রোহিঙ্গা ডাকাতরা দুই স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে ঢুকেছে ক্যাম্প অভ্যন্তরে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শীর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত আবদুল হাকিমের নেতৃত্বে সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা টেকনাফ শীলখালী থেকে দুই স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। ওই সময় ৬০ হাজার টাকাও লুট করেছে তারা। শনিবার রাত আড়াইটায় স্থানীয় হেডম্যান আবুল কালামের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটেছে। দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ হয়েছে। 

প্রতিবেদনে আরো জানা যায়, অপহরণের শিকার দুই কিশোরী টেকনাফ বাহারছড়া শামলাপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। এ ঘটনা নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তবে ছাত্রী অপহরণ কেন? ওই কিশোরী মেয়েদের তুলে নিয়ে যাওয়ার কারণ কি? ঘটনার পর পুলিশের একাধিক দল উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এলাকার শিক্ষিত যুব সমাজ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের এদেশে আশ্রয় দেয়া হয়েছে। তারা বর্তমানে নানা অপরাধ করে যাচ্ছে। হামলে পড়ছে গ্রামবাসীর ওপর। এমন কি পুলিশকে লক্ষ্য করে একাধিকবার গুলি ছোড়েছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। ২০১৭ সালে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার সময় আসবাবপত্র ফেলে আসলেও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা ভুল করেনি অস্ত্র এবং ইয়াবার পোটলা ফেলে আসতে। তারা ওইসব অস্ত্রের সাহায্যে আশ্রয় শিবিরে অস্ত্র চালানোর ট্রেনিংও দিয়েছে রোহিঙ্গা যুবকদের। সঙ্গে আনা ইয়াবার চালান বিক্রি করে কামাই করেছে লাখ লাখ টাকা। অনুপ্রবেশের সময় স্থানীয়দের মধ্যে অনেকে খাদ্য-পানি নিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। অনুপ্রবেশকারীদের বিপদের সময় সহায়তাকারীদের মধ্যে হ্নীলা যুবলীগ নেতা ওমর ফারুককে সম্প্রতি গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গারা। বর্তমানে স্থানীয় মা-বোনদের ইজ্জত নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে। দুই স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে ঢুকে পড়েছে ক্যাম্প অভ্যন্তরে। তাদের কোথায় রাখা হয়েছে, কি অবস্থায় আছে জানতে চেয়ে বিলাপ করছে স্বজনরা। অপরাধমূলক কর্মকান্ডে ও প্রত্যাবাসন না হতে পুরনো রোহিঙ্গা নেতারা ইন্ধন দিয়ে চলছে সন্ত্রাসী রোহিঙ্গাদের।

সচেতন মহল বলেন, ক্যাম্পে আশ্রিত সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের পাকড়াও করতে হলে কালবিলম্ব না করে ক্যাম্পের বাইরে বসতি স্থাপন করে ছদ্মবেশে থাকা পুরনো রোহিঙ্গা নেতাদের আইনের আওতায় আনা জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। কক্সবাজারসহ তিনটি জেলায় শত শত রোহিঙ্গা ইতিপূর্বে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে জাতীয় সনদও হাতিয়ে নিয়েছে। ১৯৭৮সাল থেকে এদেশে থেকে যাওয়া রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব বাতিল করে আশ্রয় শিবিরে পাঠানো দরকার। পুরনো ওই রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গী বলে জানা গেছে। অভিযোগ রয়েছে, চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত সরকার দলীয় একজন সংসদ সদস্যের পরিচালনাধীন একটি ফাউন্ডেশনের ব্যানারে কয়েকজন পুরনো রোহিঙ্গা নেতা আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অসহায়ত্বের দোহাই তুলে বিদেশ থেকে ত্রাণ এনে ভাগবাটোয়ারা করছে। ওই ত্রাণের একটি অংশ সশস্ত্র রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয় বলে জানা গেছে। এদেশের নাগরিকত্ব দাবিকারী পুরনো রোহিঙ্গারা কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে। তাদের রয়েছে চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজারে একাধিক ফ্ল্যাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

স্থানীয় ইউপি সদস্য হুমায়ুন কবির বলেন, শীর্ষ বার্মাইয়া ডাকাত আবদুল হাকিমের নেতৃত্বে টেকনাফ শীলখালীতে দুই স্কুলছাত্রী অপহরণ ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় মাঠপাড়ার বাসিন্দা হেডম্যান আবুল কালামের দুই মেয়েকে তুলে নিয়ে গেছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। এ খবর পুলিশকে জানালে রাতে শামলাপুর পুলিশ ফাঁড়ির আইসি আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও পাশের পাহাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে অপহৃতদের কোন খবর না পেয়ে ফিরে আসে পুলিশ। ডাকাত দলের গায়ে একটি বাহিনীর অবিকল পোশাক পরিহিত ছিল বলে জানিয়েছে ডাকাতকবলিত বাড়ির লোকজন।

সম্প্রতি টেকনাফের মোস্ট ওয়ান্টেড আবদুল হাকিম ডাকাতের স্ত্রী রুবি আক্তার ও ডাকাত হাকিমের ভাই কবির আহমদ পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। তবে ওইসময় পুলিশ জানিয়েছিল কে বা কারা তাদের গুলি করে হত্যা করে। পাহাড়ি এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ লাশ দুইটি উদ্ধার করে টেকনাফ থানা পুলিশ। তারা টেকনাফের পল্লানপাড়ার বাসিন্দা। কবির আহমদ মিয়ানমারের নাগরিক হলেও শীর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত আবদুল হাকিমের স্ত্রী রুবি আক্তার বাংলাদেশী নাগরিক ছিল। স্থানীয়রা জানান, কিছুদিন আগে টেকনাফ থানা পুলিশ হেডম্যান আবুর এলাকা থেকে আবদুল হাকিম ডাকাতের স্ত্রী ও ভাইকে গ্রেফতার করেছিল। পরে তারা পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়। এ ঘটনায় বনবিভাগের বনজায়গীরদার প্রধান (হেডম্যান) আবুল কালামের সহযোগিতা ছিল, এমন সন্দেহ থেকে এ ঘটনা বলে ধারণা এলাকাবাসীর।

উল্লেখ্য, শীর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত আবদুল হাকিম গত কয়েক বছর টেকনাফে মাদক কারবারিদের ইয়াবার চালান সীমান্ত থেকে নিরাপদে নিয়ে আসা কাজে সহযোগিতা দিত। তাদের নির্দেশে হত্যাসহ নানা প্রকার অপরাধ সংঘটিত করেছে। তার কাছে ভারি অস্ত্র ও ওয়াকিটকি রয়েছে। তাকে আটক করার জন্য স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কয়েকবার অভিযান পরিচালনা করেছিল। কিন্তু শীর্ষ আলোচিত এ রোহিঙ্গা ডাকাত এখনও অধরা রয়ে গেছে। শামলাপুর পলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, ঘটনার পর পুলিশের একটি দল পাহাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়েছে। অপহৃত দুই কিশোরীকে উদ্ধারকল্পে অভিযান অব্যাহত আছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.006519079208374