লাল সবুজ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়ালে দেয়ালে

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি |

বাঙালি কবি ও শিশুসাহিত্যিক কবি সুনির্মল বসু তার কবিতায় বলেছেন 'বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র, নানানভাবে নতুন জিনিস শিখছি দিবারাত্র।' ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার ধানীখোলা উত্তর ভাটিপাড়াসহ ১০২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তাই জানান দিচ্ছে। স্কুলের প্রতিটি দেয়াল যেন শিক্ষার এক একটি রঙিন ক্যানভাস।

ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের শতভাগ স্কুলগামী করতে এবং মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিতে ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ নিয়েছেন ত্রিশাল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ। উপজেলার প্রতিটি স্কুলকে রাঙিয়ে তুলছেন লাল-সবুজের রঙে। শিশুদের নজর কাড়তে দেয়ালে আঁকা হয়েছে নানা ধরনের ছবি। জাতীয় পতাকা, বর্ণমালা, স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, ছয় ঋতুসহ নানা ধরনের চিত্রে বিদ্যালয়ের প্রতিটি দেয়াল যেন শিক্ষার এক একটি রঙিন ক্যানভাস। বাদ পড়েনি বিদ্যালয়গুলোতে সদ্য নির্মিত সীমানা প্রাচীরও। সেখানেও লেখা হয়েছে মনীষীদের বাণী, আঁকা হয়েছে ফুল, ফল, পাখি, মিনা-রাজুর ছবিসহ শিক্ষামূলক সব অঙ্কন। শিক্ষকরা বলছেন, এ কার্যক্রমের ফলে ক্লাসে শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার বাড়ছে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অভিভাবকদেরও মুগ্ধ করেছে রঙের ছোঁয়ায় রাঙানো বিদ্যালয়।

ইতিমধ্যে উপজেলার ধানীখোলা উজানদাসপাড়া, বাগান নুরজাহান, বাগান, রায়মনি, কাশিগঞ্জ, পোড়াবাড়ী, মঠবাড়ী, সাখুয়া, বাহাদুরপুর, সম্মুখ বইলর, কাঁঠাল, বীররারপুর উজানপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ একশ' দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে 'লাল-সবুজের ক্যানভাস' তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। আরও ৮০টি বিদ্যালয়ে 'লাল-সবুজের ক্যানভাস' তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। 'লাল-সবুজের ক্যানভাস' তৈরির কাজে আর্থিক জোগান সহায়তা করছেন বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য, উপজেলা শিক্ষা বিভাগ, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সমাজের বিত্তবানরা। বাহারি শিশুবান্ধব এমন আয়োজনে শুধু বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই নয়, উচ্ছ্বসিত অভিভাবকরাও। ভিন্নধর্মী এমন উদ্যোগের ফলে বিদ্যালয়মুখী হচ্ছে শিশুরা। অভিভাবকরাও নিয়মিত শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিচ্ছেন।

ধানীখোলা উত্তর ভাটিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাকসুদা খাতুন বলেন, শিক্ষা বিভাগের স্লিপের ৭ হাজার টাকাসহ স্থানীয় খালেদ বিন জালাল, ডা. আবু জাফর মো. সালাহ্‌ উদ্দিন, কাজী আজহার আলী, সহকারী শিক্ষকরা এবং আমি নিজেও দিয়েছি টাকা। এ ছাড়াও স্থানীয় বিত্তবানদের সহযোগিতায় লাল-সবুজের রঙে সেজেছে এই বিদ্যালয়।

আনোয়ার হোসেন, মমতাজ বেগমসহ কয়েকজন অভিভাবক জানান, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার এমন উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসার আগ্রহ দেখে আমরা চিন্তামুক্ত।

লাল-সবুজের ক্যানভাসের উদ্ভাবক ত্রিশাল উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ বলেন, দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় ত্রিশালের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর হার সবচেয়ে বেশি। তাই উপজেলার মোট ১৮২টি স্কুলে শুরু হয়েছে এমন কার্যক্রম, যা পরে দেশজুড়ে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চালু করা হবে বলে মনে করেন। তিনি আরও বলেন, ত্রিশালে অনেক শিল্পকারখানা গড়ে ওঠায় শিশুশ্রম বেশি। তাই বাড়ছে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। এমন বাস্তবতায় তাদের স্কুলমুখী করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষক, অভিভাবক ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় 'লাল-সবুজের ক্যানভাস' তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003903865814209