রাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ পেতে জাল সনদে মাস্টার্সে ভর্তি

রাবি প্রতিনিধি |

আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব। বর্তমানে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক। রাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (আইআর) বিভাগে ২০১৪-১৫ সেশনে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। প্রথম বর্ষে কৃতকার্য হয়ে দ্বিতীয় বর্ষে উঠলেও গালিব দ্বিতীয় বর্ষ টপকাতে পারেননি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে একাডেমিক সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ড্রপআইট হন গালিব। ছাত্রত্ব না থাকলেও রাবি ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ পাওয়ার বাসনা তার রয়েই যায়। শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ পদ পেতে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পাসের ভুয়া সনদ সংগ্রহ করেন। এরপর রাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হন। সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রভাবশালী এক শিক্ষকের মাধ্যমেই ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে তিনি ভর্তি হন।

জানা যায়, ছাত্রলীগ নেতা গালিব ঢাকার উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত ‘অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে বিবিএ পাসের জাল সনদপত্র (রেজিস্ট্রেশন নম্বর-৭৭-০০১৩-১২৪) বানিয়ে রাবির সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হন। তাকে মাস্টার্স কোর্সে ভর্তিতে একই বিভাগের প্রভাবশালী শিক্ষক সহযোগিতা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অর্ডিন্যান্স’ অনুযায়ী, কোনো শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর ৬ বছর পর্যন্ত অন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখার সুযোগ পাবে না। গালিব ড্রপআউট হওয়ার পরও অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ পাসের সনদ সংগ্রহ করেন। ড্রপআউট হওয়ার পর কীভাবে গালিব অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪ বছরমেয়াদি বিবিএ কোর্স সম্পন্ন করে এই সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হলেন—এমন সন্দেহ থেকে অনুসন্ধানে নামা হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে তার সান্ধ্যকালীন মাস্টার্সে ভর্তির তথ্য চাওয়া হয়।

গত ৩ সেপ্টেম্বর বিভাগের সংশ্লিষ্ট সভাপতি অধ্যাপক ড. মুসতাক আহমেদ ‘অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ থেকে গালিবের নিয়ে আসা বিবিএর সার্টিফিকেট যাচাই করতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়। চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিনই অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কামরান চৌধুরী স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, গালিব ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেনি। এমনকি ৭৭-০০১৩-১২৪ রেজিস্ট্রেশন নম্বরে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সার্টিফিকেটটি জমা দিয়ে গালিব সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হয়েছে, সেটি ভুয়া। এ ছাড়া গালিবের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকা এবং অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র বহনের অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হয়েও অবৈধভাবে হলে থাকছেন তিনি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া এক ছাত্রীকে বিয়ে করেছেন।

আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব ড্রপআউটের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স করে রাবির সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্যকালীন মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছি। কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স করে সাংবাদিকতা বিভাগের সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হয়েছেন জানতে চাইলে গালিব এর কোনো সদুত্তর দেননি। 

অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. কামরান চৌধুরী বলেন, ২০ বছর থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয় সুনামের সঙ্গে পরিচালিত হচ্ছে। এই নামে (আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব) কোনো শিক্ষার্থী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেনি। রাবির সংশ্লিষ্ট বিভাগের সভাপতির চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা লিখিতভাবে জানিয়ে দিয়েছি, ওই শিক্ষার্থীর সার্টিফিকেটটি শতভাগ জাল ও ভুয়া।

গালিবের ভর্তির বিষয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাবশালী ওই শিক্ষক বলেন, এসব বিষয় সান্ধ্যাকালীন কোর্স কো-অর্ডিনেটর ও বিভাগের প্রধান দেখে থাকেন। আমি কারও ভর্তির জন্য সহযোগিতা করিনি। এ বিষয়ে জানতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুসতাক আহমেদকে অসংখ্যবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

রাবির উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়মের বাইরের কার্যক্রম খতিয়ে দেখা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে একাডেমিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করবে এবং অভিযুক্তকে শাস্তির মুখোমুখি করবে।

বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব ও রাবির ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মলয় ভৌমিক বলেন, ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে ভর্তি হলে তা সম্পূর্ণ অনৈতিক। কর্তৃপক্ষের যথাযথ যাচাই করে সান্ধ্য কোর্সে ভর্তির সুযোগ দেওয়া উচিত।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কমপ্লেইন বক্স বন্ধ - dainik shiksha গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কমপ্লেইন বক্স বন্ধ পদত্যাগে বাধ্য করা অধ্যক্ষকে ফুলেল শুভেচ্ছায় ফেরালেন শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha পদত্যাগে বাধ্য করা অধ্যক্ষকে ফুলেল শুভেচ্ছায় ফেরালেন শিক্ষার্থীরা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম দামে বিটিসিএলের ইন্টারনেট দেয়া হবে: তথ্য উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম দামে বিটিসিএলের ইন্টারনেট দেয়া হবে: তথ্য উপদেষ্টা শিক্ষকের ছোড়া স্কেলের আঘাতে শিক্ষার্থীর চোখ হারানোর অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষকের ছোড়া স্কেলের আঘাতে শিক্ষার্থীর চোখ হারানোর অভিযোগ দুই শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে বাউবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha দুই শিক্ষকের বহিষ্কারের দাবিতে বাউবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ হলগুলোকে সন্ত্রাসমুক্ত করে ছাড়বো : রাবি উপাচার্য - dainik shiksha হলগুলোকে সন্ত্রাসমুক্ত করে ছাড়বো : রাবি উপাচার্য কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030381679534912