হিরো আলমের ওপর হামলায় ঘটনায় ১২টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ বিবৃতিকে ‘ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন’ হিসেবে দেখছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ৷
বিবৃতিদাতা রাষ্ট্রদূতরা ‘রাজনৈতিক দলের মত’ আচরণ করছেন মন্তব্য করে তাদের ভিয়েনা কনভেনশন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সচিবালয়ে বৃহস্পতিবার প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ প্রকাশিত 'সাংবাদিকের স্মৃতিভাষ্যে বঙ্গবন্ধু' সংকলন গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এসব কথা বলেন তথ্যমন্ত্রী।
আগের দিন এক যৌথ বিবৃতিতে হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডা, ডেনমার্ক, ইতালি, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড এবং ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
রাষ্ট্রদূতদের ওই বিবৃতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “রাজনৈতিক দলের মত রাষ্ট্রদূতদের জোটবদ্ধ হয়ে বিবৃতি দেওয়া, এটি রাষ্ট্রদূতদের আচরণবিধি যে ভিয়েনার কনভেনশন আছে সেটি সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। আমি বন্ধু রাষ্ট্রদের অনুরোধ জানাব ভিয়েনা কনভেনশন মেনে চলার জন্য।”
ভারত, পাকিস্তান বা আশেপাশে অন্য দেশে সহিংসতা হলে সেখানকার রাষ্টরদূতরা এভাবে বিবৃতি দেন না মন্তব্য করে হাছান মাহমুদ বলেন, “আমাদের দেশে কেন এভাবে বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে?
“এগুলো আসলে আমাদের কিছু রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের কেউ কেউ এগুলো দেওয়ার জন্য তাদেরকে প্ররোচিত করে। তাই রাষ্ট্রদূতদের দোষারোপ করার আগে, এ ব্যপারে প্রশ্ন তোলার আগে, আমি মনে করি যারা তাদেরকে প্ররোচনা করে তারা এক্ষেত্রে দায়ী। তবে অবশ্যই কূটনীতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রদূতদের আচরণ ভিয়েনা কনভেনশন মেনে চলা প্রয়োজন৷”
ঢাকা-১৭ আসনে ভোটের দিন সোমবার বিভিন্ন কেন্দ্রে কেন্দ্রে গিয়ে ভোটের পরিস্থিতি দেখছিলেন হিরো আলম। ভোটগ্রহণের শেষ দিকে বিকাল সোয়া ৩টার দিকে বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে তিনি হামলার শিকার হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোটকেন্দ্রের চৌহদ্দিতে স্কুলের মাঠে কয়েকজনের সঙ্গে সেলফি তোলেন হিরো আলম। তখন নৌকার ব্যাজধারী কয়েকজন এসে তাকে ঘিরে ধরেন এবং বলেন, ‘এটা টিকটক ভিডিও বানানোর জায়গা না’। এরপর হিরো আলমকে ধাওয়া শুরু করেন।
তখন কেন্দ্রটির দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যরা হিরো আলমকে ঘিরে ধরে স্কুলের গেইটের বাইরে দিয়ে আসেন। এরপর হিরো আলমকে সড়কে ফেলে বেধড়ক পেটানো হয়।
হিরো আলমকে মারধরের ঘটনায় মঙ্গলবার এক টুইটে উদ্বেগ প্রকাশ করেন ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি গোয়েন লুইস।
তিনি লেখেন, “ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল আলমের ওপর হামলার ঘটনায় জাতিসংঘের বাংলাদেশ কার্যালয় উদ্বিগ্ন। সহিংসতা ছাড়াই প্রত্যেকের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মৌলিক মানবাধিকার অবশ্যই নিশ্চিত ও সুরক্ষিত করতে হবে।”
এছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়েও হিরো আলমকে মারধরের প্রসঙ্গ উঠে আসে। সোমবার ওই ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, “গণতান্ত্রিক নির্বাচনে এ ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতার কোনো স্থান নেই।
“যে কোনো সহিংসতার ঘটনার পূর্ণ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে আমরা বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করছি।”
জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির টুইটকে জাতিসংঘের বিবৃতি হিসেবে প্রচার করাকে ‘অপসাংবাদিকতা’ আখ্যা দেন হাছান মাহমুদ। বুধবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশে পান থেকে চুন খসলেই এ রকম টুইট করা বা কিছু একটা বলা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অতি নাক গলানোর শামিল।”
বিএনপি সহিংসতা চায়
সাংবাদিকদের সঙ্গে তথ্যমন্ত্রীর আলাপে বিএনপির আন্দোলনের প্রসঙ্গও আসে। সরকার পদত্যাগ না করে করলে ‘আন্দোলন শান্তিপূর্ণ থাকবে না বলে’ বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের বিষয়ে তথ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন একজন সাংবাদিক।
হাছান মাহমুদ বলেন, “মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবের বক্তব্যে এটি স্পষ্ট, উনারা সহিংসতা করতে চায়, সহিংসতা শুরু করেছে। সহিংসতা শুরু করলে সরকার বসে থাকবে না।
“যারা সহিংসতা করবে, দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। তাদেরকে কঠোরহস্তে দমন করবে৷ একই সাথে যারা সহিংসতার সৃষ্টি করবে আমাদের দলও জনগণকে সাথে নিয়ে মাঠে থাকবে।”