকট নিয়মিত দাঁতের চিকিৎসা করান। সোমবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে নগরের তালাইমারী এলাকার আমেনা ক্লিনিকের নীচতলায় ওই চিকিৎসকের চেম্বারে তাঁর মেয়েকে চিকিৎসা করাতে যান। পরে রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে ভুক্তভোগীর মায়ের মুঠোফোনে কল আসলে তিনি কথা বলার জন্য চেম্বার থেকে বাইরে বের হন। এ সময় ওই চিকিৎসক তার মেয়ের শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। এতে তাঁর মেয়ে ভয়ে চিৎকার দেয়। এরপর তিনি ভেতরে প্রবেশ করলে তাঁর মেয়েকে কান্নারত অবস্থায় দেখতে পান এবং মেয়ের মুখে ঘটনার বর্ণনা শুনেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভুক্তভোগীর মা জানান, ওই ডাক্তারের কাছে তাঁর মেয়েকে দাঁতের চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে অভিযুক্ত ডাক্তার যৌন হয়রানিমূলক হেনস্তা করে৷ এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে দুজন দুজনের দিকে মারতে তেড়ে আসলে একটু হাতাহাতি হয়। পরে ওই চিকিৎসক হার্টের ব্যথায় বসে পড়েন। এ ঘটনাকেই অভিযুক্ত বিকৃত করে হামলা বলছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন সেলের প্রধান অধ্যাপক তানজিমা জোহরা হাবিব বলেন, আমি এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে, অভিযোগ পেলে দ্রুত এ বিষয়ে কাজ শুরু করব।
এ বিষয়ে নগরের বোয়ালিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে মঙ্গলবার সকালে একটি মামলা দায়ের করেছেন। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
অভিযুক্তের শাস্তি চেয়ে মানববন্ধন
অভিযুক্ত চিকিৎসক ডা. রাজু আহমেদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতকরণ ও স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুতের দাবিতে মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে মানববন্ধন কর্মসূচি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের দুই শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধন শেষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের কার্যালয়ে দেখা করেন। তারা অভিযুক্তের যথাযথ শাস্তির দাবি জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ভুক্তভোগী শিশুর পরিবার আমাদের সঙ্গে এসে দেখা করেছেন। আমরা একটি লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। অভিযোগ তদন্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তাছাড়া যেহেতু একটি মামলা করা হয়েছে। মামলাটি রাষ্ট্রীয় আইনি প্রক্রিয়ায় চলমান থাকবে।
মানববন্ধনে সংহতি জানিয়ে সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, তিনি একই ধরনের ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে ঘটাচ্ছেন। এর আগেও তার বিরুদ্ধে নারীদের শ্লীলতাহানি করার অভিযোগ উঠেছিল। যে নিজেকে সংযত রাখতে পারে না; তার শুধু চাকরি না, তার চিকিৎসার সনদ বাতিল করা দরকার। এ বিষয়ে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোবাররা সিদ্দিকা বলেন, আমাদেরকে একই দাবিতে বারবার রাস্তায় দাঁড়াতে হচ্ছে। আমরা সহকর্মী, শিক্ষক ও নারী হিসেবে কোথাও নিরাপদ নই। এটি অত্যন্ত দুঃখের নাকি লজ্জার বিষয়, কি বলবো বুঝতে পারছি না। যেহেতু একটি মামলা হয়েছে তাই রাষ্ট্রীয় আইনে আসামিকে অতি দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।
এছাড়া মানববন্ধনে বক্তব্য দেন আইন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল আলিম, রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক লায়লা আরজুমান বানু, রাজশাহী মহিলা আইনজীবী সমিতির অ্যাডভোকেট দিলসেতারা চুনি প্রমুখ।
এছাড়া কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন ফলিত রসায়ন ও রসায়ন প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক রিজাউল করিম শেখ, ড. তৌফিক আলম, ড. সৈয়দ এম এ ছালাম, ড. এ নাঈম ফারুকী, ড. ছাইফুল ইসলাম, ড. খাইরুল ইসলাম প্রমুখ।