রুখতে হবে বেকারত্বের বিস্ফোরণ

নাজমুল হোসেন |

বেকারত্ব একটি সামাজিক ব্যাধি অথবা সংকট। আগ্রহ ও সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও কোনো কর্মক্ষম ব্যক্তির কাজ খুঁজে না পাওয়ার পরিস্থিতিকে বলা হয় বেকারত্ব। দিনদিন বাংলাদেশে শিক্ষিত তরুণদের মধ্যে বেকারত্বের হার বাড়ছেই। মাত্র সাত বছরে এই হার দ্বিগুণ হয়ে গেছে। উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি। ধরন অনুসারে বেকারত্বকে বেশ কয়েকটি শ্রেণিবিভাগ করা হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হিসেবে স্থায়ী বেকারত্ব, অস্থায়ী বেকারত্ব, সাময়িক বেকারত্ব, মৌসুমী বেকারত্ব ইত্যাদির কথা বলা যায়।

যে-ধরনের বেকারত্বই হোক, এই পরিস্থিতি ব্যক্তি তো বটেই, পরিবার, দেশ, জাতির জন্য একটি ভয়াবহ সমস্যা। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের মতো বাংলাদেশেও এই সমস্যা প্রকটভাবেই বিদ্যমান। বাংলাদেশ একটি দরিদ্র দেশ, যদিও সাম্প্রতিককালে সেটি উন্নয়নশীল দেশের কাতারে অবস্থান নিয়েছে। কোনো দেশের শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে কাজে না লাগালে অর্জিত সেই উন্নয়নশীল নামক তকমার সার্থকতা ক্ষীণই থেকে যাবে। স্বাধীনতার পর থেকে গত দশকে দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানে উন্নয়ন সাধিত হয়েছে, বেশ কয়েকটি সূচকেও উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু বেকারত্ব দূরীকরণে তেমন অগ্রগতি না থাকায় সেটি উদ্বেগজনক হারে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সরকারি ও বেসরকারি উভয় সেক্টরেই এখনও যে পরিমাণ পদ খালি রয়েছে তা পূরণ করতে পারলে দ্রুতই বেকারত্ব সমস্যা মোটামুটি একটা সহনীয় পর্যায়ে চলে আসতে পারে। কারণ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী জানা যায় শুধুমাত্র সরকারি ক্ষেত্রেই বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তরে এখনও ৩,৩৬,৭৪৬টি পদ খালি রয়েছে। আর শিল্পায়নের কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে দিন দিন অসংখ্য মিল, ফ্যাক্টরি, ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠছে। এখানেও সৃষ্ট অসংখ্য পদের বিপরীতে অনেক দক্ষ লোকের দরকার। অথচ আমাদের দেশে নেই একটি গ্রহণযোগ্য নিয়োগবিধি।

বাংলাদেশের কর্মসংস্থানের বড় খাতগুলো যেমন- পোশাক, চামড়া, ওষুধশিল্প ইত্যাদি বিষয়েও শিক্ষার্থীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে শিক্ষাব্যবস্থা ভয়াবহ রকম পিছিয়ে রয়েছে। বেসরকারি খাতে বর্তমানে বিশেষজ্ঞ, কারিগরি ও প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন শিক্ষিতদের চাহিদা বেশি। যে কারণে প্রচলিত ও সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের বেসরকারি খাতে চাকরি পেতে বেগ পেতে হচ্ছে। আর অল্প কিছু কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও তা কতটা সমসাময়িক, সে প্রশ্ন তো আছেই। বেকারত্বের এই লাগামহীন ঘোড়াকে এখনই টেনে ধরতে না পারলে যেকোনো সময় বেকারত্বের বিস্ফোরণের ফলে মানবিক বিপর্যয় ঘটতে পারে। আর এতে করে জাতি চরম সমস্যার সম্মুখীন হবে। তবে বেকারত্ব সমস্যা সম্পূর্ণরূপে দূর করা কোনোমতেই সম্ভব নয়। অন্তত সহনীয় পর্যায়ে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে না কর্মসংস্থানের সুযোগ। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী ও কার্যকর পরিকল্পনা, শিক্ষাব্যবস্থাকে কর্মের উপযুক্ত করে ঢেলে সাজানো, নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, মূলধনের অভাব দূর করাসহ নিতে হবে নানাবিধ সমন্বিত উদ্যোগ।

লেখক: শিক্ষার্থী, লিডিং ইউনিভার্সিটি, সিলেট

 

সৌজন্যে: ইত্তেফাক


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025300979614258