বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে আবাসন সংকটলাশের সাথে ৩৭ ছাত্রীর বসবাস!

নিজস্ব প্রতিবেদক |

জেবিন জাহান বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের ডেন্টাল বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্রী। আবাসিক ছাত্রীদের থাকার জায়গার সংকটের কারণে তিন বছর আগে কয়েক দিনের জন্য তাঁকে হাসপাতালের মরচুয়ারি ভবনে ‘সিট’ দেওয়া হয়! কয়েক দিনের জন্য সেখানে উঠলেও আবাসিক ছাত্রী হিসেবে জেবিনের ‘মেডিকেল জীবন’ লাশের সঙ্গেই কেটে যাচ্ছে মরচুয়ারি ভবনেই। শুধু জেবিন নয়, মরচুয়ারি ভবনে থাকা ৩৭ জন ছাত্রীর অবস্থাও এক। ভবনটির পাশে থাকা মর্গে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লাশের ময়নাতদন্ত করা হচ্ছে। আবাসন সংকটের কারণে ভয়কে জয় করে ছাত্রীরা দিনের পর দিন কাটিয়ে দিচ্ছে কথিত ছাত্রীনিবাসখ্যাত মরচুয়ারি ভবনে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ডেন্টাল অনুষদের ছাত্র-ছাত্রীরা নির্ধারিত ৫০টি আসনের অনুকূলে ভর্তি হতে শুরু করে। একই সাল থেকে এমবিবিএস কোর্সেও ছাত্রী ভর্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় দুই-এক বছর পার হতে না হতেই মেডিকেল কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের হোস্টেলে দেখা দেয় আবাসন সংকট। পরে ডেন্টাল অনুষদের ছাত্রীদের জন্য ক্যাম্পাসের বাইরে বাসা ভাড়া নেওয়া হয়। পাশাপাশি ডেন্টালের ছাত্ররাও ক্যাম্পাসের বাইরে উপাধ্যক্ষের বাসভবনটি হোস্টেল হিসেবে ব্যবহার করা শুরু করে।

কিছুুদিন পর ছাত্রদের স্থানান্তর করে ছাত্রাবাসে নিয়ে আসা হয়। এর পরের বছর অব্যবহৃত আধুনিক মরচুয়ারি ভবনটিতে কিছুু ছাত্রীদের উঠিয়ে দেওয়া হয়। তখন কিছুু ছাত্রী সেখানে না উঠে নিজ উদ্যোগে বাসা ভাড়া করে বাইরে চলে যায়। তবে অনেকেই বাধ্য হয়ে মরচুয়ারি ভবনেই থাকতে শুরু করে। অন্যদিকে চলতি বছর বাইরের ছাত্রীদের ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে এনে ছাত্রী হোস্টেলে জায়গা দেওয়া হলেও মরচুয়ারি ভবনের ছাত্রীরা সেখানেই থেকে যায়। এ ভবনে পানি ও আবাসন ব্যবস্থা ছাড়াও বিভিন্ন সমস্যা আছে।

মরচুয়ারি ভবনে থাকা ছাত্রীরা জানায়, এখানে থাকার বড় সমস্যা হচ্ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মরচুয়ারি ভবনের সীমানায় বহিরাগত লোকদের যেমন আনাগোনা থাকে তেমনি এটি কলেজ ও ছাত্রী হোস্টেল থেকে অনেকটা দূরে হওয়ায় বখাটেদের উৎপাত ও রাতের বেলা চুরি-ছিনতাই আতঙ্ক থাকছেই। ফলে নিরাপত্তা নিয়ে সব সময় উদ্বিগ্ন থাকতে হয়।

ছাত্রী হোস্টেলের সেক্রেটারি জেবিন জাহান বলেন, ‘শুরুর দিকে এই মরচুয়ারিতে থাকতে ভয় করত। কারণ পাশের মর্গ ভবনেই দিনের বেলা লাশ কাটাছেঁড়া করা হয়। সন্ধ্যার পর ভবনের সামনেও কেউ দাঁড়াতে চাইত না। তবে স্বাভাবিক হোস্টেলের মতো সুযোগ-সুবিধা না থাকলেও এখন অনেকটাই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে এখানে বসবাসকারী ছাত্রীরা।’

তবে ছাত্রীদের অভিযোগ অস্বীকার করে কলেজের অধ্যক্ষ ডা. ভাস্কর সাহা বলেন, ‘ছাত্রীদের হোস্টেলে ফিরে যেতে বলা হলেও তারা যেতে চায়নি। তবে এ কথা সত্য যে দিনে দিনে গোটা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে আবাসন সংকট তীব্র হচ্ছে। আর এ কারণেই কয়েক বছর আগে ছাত্রীদের লাশকাটা ঘরে নয় ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের দ্বিতল মরচুয়ারি ভবনে থাকতে বলা হয়। যেখানে আমাদের সরকারি স্টাফরা তাদের নিরাপত্তা ও সহযোগিতায় নিয়োজিত আছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘ডেন্টাল অনুষদের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আলাদা হোস্টেলের পাশাপাশি একটি ছেলেদের ও দুটি মেয়েদের হোস্টেল জরুরি প্রয়োজন। যা আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027170181274414