রায়পুরে ৩৪ বিদ্যালয়ের ভবনের নির্মাণকাজ বন্ধ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি |

প্রায় পাঁচ বছরে ২০ থেকে ২৫ ভাগ কাজ শেষে বন্ধ করে রাখা হয় লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ৮টিসহ চার উপজেলায় ৩৪টি স্কুল ভবনের নির্মাণকাজ। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে বিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হতে চললেও নির্মাণাধীন বিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে অনিশ্চয়তায়। সাইক্লোন শেল্টার কাম স্কুল ভবন নির্মাণের জন্য পুরান ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণকাজ করে ঠিকাদার।

জানা গেছে, বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তায় প্রায় ১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে মাল্টিপারপাস ডিজেস্টার শেল্টার প্রজেক্ট (এমডিএসপি) এর আওতায় রায়পুরে ৮টি এবং জেলায় ৩৪টি ভবন নির্মাণের কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠা নাভানা কনস্ট্রাকশন। দুই বছরে এ প্রকল্পে ৪ বছর পর কাজের অগ্রগতি দেখানো হয়েছে ৪৮ ভাগ। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ নির্মাণাধীন ভবনের কাজ হয়েছে মাত্র ২০ থেকে ২৫ ভাগ। কোনোটির কাজ গ্রেট বিমের পর পিলারেই শেষ। এতে বিপাকে পড়েছে, শিক্ষার্থী, কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকরা। সোমবার সরেজমিন দেখা যায়, রায়পুর ইউপির সায়েস্তানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এ বিদ্যালয়টিতে একটি ১তলা বিশিষ্ট ভবন ছিল। ছয় মাসের ভেতর তিনতলা নতুন ভবন তৈরি শেষ হবে এমন আশায় ভবনটি ভেঙে খালি করে দেয়া হয়েছিল। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে ভবন তৈরির কাজও শুরু হয়। কিন্তু এর মাঝে পাঁচ বছরের বেশি সময় পরেও সে ভবনের পিলার ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বিদ্যালয় খুলে দেওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা কোথায় বসে ক্লাস করবে, সেই চিন্তায় অস্থির রায়পুরে ৮টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা। শিক্ষকরা জানান, ভবন নেই। এ অবস্থায় ছাত্রছাত্রীরা কোথায় বসে ক্লাস করবে? বসতে না পারলে ছাত্রছাত্রী স্কুলে আসবে না। স্কুলের ভবন নির্মাণের এ অবস্থা নিয়ে তারা উপজেলা এবং জেলা শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার অবহিত করেছেন কিন্তু কোনো কাজই হচ্ছে না।

চুক্তি ছিল নির্মাণ শেষ করে ২৪ মাসের ভেতর পাকা ভবন হস্তান্তর করবে। প্রকল্পের সিরিয়ালের এ স্কুল ভবনগুলোর কাজ ২৮ ভাগ শেষ হয়েছে বলে তথ্য বোর্ডে দেখানো হয়েছে। কিন্তু রায়পুরের কেরোয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তিনতলা ছাদের ভবনের বিদ্যালয়টির প্রথম ছাদ ঢালাইয়ের জন্য রডের যে কাঠামো তৈরি করা হয়েছে তা গত দুই বছর যাবত বৃষ্টিতে ভিজে রোদে শুকাচ্ছে।

ছাদের জন্য গাঁথা সব রডই মরিচা ধরে পুরো লাল হয়ে গেছে। আবার প্রথম ছাদ থেকে দ্বিতীয় ছাদের পিলারের জন্য রাখা রডগুলো শক্ত মরিচায় আবৃত। বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ শিক্ষকরা জানান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ভবনটি নির্মাণ না করেই বিল উত্তোলনের পাঁয়তারা করছিল। ভবনটি নির্মাণকালীন সময়ে ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখার জন্য যে অস্থায়ী টিনশেড ঘর তৈরি করা হয়েছে তাও ঝুঁকিপূর্ণ। ৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে তিনতলা এ বিদ্যালয় ভবনটি ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ১ এপ্রিল নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয়। প্রায় পাঁচ বছর পার হতে চলছে অথচ একটি ছাদও নির্মাণ শেষ করতে পারেনি ঠিকাদার। প্রকল্পের ২৩ নম্বর সিরিয়ালের এ স্কুল ভবনটির কাজ ৪০ ভাগ শেষ হয়েছে বলে তথ্যবোর্ডে দেখানো হয়েছে।

নাভানা কনস্ট্রাকশনের প্রকৌশলী জানান, কাজের শুরু থেকেই রড, সিমেন্ট, বালু, পাথরের টানাটানি ছিল। এত সংকটে বড় প্রকল্পের কাজ করা যায় না। সে কারণে উক্ত প্রকল্প থেকে বহু প্রকৌশলী চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। বর্তমানে যারা রয়েছে তাদেরও অনেকের বেতন ভাতা নেই।

নাভানা প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী এএইচএম মাহবুবুর রহমান জানান, কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে কাজ হচ্ছে না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এ নিয়ে কোনো নির্দেশনা না থাকায় কাজ এগিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহ আলম পাটওয়ারী বলেন, নাভানার সঙ্গে লক্ষ্মীপুর জেলার প্রকল্পের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। তাদের এ পর্যন্ত ১২টি চিঠি দেওয়া হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে - dainik shiksha চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ - dainik shiksha সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন - dainik shiksha রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? - dainik shiksha বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে - dainik shiksha ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি - dainik shiksha প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056278705596924