রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় কাকন বিবির দাফন সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক |
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে মুক্তিযোদ্ধা কাকন বিবির (বীরপ্রতিক) রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২২ মার্চ) বিকেলে উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের জিরারগাঁও গ্রামের মাঠে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা শেষে পঞ্চায়েতি কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। 
 
জানাজায় সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাবিরুল ইসলাম, পুলিশ সুপার বরকত উল্লাহ খান, উপজেলা চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী বীর প্রতিক, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক শামীম আহমদ চৌধুরীসহ জনপ্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা,জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 
 
খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা কাকন বিবি ওরফে নুরজাহান বেগম বুধবার (২১ মার্চ) রাত ১১টায় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল (৯৮) বছর। শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে গত সোমবার (১৯ মার্চ) তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। বুধবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন তিনি। বৃহস্পতিবার তার মরদেহ জিরারগাঁও গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। মুক্তিযোদ্ধা কাকন বিবি ভারতের খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশের একটি গ্রামে খাসিয়া সম্প্রদায়ের এক পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার শহিদ আলীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এ সময় তার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় নুরজাহান বেগম।
 
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে ১৬ মার্চ তিনি এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। সখিনা নামের এ ৩ মাস বয়সী কন্যা সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে স্বামী শহিদ আলীর সঙ্গে ছাড়া-ছাড়ি হয়ে যায়। পরে ইপিআর সৈনিক মজিদ খানের সঙ্গে তার ২য় বিবাহ হয়। মজিদ খান তখন সিলেট ক্যাম্পে চাকুরি করতেন। ২ মাস সিলেটে স্বামীর সঙ্গে বসবাস করার পর সখিনাকে নিয়ে তিনি দোয়ারাবাজার উপজেলার সীমান্ত এলাকায় চলে গেলে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে ৬ জুন পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন কাকন বিবি। এ সময় হানাদার বাহিনীর বাংকারে তিনি নির্যাতনের শিকার হন। বাংকার থেকে ছাড়া পেয়ে প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহনের সিদ্ধান্ত নেন কাকন বিবি। জুলাই মাসে জিরারগাঁও গ্রামের এক লোকের কাছে নিজ সন্তানকে রেখে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে দেখা করে মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীকে নিয়ে সেক্টর কমান্ডার লেফট্যানেন্ট কর্নেল মীর শওকত আলীর সঙ্গে দেখা করেন তিনি। 
 
শওকত আলী তাকে মুক্তিযুদ্ধে গুপ্তচরের দায়িত্ব দেন। তিনি অসীম সাহসিকতার সঙ্গে গুপ্তচরের দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় দোয়ারার বাংলাবাজারে ২য় বারের মতো হানাদার বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন। ৭ দিন পাকিস্তানী বাহিনী ও রাজাকাররা তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে তাকে মৃত ভেবে রাস্তায় ফেলে রেখে দেয়। এ সময় তাকে উদ্ধার করে বালাট ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে আবারো বাংলাবাজারে দায়িত্বে ফিরে আসেন তিনি। এখানে মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর কাছে তিনি অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষিত হন । পরবর্তিতে গুপ্তচর ছাড়াও তিনি একাধিক সম্মূখ যুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে টেংরাটিলায় হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মূখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। কাকন বিবি ২০টি যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন। দেশ স্বাধীনের পর দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষিপুর ইউনিয়নের জিরারগাঁও গ্রামের একটি বাড়িতে কন্যা সন্তান সখিনাকে নিয়ে আশ্রয় নেন তিনি। দু’যুগ ছিলেন তিনি সবার চোখের অন্তরালে। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে কাকন বিবি দেশবাসীসহ সরকারের নজরে চলে আসেন।
 
তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে এক একর সরকারি ভূমি বন্দোবস্ত দেন। সিলেটের তৎকালিন মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ওই ভূমিতে একটি বসত ঘরও তৈরি করে দেন। ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাকন বিবিকে বীর প্রতীক উপাধিতে ভুষিত করার ঘোষণা দেন। ঘোষণাটি এ পর্যন্ত গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়নি।

পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0066120624542236