রাষ্ট্রপতি নিয়োগের বৈধতা নিয়ে রিটের নেপথ্যে প্রভাবশালী মন্ত্রীর ইন্ধন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের নির্বাচন আটকাতে উচ্চ আদালতে দুটি রিট হয়েছিল। রিটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তার নিয়োগ কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ চাওয়া হয়। আবেদন দুটি সর্বোচ্চ আদালতে খারিজ হয়েছে। তবে গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এই রিটের নেপথ্যে একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর ইন্ধন ছিল। বিষয়টি নিয়ে পর্দার আড়ালে বেশ দৌড়ঝাঁপও হয়েছে। 

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় যাদের নাম আলোচনায় এসেছিল, তাদের মধ্যে ওই মন্ত্রীর নামও ছিল। মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ কিছু লোকজন তাকে রাষ্ট্রপতি করার স্বপ্ন দেখেছিলেন।  

ঘনিষ্ঠজন মন্ত্রীকে উদ্বুদ্ধও করেন; কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে রাষ্ট্রপতি না করায় নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটের পথ বেছে নেওয়া হয়। আর এ কাজে সমন্বয় করেন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত একজন নারী আইনজীবী। মন্ত্রীর ওই ঘনিষ্ঠ আইনজীবী রিটকারী আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বেশ দৌড়ঝাঁপ ও রিটকারীদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করেন ওই আইনজীবী; কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফলতা আসেনি। 

অবসরপ্রাপ্ত বিচারক ও দুর্নীতি দমন কমিশনের সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিনকে দেশের ২২তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১-এর ৭ ধারা অনুসারে তাকে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত ঘোষণা করে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করে ইসি। আগামী ২৩ এপ্রিল বর্তমান প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হলে মো. সাহাবুদ্দিন তার স্থলাভিষিক্ত হবেন। শপথ গ্রহণের পর থেকে পরবর্তী ৫ বছরের জন্য এ পদে তিনি দায়িত্ব পালন করবেন। ইসির প্রজ্ঞাপনের কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে ৭ মার্চ রিট করেন দুদকের আইনজীবী এম এ আজিজ খান।

রিটকারী এম এ আজিজ খান রিটের ব্যাপারে বলেন, রাষ্ট্রপতি বাছাই প্রক্রিয়া সঠিকভাবে হয়নি। যাচাই-বাছাই ঠিকমতো হলে মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত ঘোষণা করা হতো না। কারণ, মো. সাহাবুদ্দিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার ছিলেন।

দুদক আইন ২০০৪-এর ৯ ধারা অনুসারে দুদকের সাবেক কমিশনার লাভজনক কোনো পদে অধিষ্ঠিত হতে পারেন না। এ বিষয়ে যাচাই-বাছাই করা হয়নি। এ ছাড়া প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ‌‌‌‘মো. সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন, তাকে নিয়োগ করা হয়নি।’ তার এ বক্তব্য সঠিক নয়। এক্ষেত্রে নির্বাচন আর নিয়োগের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এ কারণে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেছি এবং নির্বাচন কমিশনের গেজেটের কার্যকারিতা স্থগিত চাওয়া হয়েছে।

বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ১২ মার্চ এম এ আজিজ খানের রিটের শুনানিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। বেঞ্চের বিচারপতি আহমেদ সোহেল এ বিষয়টি শুনানি করতে বিব্রত প্রকাশ করে বলেন, প্রায় পাঁচ বছর তিনি দুদকের আইনজীবী ছিলেন। তাই বিষয়টি সে সংশ্লিষ্ট হওয়ায় তিনি শুনতে বিব্রত বোধ করছেন। পরে রিট আবেদনটি প্রধান বিচারপতি বরাবর পাঠিয়ে দেন।

প্রধান বিচারপতি পরের দিনই রিট আবেদনটি বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনকে নির্বাচিত ঘোষণা করা-সংক্রান্ত ইসির প্রজ্ঞাপন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আবদুল মোমেন চৌধুরী, কে এম জাবির, মো. ওবায়দুল হক পীরজাদা, মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম, মুসতাক আহমেদ ও নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে ১২ মার্চ আরেকটি রিট করেন। পরের দিন তারাও রিট আবেদনটি বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চে জমা দেন। রিট আবেদন দুটি একসঙ্গে শুনানি করে গত ১৫ মার্চ হাইকোর্ট বেঞ্চ খারিজ করে আদেশ দেন। পরে রিটকারীরা আপিল বিভাগে যান। সেখানেও রিট আবেদন দুটি খারিজ হয়। গত ২১ মার্চ আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম আবেদন দুটি খারিজ করে আদেশ দেন। ফলে নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের দায়িত্ব গ্রহণের পথ পরিষ্কার হয়ে যায়। আগামী ২৪ এপ্রিল নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি শপথ নেবেন।

সূত্র : ১৩ এপ্রিল, দৈনিক কালবেলা


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি - dainik shiksha মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ - dainik shiksha বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য - dainik shiksha এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা - dainik shiksha অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর - dainik shiksha ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন - dainik shiksha বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী - dainik shiksha একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী আবাসিক হোটেলে শিক্ষার্থীদের অভিযান, হামলা - dainik shiksha আবাসিক হোটেলে শিক্ষার্থীদের অভিযান, হামলা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0055921077728271