লক্ষ্মীপুরে ছাত্র হ*ত্যা*য় ৬ জনের যাবজ্জীবন

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি |

লক্ষ্মীপুরে স্কুলছাত্র হত্যা মামলায় ছয়জনের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে প্রত্যেকের ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় মামলার আসামি তাজুল ইসলাম তাজু ভূঁইয়াকে খালাস দিয়েছেন আদালত।

জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বলেন, রায়ের সময় দণ্ডপ্রাপ্ত ইলিয়াস আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অন্য পাঁচজন পলাতক।

ইলিয়াস চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের দেওপাড়া গ্রামের মৃত সিরাজ মিয়ার ছেলে। অন্যরা হলেন, সদর উপজেলার বশিকপুর গ্রামের মাসুদুর রহমান কালা মাসুদ, উত্তর জামিরতলী গ্রামের নুর মোহাম্মদ লিটন, পশ্চিম লতিফপুর গ্রামের সাদ্দাম, আনোয়ার হোসেন সাদ্দাম ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আমান উল্যাহপুর ইউনিয়নের গোবিন্দের খিল গ্রামের শাহরিয়ার রাশেদ।

খালাসপ্রাপ্ত তাজু ভূঁইয়া চন্দ্রগঞ্জের আমানী লক্ষ্মীপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে ও চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্যসচিব।

ছবি: সংগৃহীত

ভিকটিম শিমুল প্রতাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। শিমুলের বাবা আব্দুর রাজ্জাক ও মা শিরি আক্তার মারা যাওয়ার পর থেকে সে নানার বাড়িতে থাকতো।

এজাহার সূত্র জানায়, মামলার বাদী কাজী মামুনুর রশীদ বাবলুর ভাগিনা শিমুল। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ২১ এপ্রিল বাবলু অসুস্থ হয়ে লক্ষ্মীপুরে একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। বাড়িতে তার মা-ভাবি ও ভাগিনা ছিল। ওইদিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে অস্ত্রধারী মুখোশধারীরা চন্দ্রগঞ্জ দেওপাড়া গ্রামের বাড়িতে ঢুকে। তাদের ভয়ে তার মা ও ভাবি পালিয়ে যান। কিন্তু এতিম ভাগিনা শিমুল পালায়নি। তখন সন্ত্রাসীরা ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করলে শিমুল বাধা দেয়। এতে তারা তুলে নিয়ে দেওপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় গুলি করে তাকে হত্যা করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠায়। ঘটনার ১৪ দিন পর ৫ মে বাবলু বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় হত্যা মামলা করেন।

সবশেষ ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ৪ মার্চ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নোয়াখালী কার্যালয়ের পুলিশ পরিদর্শক মো. আনোয়ার উল ইসলাম আদালতে সাতজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। এর আগে চন্দ্রগঞ্জ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দুজন উপ-পরিদর্শক, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক পুলিশ পরিদর্শক ও ডিবির চারজন উপপরিদর্শক মামলাটি তদন্ত করেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত এ রায় দেন।

চার্জশিট সূত্রে জানা যায়, আসামিরা সন্ত্রাসী বাহিনী জিসান বাহিনীর সদস্য। আর বাদী বাবলু আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ জন্য ঘটনার দিন ভয়ভীতি দেখানোর জন্য মুখোশ পরে আসামিরা বাবলুর বাড়িতে সশস্ত্র হামলা চালায়। একপর্যায়ে তার ভাগিনা শিমুলকে তুলে নিয়ে গুলি করে। পরে মরদেহ ফেলে রেখে পালিয়ে যান তারা।

তদন্তকালে এ ঘটনার সঙ্গে জিসান বাহিনীর প্রধান জিসান জড়িত থাকার সত্যতা পাওয়া যায়। কিন্তু র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি জিসান কুমিল্লার দাউদকান্দিতে মারা যান। জিসান মারা যাওয়ায় তাকে আসামি করা হয়নি বলে চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়।

মামলার বাদী ও চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক কাজী মামুনুর রশিদ বাবলু বলেন, আমাকে হত্যা করতে গিয়ে আসামিরা শিমুলকে হত্যা করেছে। আমি আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট। তাজু আইনি লড়াইয়ে জিতেছে। আদালত তাকে খালাস দিয়েছে। এতে আমার কিছু বলার নেই।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আইনের মারপ্যাঁচে অনিশ্চিত ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন - dainik shiksha আইনের মারপ্যাঁচে অনিশ্চিত ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন ‘ঢাবির ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হচ্ছে শিগগিরই’ - dainik shiksha ‘ঢাবির ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হচ্ছে শিগগিরই’ হাই-টেক পার্কের নাম হবে জেলার নামে: উপদেষ্টা নাহিদ - dainik shiksha হাই-টেক পার্কের নাম হবে জেলার নামে: উপদেষ্টা নাহিদ দীপু মনির নামে আরেক মামলা, আসামি ৬০০ - dainik shiksha দীপু মনির নামে আরেক মামলা, আসামি ৬০০ স্কুল-কলেজে বিশৃঙ্খলা : কোথাও জবরদস্তি কোথাও পালিয়ে থাকা - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বিশৃঙ্খলা : কোথাও জবরদস্তি কোথাও পালিয়ে থাকা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054800510406494