র্যাগিং ও মাদক বিক্রি এবং সেবনের আলোচিত স্থান হিসেবে পরিচিত বরিশাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি নতুন করে আলোচনায় এসেছে। শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) রাতে ইনস্টিটিউটের হোস্টেলে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে এক ছাত্রী আর অপমানে ওই ছাত্রীর আত্মহত্যা চেষ্টায় বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে পুরো বরিশাল শহর জুড়ে। আগে র্যাগিংয়ের অভিযোগ থাকলেও র্যাগিংয়ের পর আত্মহত্যা চেষ্টার ঘটনা প্রথম ঘটেছে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। এ নিয়ে বেশ উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এই ইনস্টিটিউটে মাদক সেবন ও ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে অনেক আগে থেকেই। বহিরাগতরা এখানে প্রচুর আড্ডা দেয় বলেও জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এখান থেকে মাদকসহ বেশ কয়েকজন আটকও করা হয়েছিল।
আইএইচটির নানা অনিয়ম ও জুনিয়রদের নির্যাতন নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট কেন দিয়েছে তা জানাতে গত শুক্রবার দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রীকে চাপ দেয় ফিজিওথেরাপি অনুষদের তৃতীয় বর্ষের কয়েকজন ছাত্রী। শিক্ষার্থীরা জানান, রাতেই দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীকে মহিলা হোস্টেলের ডাইনিংয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সবার সামনে গালাগাল এবং অপমান করা হয় তাকে। একপর্যায়ে জুনিয়রদের দিয়ে তাকে চর থাপ্পড় ও টানা ৫ ঘণ্টা ধরে নির্যাতন করা হয়। এর পরেই তিনি অপমানে এবং ক্ষোভে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। অবশ্য র্যাগিংয়ের শিকার হয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করা ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দিয়েছে তৃতীয় বর্ষের কয়েকজন ছাত্রী।
ইনস্টিটিউট সূত্র জানায়, যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তারা সবাই নিজেদের ছাত্রলীগ নেত্রী বলে দাবি করে হোস্টেলের মধ্যে নানা অপকর্ম করে থাকেন। এর আগে ছাত্রী হোস্টেলের কিছু ছাত্রী উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ছাত্রী হোস্টেল সুপার ল্যাবরেটরি অনুষদের এক প্রভাষককে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির মিথ্যা অপবাদ দেয়। অবশ্য ওই ঘটনার সাথে সাথেই ওই প্রভাষক পদত্যাগ করেন।
চলতি বছরের জুন মাসে ছাত্র হোস্টেলের তৃতীয় তলার ৩০৯ নং কক্ষ থেকে আইএইচটি’র ডেন্টাল অনুষদের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের সাবেক ছাত্র নাসিম খন্দকার, তার সহযোগী এবং বহিরাগত মাদকসেবী নাঈম, সবুজ ও ফরিদকে মাদকাসক্ত অবস্থায় আটক করেছিল ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। পরে এদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়। এছাড়াও চলতি বছরের ২২ জুন কলেজের পরীক্ষায় ফার্মেসি বিভাগের এক ছাত্রকে নকলের অভিযোগে ম্যাজিস্ট্রেট বহিষ্কার করেন। এ ছাত্রটি ইয়াবায় আসক্ত এবং ব্যবসা করে বলে পরিচিত। এর পরই সে শিক্ষকদের হুমকি দিয়েছিল। এক শিক্ষকের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে ওই ছাত্র ও তার তিন সহকারী। তাদের আটক করে পুলিশ। তখন কিছু ছাত্র ব্যাপক বিক্ষোভ করলে উপাধ্যক্ষ বাধ্য হয়ে পুলিশের কাছে ফোন করে তাদের ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। এ সময় আটকের জন্য ছাত্ররা উপাধ্যক্ষকেই দায়ী করেন। তখন থেকেই উপাধ্যক্ষ শুভঙ্কর বাড়ৈকে হেনস্থা করার জন্য ওই চক্র উপায় খুঁজছিল। এর পরিপেক্ষিতে উপাধ্যক্ষের মোটরসাইকেলে ১৭ আগস্ট ৪০ পিস ইয়াবা রেখে ডিবি পুলিশকে খবর দেয়া হলে হেডক্লার্ক মাইনুদ্দিন এবং উপাধ্যক্ষ শুভঙ্কর বাড়ৈকে আটক করে পুলিশ। বিষয়টি পরে পুলিশের সন্দেহ হলে তথ্যদাতাকেও ডিবি অফিসে আনা হয়। পরে উপাধ্যক্ষকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
সূত্র জানায়, উন্নয়ন খাতে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে থেকে চলছে এ ইনস্টিটিউটটি। ফলে কোনো পদ সৃষ্টি হয়নি। বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ডেপুটেশনে এনে কাজ চালানো হচ্ছে। তাই বেলা ২টার পর এ প্রতিষ্ঠানে কোনো শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকেন না। আর এ সুযোগে বহিরাগত মাদক ব্যবসায়ীরা এই কলেজে প্রবেশ করে কিছু নামধারী ছাত্র নেতার ছত্রছায়ায় বিভিন্ন রুম ব্যবহার করে নেশা করছে। পাশাপাশি ব্যবসাও চালাচ্ছে। তাছাড়া হোস্টেলগুলোতে হল সুপার থাকার কথা থাকলেও তারা সেখানে না থাকায় এ সমস্যা বড় আকার ধারণ করেছে।
র্যাগিংয়ের ঘটনার বিষয়টি জানতে ফোন করা হলে বরিশাল আইএইচটির অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, হোস্টেলে সুপারের থাকার ব্যবস্থা নেই। সন্ধ্যায় মোটরসাইকেলে বাহিরাগতরা হোস্টেলে ঢোকে। তারাই মাদক কারবার করছে বলে ধারণা। তিনি আরও বলেন, হোস্টেলে নিয়ম করা হয়েছে অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সন্ধ্যা ৬টা এবং অন্য সময় ৭টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হোস্টেলে প্রবেশ করতে হবে।